যাওয়া হয় না কোথাও
আবুল হাসান কবি যেতে চেয়েছিল অরণ্যে
পারেনি
এতো বছর এতো নদীর পর
একই জায়গায়
স্থবির
দাঁড়িয়ে আমরা
সামনে পানি
ভেতরে একই দৃশ্য
ঘৃণা
বিদ্বেষ
যাওয়া হয় না কোথাও
না অরণ্যে না লোকালয়ে
এতো কল্পনা
এতো আঁকিবুঁকি
আটকে গেল পথে।
যে বুঝে না দেয়াল ভাষা
যে পড়ে না দেয়াল গ্রাফিতি
যে বুঝে না ভাষা
কী করে বুঝবে কোথায় মানুষ
কোথায় সমস্যা
বিপ্লব কী বা কেন
হুজুগে প্রাণ দেওয়া বিপ্লব না
হুজুগে চাপা পড়ে
যে শনাক্ত করতে পারে
যে প্রবেশ করতে পারে ভেতরে
অভিজ্ঞ কৃষকের মতো গহিনে আঙুল চালিয়ে
যে উপড়ে ফেলতে ঘটনার শেকড়বাকড়
তার জন্যে গুনছে প্রহর
এভাবে ঠাঁই দাঁড়িয়ে
দিনের পর দিন
বছরের পর বছর
বুকে তার পথের নকশা।
যারা সংসার করছে, করতে দাও
যারা সংসার করছে, করতে দাও
যাদের কোনো দায় নেই
পেছনের দরজা খুলে কে এল কে গেল
কে কী খেয়ে গেল গোপন কৌটা খুলে
যার কোনো গরজ নেই
ভাবনা নেই
সংসার তার জন্যেই
যে দেখতে পায়
যে খোঁজ রাখে
চোখ কান খোলা
তার জানা দরকার
সংসার কোনো জড় পদার্থ নয়
ওটা একটা ছায়া
হাঁটলে হাঁটে দাঁড়ালে দাঁড়ায়
এভাবে জীবনের শেষ বিন্দু
যদিও সময়টা যন্ত্রের
যদিও সময়টা যন্ত্রের
তারপরও কথা থেকে যায়
কথা তার জন্যে
যে দাঁড়িয়ে পড়ে
যে দেখতে পায়
দেখতে পায় দৌড়ানির পেছনে একটা অস্থির বাউকুড়ানি
যে দেখতে পায়
মানুষ জানে না কে কোথায় যাচ্ছে
শেকড়কাটা খড়কুটোর মতো
জানে না খিড়কির ফাঁকে কেউ একজন ছিল
কেউ একজন ছিল পথের মুখে
লাঠিতে ভর করে
কিছু কথা তার জন্যে
যে ঘুমপাড়ানির মন্ত্রের ভেতর সজাগ
দেখতে পায় দিনের পোকারা কীভাবে খোলস পাল্টায়
অন্ধকার ঘনীভূত হলে কীভাবে গর্ত থেকে বের হয় আর হাত মিলিয়ে ফেলে
কিছু কথা তার জন্যে
যে বেড়ে উঠছে স্বাভাবিক নিয়মে, কলমবিহীন
নিজেকে মনে করে গাছপুত্র
গাছের ধর্মই শিক্ষা
যে ভাবে কীভাবে ছড়িয়ে দেওয়া যায়
কীভাবে বুঝানো যায়
শেকড়ের রস কত পুষ্টিকর।
জানে না কোথায় পথ
জানে না কোথায় পথ
কোথায় শুরু বা শেষ
করে পথের ফেরি
হাতে একটা নকশা
যার পরতে পরতে নৃশংসতা আর গোঙানি
কচি মুখ
পেট ভর্তি হিংসা বিদ্বেষ
চোখ ভর্তি লোভ
নীতির ঘর ফাঁকা
গায় সমবন্টনের গান
কাহিনি শোনায় স্বপ্নদেশের
অন্তর-কান সিল মারা
চোখে ছানি
আবার থাকে আসক্তির ঘোর
বোধশক্তি অকেজো, বুঝতে পারে না
বুঝতে পারে না
কেন সরে যায় সকলে
কেন নিজেরা এত ক্ষুদ্র
কেন আড়ালে টিপ্পনী কাটে নিজেদের লোক।
কেন জানি আগেই বুঝতে পেরেছিলাম
কেন জানি আগেই বুঝতে পেরেছিলাম
এইসব ব্যাকডেটেড দ্বারা হবে না
সারাজীবনের পাপ খোদাই করা
বেঁকে গেছে শিরদাঁড়া
প্রাপ্তির সারিতে দাঁড়িয়ে
তারা হারায়নি কিছুই
কী করে বুঝবে হারানোর মানে
কী করে বুঝবে শেকল ভাঙার আনন্দ
কী করে জানবে কোথায় বড়
কী করে জানবে
বড় তো সে
যে সামাজিক মাপকাঠির পাছায় লাথি মারে
মিছামিছি ভদ্রতার মুখে ঠেসে দেয় আগুন
কামনা করে সকলেই উতরে যাক
এমনকি লজেন্স মোড়ানো
ক্ষুদ্র কাগজটাও
বেদিতে বসার তারই অধিকার
মন যার মনের মতো।