ভুলব না তোমায়
আমি ভুলব না তোমায়,
একদিন ওই নীলিমায় হারিয়ে যাবে
এক প্রবীণ দৃষ্টিশক্তির সীমারেখা;
সমুদ্রের ফেনার মতো ঝাপসা হবে স্মৃতি;
তবুও আমি ভুলব না তোমায় !
যদি পৃথিবীর ভূপৃষ্ঠ হতে সর্বাপেক্ষা দূরত্বে গিয়ে
তুমি তৈরি করো একটি শক্ত-পোক্ত আবাসস্থল,
যদি উত্তর মেরুতে গিয়ে থাকো লুকিয়ে,
অথবা অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশে-যেখানে
পৃথিবীর আহ্নিকগতির অক্ষ ভূপৃষ্ঠকে
ছেদ করেছে-সেখানে থাকো তুমি ঠায় দাঁড়িয়ে…
তবুও আমি ভুলব না তোমায়!
যদি ভূপৃষ্ঠ হতে তুমি হারিয়ে যাও,
আমি ফুলের রেণুতে তাকিয়ে দেখবো তোমায়;
তোমায় খুঁজব আমি-
স্বর্গের নৃত্যরত রমণীর মৃদু ছন্দে,
আমি তোমায় খুঁজবো তরঙ্গায়িত সমুদ্রে,
আমি খুঁজবো তোমায়-
আগ্রহ আর উত্তেজনাকে আকণ্ঠ ধারণ করে!
তোমায় খুঁজতে রোজ সূর্যোদয়ের সময়কালে
আমি তাকিয়ে থাকব শিশিরসিক্ত ঘাসে,
গোধূলির সিঁদুর রাঙা মেঘ মঞ্জরির গায়ে,
আমি তাকিয়ে থাকব নায়াগ্রা জলপ্রপাতে,
মৌমাছির ঠোঁটে,শ্বেত-শুভ্র পদ্মফুলে,
লকলকে কলমিলতাকে ধারণ করা বিলের জলে !
তোমায় দেখতে
আমি ভিসুভিয়াসের সক্রিয়
আগ্নেয়গিরির কিনারের পম্পেই এবং
হারকুলেনিয়াম শহরের লাভা এবং ছাইয়ের
নিচে চাপা পড়ে থাকা মুখগুলো
অনন্তকালব্যাপী একটি একটি করে খুঁজব!
আমি ভুলব না তোমায়,
একদিন নীলিমায় হারিয়ে যাবে এ প্রবীণ দৃষ্টি,
সমুদ্রের ফেনার মতো ঝাপসা হবে স্মৃতি,
দালানকোঠা, সুউচ্চ পর্বতের উপরের নগরগুলো
তলিয়ে যাবে সুগভীর সমুদ্রগর্ভে;
তবুও আমি কোনোদিন ভুলব না তোমায়!
আমি তোমায় খুঁজব মহাজাগতিক রশ্মিতে,
খুঁজতে খুঁজতে একদিন যাব- সেখানে;
যেখানে পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধের ঘূর্ণনঅক্ষ
পৃষ্ঠতলের সাথে মিলিত হয়েছে;
সেখানে আয়েশ করে তোমার পাশে বসে ভাবব
তোমায় কোনো প্রকারে ভোলা যায় কিনা!
আমার প্রতীক্ষা
কবিতার জন্য রোজ সঞ্চয় করি অর্থ,
কলম কিনি, বাড়িয়ে নেই চশমার সক্ষমতা;
কাগজ কিনতে গিয়ে-
বৃক্ষনিধনের কথা মনে হয়ে ফিরে আসি!
কবিতা লিখতে আমি চেয়ে থাকি-
বহমান স্রোতের ফেনায়িত তরঙ্গমালার দিকে,
তরুণীর রঙিন স্বপ্নবোনা চোখের পাতায়,আমি
সাগ্রহে শুনি দেবদারুর ঝিরিঝিরি পাতার গান!
দেখি মৌমাছির নিরর্থক নিরলস-
সঞ্চয়ের অভাবনীয় প্রবৃত্তি, দেখি বনের লিকলিকে বাঁশগুলো অবুঝের মতো আকাশ ছোঁয়;
গোলাপের পাপড়িগুলো একে একে খসে পড়ে!
মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে-
প্রাণীকুল অসুরের শক্তি ধার করে-
জীবনের স্থিতিস্থাপককে করে ক্রমবর্ধমান;
পৃথিবীর মানুষগুলো নৃশস্যভাবে হারায় মনুষ্যত্ব!
আমি কবিতা লেখার জন্য-
কিছু কাগজ কিনতে গিয়ে থমকে দাঁড়াই,
মানচিত্রে আজ রক্তহরফের হাজারো আঁকাবুকি,
দেখি নেড়ি কুকুরের মতো মানুষের ব্যাপক আস্ফালন!
আমি কবিতার জন্য দেখি নক্ষত্র, দেখি-
ভেসে থাকা কার্পাস তুলোর মতো মেঘ,
কখনো কখনো চোখ বন্ধ করি দেখি-
মেঘে ঢাকা গর্জনশীল চল্লিশার গুমোট আকাশ!
দেখতে দেখতে পা হয় পাথর, হস্তযুগল নিথর;
দেখি-আকাশ ভেঙে নামে রক্তবৃষ্টি,
এভাবেই একদিন সমাপ্ত হয় আমার প্রতীক্ষা,
আমার কোনোদিনই আর কবিতা লেখা হয় না…