খাবারের স্বাদ বাড়াতে কিংবা গরমে এক গ্লাস ঠান্ডা পানীয় তৈরি করতে লেবুর জুড়ি নেই। ছোট্ট এই ফলটি শুধু স্বাদেই অনন্য নয়, পুষ্টিতেও পরিপূর্ণ। লেবুতে আছে প্রচুর ভিটামিন সি, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়, অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে এবং ত্বককে তারুণ্যদীপ্ত রাখে। তবে প্রশ্ন হচ্ছে—কীভাবে লেবু খেলে এই উপকারগুলো সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায়? চলুন, জেনে নিই লেবু খাওয়ার কার্যকর কিছু উপায়।
১. খোসাসহ লেবু খান
লেবুর সবচেয়ে পুষ্টিকর অংশ হলো এর খোসা। লেবুর খোসায় রসের চেয়েও বেশি ভিটামিন সি থাকে। যদিও খোসা খেতে কিছুটা তিতা লাগতে পারে, তবুও পুষ্টিগুণের জন্য এটি খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা যেতে পারে।
ভাতের সঙ্গে সামান্য লেবুর খোসা চিবিয়ে খেতে পারেন।
মুড়ি মাখা, ফুচকা বা চটপটির সঙ্গে কুচি করে মেশাতে পারেন লেবুর খোসা।
তবে কারও কারও জন্য লেবুর খোসা হজমে সমস্যা করতে পারে। এমন হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শে চলা উচিত।
২. আয়রনসমৃদ্ধ উদ্ভিজ্জ খাবারের সঙ্গে
শাকসবজি, ডাল বা ওটসের মতো খাবারে আয়রন থাকলেও তা শরীরে সহজে শোষিত হয় না। এই আয়রনকে ভালোভাবে শোষিত করতে ভিটামিন সি দরকার, যা লেবু সরবরাহ করে।
কচুশাক, পালংশাক, মসুর ডাল বা ব্রকলি খাওয়ার সময় লেবুর রস বা খোসা খেয়ে নিন।
এভাবে লেবু শরীরে আয়রনের শোষণ বাড়িয়ে রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধে সাহায্য করে।
৩. ডিটক্স ওয়াটার তৈরি করুন
সকালে এক গ্লাস লেবুপানি শুধু রিফ্রেশিংই নয়, বরং ডিটক্স করার কাজেও দারুণ।
১ গ্লাস পানিতে (২০০–২৫০ মি.লি.) এক টুকরা লেবু (খোসাসহ) ভিজিয়ে রাখুন অন্তত দুই ঘণ্টা।
চাইলে এতে পুদিনা পাতা, গোলমরিচ, সামান্য লবণ ও লেবুর খোসার কুচি যোগ করতে পারেন।
এই ডিটক্স ওয়াটার একবারে পান করা উচিত। তবে চিনি, মধু বা কৃত্রিম মিষ্টি না যোগ করাই ভালো। খুব বেশি খটখটে লেবুর রস না খেয়ে, পানিতে যথাযথভাবে মিশিয়ে খাওয়াই শ্রেয়।浓
৪. উত্তাপ থেকে দূরে রাখুন
লেবুর ভিটামিন সি তাপের সংস্পর্শে এসে নষ্ট হয়ে যায়। তাই রান্নার সময় বা গরম পানীয়তে যোগ করা লেবু থেকে আপনি পুরোপুরি উপকার পাবেন না।
চুলায় রান্না করা খাবারে লেবু যোগ করলে সেটি শুধু স্বাদ বাড়ায়, পুষ্টি নয়।
খুব গরম চা বা পানীয়তে লেবু না মেশানোই ভালো।
শীতল ও কাঁচা অবস্থায় লেবু গ্রহণ করলে তবেই ভিটামিন সি পাবেন পুরোপুরি।
সতর্কতা
লেবুর স্বাদ বাড়াতে অনেকে অতিরিক্ত চিনি ব্যবহার করেন, যা স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হতে পারে। তাই চিনি না দিয়ে বিকল্প স্বাদে (যেমন—লবণ বা পুদিনা পাতা) লেবুপানীয় উপভোগ করুন।
অতিরিক্ত লেবু খেলে কারও কারও এসিডিটির সমস্যা হতে পারে। পরিমাণমতো খাওয়াই নিরাপদ।
লেবু ছোট ফল হলেও এর উপকারিতা অনেক বড়। ভিটামিন সি, অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট ও শরীরের আয়রন শোষণে সহায়তা করার মতো গুণাবলি একে প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় রাখার মতোই করে তোলে। তবে খাওয়ার ধরন এবং পরিমাণের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। তাই সঠিক উপায়ে লেবু খেয়ে উপকার পান পুরোপুরি।