জীবনযাপন ডেস্ক
‘কীভাবে শুরু করব জানি না! আমি আর আমার স্বামী—দুজন ছোটবেলার বন্ধু। প্রায় ১৪ বছরের সম্পর্কের পর ২০২১ সালে আমাদের বিয়ে হয়। শুরুতে দুই বছর দারুণ কেটেছে। এখন আমাদের তিন বছরের একটি সন্তানও আছে। সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে আমরা সুখী হলেও আসলে ভেতরে কিছুই ঠিক নেই। গত ছয় মাস ধরে আমাদের মধ্যে কোনো শারীরিক সম্পর্ক নেই। আমি বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত হলেও স্বামী একেবারেই উদাসীন। আমার প্রতি তার কোনো আগ্রহ যেন আর নেই।’—ফেসবুকের প্রায় ৫০ হাজার সদস্যের একটি নারীদের গ্রুপে এমন কথাই লিখেছেন এক নারী।
তিনি জানতে চেয়েছেন, এমন পরিস্থিতিতে করণীয় কী। পোস্টটিতে অনেকেই মন্তব্য করেছেন, দিয়েছেন নানা পরামর্শ। কেউ আবার লিখেছেন, তাঁর জীবনেও একই সমস্যা চলছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, দাম্পত্য জীবনে কয়েক বছর যেতেই স্বামী বা স্ত্রীর যৌন সম্পর্কের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলার মতো ঘটনা নতুন কিছু নয়। প্রায়ই দেখা যায়, এ সমস্যা দম্পতির একজন বা দুজনেরই হয়।
কেন এমন হয়?
চিকিৎসাবিজ্ঞানে যৌন ইচ্ছা কমে যাওয়াকে বলা হয় ‘লস অব লিবিডো’। বিশ্বে প্রতি পাঁচজন পুরুষের একজন জীবনের কোনো না কোনো সময়ে এ সমস্যায় ভোগেন। নারীদের মধ্যে এ হার আরও বেশি। এর পেছনে শারীরিক, মানসিক, সম্পর্কজনিত ও জীবনযাপনের নানা কারণ থাকতে পারে।
শারীরিক ও চিকিৎসাগত কারণ
- বয়স বাড়ার সঙ্গে পুরুষদের টেস্টোস্টেরন হরমোন কমে যায়, এতে যৌন ইচ্ছা হ্রাস পায়।
- নারীদের ক্ষেত্রে রজঃনিবৃত্তির আগেই ইস্ট্রোজেন ও প্রজেস্টেরন হরমোন কমতে শুরু করে। এতে যোনিপথ শুষ্ক হয়ে পড়ে এবং যৌনতার ইচ্ছা কমে যায়। জরায়ু বা ডিম্বাশয় অপসারণের পরও একই সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- থাইরয়েড হরমোনের ঘাটতি, প্রলেকটিন বেড়ে যাওয়া, ডায়াবেটিস, হৃদ্রোগ, স্থূলতা, লিভারের দীর্ঘমেয়াদি রোগ—এসবও যৌন ইচ্ছা কমিয়ে দেয়।
- দীর্ঘস্থায়ী অনিদ্রা বা অতিরিক্ত ক্লান্তিও এর কারণ হতে পারে।
মানসিক কারণ
- মানসিক চাপ, উদ্বেগ ও বিষণ্নতা যৌন আকাঙ্ক্ষা কমিয়ে দেয়।
- অতীতে যৌন হয়রানির শিকার হলে বা নিজের শরীর নিয়ে অস্বস্তি থাকলেও আগ্রহ কমে যায়।
- সন্তান জন্মের পর অনেক নারী শরীর নিয়ে সংকোচ বোধ করেন, এতে ইচ্ছা কমতে পারে।
- পিটিএসডি, ওসিডি প্রভৃতি মানসিক রোগও যৌন সম্পর্কের আগ্রহ নষ্ট করে।
সম্পর্কের কারণ
- দাম্পত্য কলহ বা অমীমাংসিত ঝগড়ায় মানসিক দূরত্ব তৈরি হয়, ফলে শারীরিক সম্পর্কও দূরে সরে যায়।
- সঙ্গীর সঙ্গে খোলামেলা যৌন আলোচনা না করলে অনেক সময় উপভোগ্যতা হারায়।
- একঘেয়েমি, নতুনত্বের অভাব, বিশ্বাসঘাতকতা বা বিশ্বাসের সংকটও যৌন উদাসীনতা তৈরি করে।
- অফিসের অতিরিক্ত কাজের চাপ, বিশ্রামের অভাব, অ্যালকোহল বা নেশাদ্রব্যের ব্যবহার যৌন ইচ্ছা কমিয়ে দেয়।
জীবনযাপন ও সামাজিকীকরণ
- অস্বাস্থ্যকর খাবার, শরীরচর্চার অভাব, অতিরিক্ত ক্লান্তি বা সন্তান লালন-পালনে ক্লান্ত হয়ে পড়া নারীদের ক্ষেত্রেও এ সমস্যা দেখা দেয়।
করণীয়
- নিজেকে দোষারোপ করবেন না।
- সঙ্গীর সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করুন।
- জোরাজুরি না করে ক্লান্তি কাটাতে সাহায্য করুন।
- স্বাস্থ্যকর খাবার, পর্যাপ্ত ঘুম এবং শারীরিক চর্চার দিকে নজর দিন।
- সম্পর্কে নতুনত্ব আনুন, একসঙ্গে সময় কাটান, ঘুরে বেড়ান।
- নেশাজাতীয় দ্রব্য থেকে বিরত থাকুন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বয়স কম হলেও যৌন ইচ্ছা কমে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দিলে দেরি না করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া জরুরি। কারণ নির্ণয় করতে পারলে চিকিৎসা ও কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে সমাধান সম্ভব।