বাংলাদেশে সারা বছর পাওয়া যায় এমন একটি সাধারণ ফল হলো পেয়ারা। দামে সস্তা ও সহজলভ্য হলেও এর পুষ্টিগুণ অন্য অনেক দেশীয় ও আমদানিকৃত ফলের তুলনায় বহুগুণ বেশি। বিশেষত ভিটামিন সি–এর সমৃদ্ধ উৎস হিসেবে পেয়ারা স্বীকৃত, যা আমলকী ছাড়া অন্য কোনো ফলে এত বেশি পরিমাণে পাওয়া যায় না। এ কারণে পেয়ারাকে প্রকৃত অর্থেই “পুষ্টির ভাণ্ডার” বলা যায়।
পুষ্টিগুণের বিশ্লেষণ
একটি পেয়ারা চারটি কমলালেবুর সমান ভিটামিন সি সরবরাহ করতে সক্ষম। প্রতি ১০০ গ্রাম পেয়ারায় গড়ে ৭৬ কিলোক্যালরি শক্তি, ১.৪ গ্রাম প্রোটিন, ১.১ গ্রাম স্নেহজাতীয় পদার্থ এবং ১৫.২ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট বিদ্যমান। এতে ভিটামিন এ, বি–কমপ্লেক্স (বি১ ও বি২), ভিটামিন কে, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ফসফরাস, আয়রনসহ বিভিন্ন খনিজ উপাদান রয়েছে। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, একটি মাঝারি আকারের পেয়ারায় গড়ে ২১১ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি থাকে, যা দাঁত, মাড়ি এবং মুখগহ্বর সুস্থ রাখতে কার্যকর ভূমিকা রাখে।
স্বাস্থ্য উপকারিতা
ডায়াবেটিস প্রতিরোধে
পেয়ারা ও পেয়ারাপাতা রক্তে গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে বিশেষ কার্যকর। এর উপাদান ডায়াবেটিস মেলিটাস প্রতিরোধ ও চিকিৎসায় সহায়ক হিসেবে প্রমাণিত।
রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি
ভিটামিন সি ও অ্যান্টি–অক্সিডেন্টসমৃদ্ধ হওয়ায় পেয়ারা শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং ক্ষতস্থান দ্রুত শুকাতে সাহায্য করে।
ক্যানসার প্রতিরোধে
পেয়ারায় উপস্থিত অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট, বিশেষত লাইকোপেন, ক্যানসার কোষের বৃদ্ধি দমন করতে পারে। প্রোস্টেট ও স্তন ক্যানসার প্রতিরোধে এই ফল বিশেষভাবে উপকারী।
দৃষ্টিশক্তি উন্নতকরণে
কাঁচা পেয়ারা ভিটামিন এ–এর উৎকৃষ্ট উৎস। এটি কর্নিয়ার সুস্থতা বজায় রাখে এবং রাতকানা রোগ প্রতিরোধে সহায়ক।
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে
পেয়ারার পটাশিয়াম উপাদান রক্তচাপ কমায়। গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত পেয়ারা সেবনে রক্তের লিপিড হ্রাস পায় এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমে।
শ্বাসযন্ত্রের সমস্যায়
ভিটামিন সি ও আয়রন থাকার ফলে পেয়ারা সর্দি–কাশি, ব্রঙ্কাইটিসসহ ঠান্ডাজনিত সমস্যার প্রতিরোধে কার্যকর।
মানসিক চাপ হ্রাসে
পেয়ারার খনিজ উপাদান স্নায়ুতন্ত্র ও পেশির কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে, ফলে স্ট্রেস কমে এবং শক্তি বাড়ে।
পরিপাকতন্ত্রের জন্য
পেয়ারা পেটের বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ প্রতিরোধ করে। এটি কোষ্ঠকাঠিন্য, আমাশয়সহ নানা পেটের সমস্যায় কার্যকর। পাশাপাশি ওজন কমাতেও সহায়ক।
ত্বক ও চুলের যত্নে
এতে থাকা পানি ও অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখে, রুক্ষতা কমায়, শীতে পা ফাটা প্রতিরোধ করে এবং চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।
পিরিয়ডের ব্যথা উপশমে
পেয়ারার পাতা বা রস সেবনে ঋতুকালীন ব্যথা কমে, যা অনেক নারীর জন্য প্রাকৃতিক প্রতিকার হিসেবে কার্যকর।