রাত হলেই অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে— “ঘুম আসবে তো?” দিনের ব্যস্ততা, নানা উদ্বেগ আর চলমান চিন্তাধারার ভারে মস্তিষ্ক যেন শান্ত হতে চায় না। দাঁত ব্রাশ, ত্বকের যত্ন, হালকা চা পান কিংবা আরামদায়ক পোশাক পরা— সব করেও ঘুম আসতে দেরি হয়? এর পেছনে একটাই বড় কারণ— ঘুমের আগে মানসিক চাপ পুরোপুরি কমে না।
যুক্তরাষ্ট্রের ঘুম-বিশেষজ্ঞ ডা. অ্যাঞ্জেলা হলিডে-বেল Well+Good–এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলেন,
“ঘুমের প্রস্তুতি মানে এমন কিছু শান্তিময় ও সচেতন কাজ করা, যা আমাদের মস্তিষ্ককে সংকেত দেয়— এখন বিশ্রামের সময়।”
এর মানে, ঘুমের আগে কোনো উত্তেজক কাজ যেমন— মোবাইলে স্ক্রলিং, মেইল চেক করা বা সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘোরাঘুরি—এড়িয়ে চলা জরুরি।
কেন ঘুমের আগে মানসিক চাপ কমানো প্রয়োজন?
চিন্তা-উদ্বেগ ঘুম আসার পথে বড় বাধা। ডা. হলিডে-বেল জানান, অতিরিক্ত মানসিক চাপ হৃদস্পন্দন বাড়িয়ে মস্তিষ্ককে সজাগ করে তোলে। এতে ঘুম আসতে দেরি হয় বা মাঝরাতে ঘুম ভেঙে যেতে পারে।
প্রাকৃতিকভাবে শরীরে ঘুম-সহায়ক হরমোন মেলাটোনিন নিঃসৃত হয় রাতে। একইসঙ্গে চাপ-সম্পর্কিত হরমোন কর্টিসল-এর মাত্রা কমে আসে। কিন্তু বাইরের নেতিবাচক প্রভাব যেমন— ঝগড়া, উদ্বেগজনক সংবাদ, বা অতিরিক্ত ফোন ব্যবহারে এই প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়।
দীর্ঘদিন পর্যাপ্ত ঘুম না হলে দেখা দেয় নানা স্বাস্থ্য সমস্যা—
* রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া
* হৃদরোগ ও ডায়াবেটিস
* স্থূলতা
* উদ্বেগ ও বিষণ্ণতা
কীভাবে ধাপে ধাপে মানসিক চাপ কমানো যায়?
ডা. হলিডে-বেল পরামর্শ দেন, হুট করে বড় পরিবর্তন না এনে ছোট ছোট অভ্যাস গড়ে তুলতে। এতে শরীর ও মন ধীরে ধীরে মানিয়ে নেয় এবং সুফলও দীর্ঘস্থায়ী হয়।
এজন্য রুটিনকে ভাগ করা যায় তিন ধাপে— আজ রাতেই, পরবর্তী সপ্তাহান্তে, এবং আগামী মাসে।
আজ রাতেই যা করতে পারেন:
নরম আলো জ্বালান: ঘুমের এক ঘণ্টা আগে ঘরের মূল আলো বন্ধ করে টেবিল ল্যাম্প বা লাল/হলুদ আলো ব্যবহার করুন। এতে মেলাটোনিন নিঃসরণ বাড়ে।
আরামদায়ক পোশাক পরুন : হালকা পায়জামা বা ঢিলেঢালা পোশাক পরে থাকলে শরীর ধীরে ধীরে চাপমুক্ত হয়ে পড়ে।
ঘরের তাপমাত্রা সামান্য কমান: ঘরকে রাখুন ১৫–২০°C বা আপনার আরামদায়ক ঠাণ্ডায়। এতে ঘুম সহজ হয়।
ঘুম না এলে বিছানা ছেড়ে উঠুন: ১৫ মিনিট শুয়েও ঘুম না এলে অন্য ঘরে গিয়ে বই পড়ুন বা হালকা সংগীত শুনুন। ঘুম এলে তবেই বিছানায় ফিরে আসুন।
এই সপ্তাহান্তে যা করতে পারেন:
৫ মিনিটের ধ্যান বা শ্বাসব্যায়াম: Micro meditation বা ধীরে ধীরে শ্বাস নেওয়ার ব্যায়াম মানসিক চাপ দ্রুত কমায়।
প্রগ্রেসিভ মাসল রিলাক্সেশন: শরীরের প্রতিটি অংশ আলতো করে টেনে ছেড়ে দিয়ে ধীরে ধীরে শিথিল করুন।
গরম পানিতে সুগন্ধি গোসল: ল্যাভেন্ডার, ইউক্যালিপটাস বা ক্যামোমাইল–যুক্ত বাথ অয়েল ব্যবহার করে উষ্ণ পানি দিয়ে গোসল মানসিক প্রশান্তি বাড়ায়।
মন শান্ত করে এমন ভিডিও দেখুন: নেতিবাচক কনটেন্ট এড়িয়ে এমন কিছু দেখুন, যা আনন্দ দেয় বা প্রশান্তি আনে।
আগামী মাসে যা গড়ে তুলতে পারেন:
স্ক্রিন টাইম সীমিত করুন: ঘুমানোর কমপক্ষে ১ ঘণ্টা আগে ফোন ও অন্যান্য ইলেকট্রনিক ডিভাইস বন্ধ রাখুন। প্রয়োজনে স্ক্রিন টাইম অ্যালার্ট সেট করুন।
রাত্রিকালীন পাঠের অভ্যাস: ঘুমের আগে বই পড়া ঘুমের মান বাড়ায়। আপনার পছন্দমতো একটি বই বেছে নিন— নিজেই নিজের ‘নাইট টাইম বুক ক্লাব’ গড়ে তুলুন।
নতুন চাদর ব্যবহার করুন: প্রতি দু-তিন সপ্তাহে হালকা সুতির চাদর বদলে দিন। তাজা বিছানা মানসিক প্রশান্তি এনে দেয়।
স্ট্রেচিং বা হালকা ম্যাসাজ করুন: মাত্র ৩–৫টি স্ট্রেচিং ভঙ্গি ধরে রাখলে পেশি শিথিল হয়, ঘুম সহজে আসে।
নিজেকে সময় দিন— ধীরে ধীরে গড়ে তুলুন নতুন অভ্যাস
ঘুমের রুটিনে পরিবর্তন আনতে রাতারাতি ফল আশা করা ঠিক নয়। একটু একটু করে শুরু করুন— সময়ের সঙ্গে শরীর মানিয়ে নেবে। আপনার ঘুম হবে আরও মসৃণ, আর মন থাকবে চাপমুক্ত।