স্বপ্ন আমার
আবার যখন আসবে তুমি
রূপ বাহারি গাঁয়,
রংধনুর রং আলতা এনে
মাখিয়ে দেব পায়।
আসবে তুমি পরির বেশে
রূপের ঝলক নিয়ে,
ফুড়ুৎ করে ফড়িং ধরে
সুর ওঠাবে টিয়ে।
রঙ বাহারি গাছের মতো
ঝলমলে রূপ সাঁঝ,
উদাস হয়ে দেখব আমি
তোমার ইলিশ নাচ।
ভূঁইকুমড়ায় মাতম নিয়ে
বাবুই পাখির দল,
তিত-বেগুনে দোল হাওয়াতে
ছুটবে কিশোর দল।
ইচিং-বিচিং গোল্লাছুটে
কিশোর দলের খেলা,
স্বপ্ন আমার সঙ্গী হবে
ঝলমলে রূপ বেলা।
স্বপ্ন আঁকা মামার দেশ
শিংড়া বিলের ঘাট পেরিয়ে মনোহরপুর গাঁয়
আয়রে নব কচিকাঁচা, আয়রে তোরা আয়,
সেইখানেতে মামার দেশ বানা খালার খোয়া
নানার মিষ্টি কথা, আর মামির হাতের মোয়া।
শুঁটকিপোড়া সকাল দুপুর জম্পেশ সেই ভোজ
চাঁদ তারাদের গল্প বলে ঘুম পাড়াতো রোজ,
সেই তো আমার নানি, আমার খেলার সাথী
ধান সিদ্ধ ডিম খাওয়া, কিচ্ছা, গানে মাতি।
মেজো নানি ছোটখাটো মায়া ভরা মুখ
শান বাঁধানো পুকুর আর বাড়ি জুড়ে সুখ,
সুখ বাঁধানো মন ছোঁয়া ঘর সাজানো রঙে
জারি, সারি হতো কাঁচা, বেত ঘেরা টঙে।
বৃষ্টি এলে মামার সাথে আম কুড়ানোর ধুম
উদাস দুপুর শান্ত বেলা খুশিতে রুমঝুম,
ছাগল চড়া খালার সাথে নিত্যদিনের কাজ
নানার সাথে হাটে যাওয়া তাড়াতাড়ি সাজ।
কোথায় যেন হারিয়ে গেলাম
মাঠের পরে ঘাট পেরিয়ে বন ওকড়ার দেশে
ছুটছি ঘোড়ার লাগাম টেনে বাউন্ডুলের বেশে,
ভুঁই কুমড়ার দেশে এসে ধরল জোনাক খালা
ঘুম ভাঙল গুবরেপোকার, জীবন নিয়ে পালা।
ধনচে ফুলের মেলায় এসে ভুলে গেলাম সব
অমনি শার্টের কলার ধরে তুলল কলরব,
পাগল ছাগল ট্যাগে আমায় দিচ্ছে ওরা গালি
দুমদুম দুম তালে ঘুসি, কোথাকার তুই আলী।
আটপৌরে কপাল আমার হয়ে গেলাম ফুশ
বাংলা ট্রিটমেন্ট করল ঘুঘু ফিরে পেলাম হুঁশ,
একটু পরেই ছেড়ে দিল মাথায় ঢেলে জল
ঘোড়ার লাগাম টানি তবু গায়ে অনেক বল।
যাবই চলে সবুজ বন ঘোড়ায় দিল আড়ি
দৌড়ে এসে ডাহুক দল সজোরে দেয় ঝাড়ি,
ডাহুক দেশে সাহস কত? ফুটছে মুখে খই
ধোলাই দিয়ে বিদায় দিল খাইয়ে চপ দই।
কষ্টে হেসে ঘোড়ার মাথায় যেই দিয়েছি চাপ
স্বপ্ন আঁকা বুঝেই ঘোড়া উঠল মেরে ঝাঁপ,
শুধাও এবার জীবন আমার কূলকিনারা নাই
বখতিয়ারের ঘোড়ায় চড়ে স্বপ্ন বুনতে যাই।
কোথায় যেন হারিয়ে গেলাম বুক পাঁজরে ঢেউ
চঞ্চলা চোখ তাকিয়ে আছি বুঝল নাতো কেউ।
খ্যাঁকশিয়ালের মেলা
সন্ধা নেমে আসার পরে ঝিঁঝি পোকার ডাক
মেঠোপথের বাঁকে দেখি খ্যাঁকশিয়ালের হাঁক,
হুক্কা হুয়া ডাকে নড়ে কানাই বাবুর ঘর
রাত্রি জেগে থাকার ফলে এসেছে তার জ্বর।
কী করে আর ভেবে চিন্তে কান্নাকাটির বেলা
রাত্রি এখন উদাস দুপুর খ্যাঁকশিয়ালের মেলা,
কানাই বাবু চিৎপটাং আজ বিছানা নিল আড়ি
ঘুমের রাজা কাতুর এসে সজোরে দেয় ঝাড়ি।
কারা যেন দেখে গেল কানাই বাবুর গাঁও
গিন্নি এসে তর্কে জড়ায় বসে বসে খাও,
ঘুমের বাড়ি খুঁজতে গিয়ে ঘুমই নিরুদ্দেশ
খ্যাঁকশিয়ালের মেলায় পড়ে রাত্রিযাপন শেষ।
স্বাধীনতা মানে
স্বাধীনতা মানে ঐক্য-শান্তি
এ জীবনটাকে গড়া,
সুখে, দুখে থাকা চারপাশ-জুড়ে
সঙ্গী সাথীতে ভরা।
স্বাধীনতা মানে হাসি, হাসি মুখে
ফুলের বাগানে যাওয়া,
ফুলের মিষ্টি ঘ্রাণ নিতে নিজে
জীবনের গান গাওয়া।
স্বাধীনতা মানে মুক্তির খোঁজে
ছোটা সবুজের টানে,
স্বাধীনতা মানে লাল ও সবুজ
সুশীল সমাজ জানে?
স্বাধীনতা মানে অনেক হারিয়ে
শান্তির খোঁজ পাওয়া,
স্বাধীনতা মানে যুদ্ধের শেষে
ফুরফুরে এক হাওয়া।
আমার ছোট্ট গাঁও
সবুজ শ্যামল দৃশ্য ভরা আমার ছোট্ট গাঁও
এসে দেখো কী অপরূপ, সুবাসটুকু নাও।
গাঁয়ের পথে দাঁড়িয়ে আছে মেঘ সুন্দর গাছ
দেখতে পাবে বিকেল হলে উঠানজুড়ে নাচ।
ক্ষেতের সোনার ফসল, নদীর ইলিশ ছড়ায় রূপ
বৃষ্টি হলে পুকুর পাড়ে দস্যি ছেলের ডুব।
বর্ষাতে ব্যাঙ খেলা করে নতুন পানির তলে
আসবে সবাই কাজ শেষে তা দেখতে দলে দলে।
পুরান দীঘির নতুন পানি সারি বাঁধা পুঁটি
বায়না ধরে ছোট্টরা সব আজ আমাদের ছুটি।
দেখলে তুমি খুশি হবে আমার ছোট্ট গাঁও
এসো আমার মায়া ভরা গ্রাম দেখে যাও।
তুমি আমার
তুমি আমার রক্তে লেখা লাল সবুজের দেশ
কত দারুণ তুমি, তোমার রূপের তো নেই শেষ,
তোমার তরে শান্তি যে পাই, পাই অমলিন সুখ
ঠেকাই মাথা সারে আমার মনের সকল দুখ।
তোমার রূপে মুগ্ধ আমি মিলায় দুটি আঁখি
লাল সবুজে আনাগোনা করে কত পাখি,
তুমি আমার সোনা, হিরা, মুক্তার চেয়ে দামি
তুমি আমার ভালোবাসা জানে ভবের স্বামী।
তুমি আমার সাত রাজার ধন তুমি আমার নাম
তোমার মাটি, আমার ঘাঁটি সবার চেয়ে দাম।
মা যে আমার সবার সেরা
মায়ের আদর সুখের পরশ আমার ছেলেখেলা
মায়ের কোলে মাথা গুঁজে সাজাই ফুলের মেলা,
দুখের মাঝে সুখের কথা বলেন সদা মনে
চমকে উঠি মা ছাড়া তাই কষ্ট ক্ষণে, ক্ষণে।
ছুটি পেলে গাঁয়ের বাড়ি নাড়ির টানে যাই
মাকে দেখে কষ্ট ভুলে শান্তি খুঁজে পাই,
আমার মা যে সবার সেরা ফুলের যত হাসি
দুখ লুকিয়ে সান্ত্বনাতে কণ্ঠে বাজে বাঁশি।
রান্না শেষে না খেয়ে তাই করবে ডাকাডাকি
সোনা জাদু আয়রে খেতে নিজের বেলায় ফাঁকি,
বায়না তখন আমার সদা দাও না তুলে মুখে
মিষ্টি হেসে হাত বাড়িয়ে টেনে নিবেন বুকে।
মা’যে আমার সবার সেরা সবচেয়ে খুব দামি
দুখের মাঝে আলোর বাতি জানে অন্তর্যামী।
দিন চলে যায়
দিন চলে যায় বছর আসে, আসে নতুন দিন
সকল কিছুই ক্ষয় হয়ে যায় বাড়তে থাকে ঋণ।
হুক্কা হুয়া যায় না শোনা আগের দিনের মতো
দিন বদলের অগ্নি মাশুল দিচ্ছি অবিরত।
মনে পড়ে আগের দিনে জোসনা রাতের বেলা
দল বেঁধে সব দিন কাটাতাম খেলে নানান খেলা।
গোল্লাছুট আর কানামাছি, হাডুডু, কিতকিত
টঙে বসে কাটত সময় গেয়ে ভাটির গীত।
বানের জলে তুমুল সাঁতার কলাগাছের ভেলা
হৈ-হুল্লোড় হাসিখুশি কাটত সারা বেলা।
বাড়ি, বাড়ি পিঠার দাওয়াত আনন্দ হৈচৈ
স্বপ্নমাখা দিনগুলি হায় পালিয়ে গেল কই!
মোবাইলে মাথা নিচু কুঁজো পিঠের হাড়
কেমন করে উঁচু মাথার গড়বে জাতি আর!
ওয়ারী, ঢাকা থেকে