বিশেষ প্রতিবেদন
জন্মসূত্রে আমরা বাংলাদেশের নাগরিক। কিন্তু বিশ্বায়নের এ যুগে অনেকেই চান সুযোগ-সুবিধার জন্য বিদেশে স্থায়ীভাবে বসতি গড়তে। কেউ পড়াশোনার টানে, কেউ চাকরির কারণে, আবার কেউবা জীবনসঙ্গী খুঁজতে গিয়ে ভিনদেশে গিয়ে থিতু হন। বিশেষ করে ভালোবাসার টানে বিদেশি নাগরিককে বিয়ে করে নতুন দেশে নাগরিকত্ব পাওয়ার প্রবণতাও এখন বেশ সাধারণ বিষয়।
পৃথিবীতে কয়েকটি দেশ আছে, যেখানে নাগরিকত্ব পাওয়ার অন্যতম সহজ উপায় হলো সেই দেশের নাগরিককে বিয়ে করা। তবে শর্ত ও সময়সীমা দেশভেদে ভিন্ন। কোথাও বিয়ের পরই আবেদন করা যায়, আবার কোথাও কয়েক বছর অপেক্ষা করতে হয়। চলুন জেনে নেওয়া যাক এমন কয়েকটি দেশের কথা—
মেক্সিকো
মেক্সিকোর নাগরিককে বিয়ে করলে দু’বছর একসঙ্গে বসবাসের পর নাগরিকত্ব পাওয়া সম্ভব। স্প্যানিশ ভাষার মৌলিক জ্ঞান থাকা চাই। সুখবর হলো, নাগরিকত্ব পেলেও আগের দেশের পাসপোর্ট রাখতে পারবেন।
তুরস্ক
বিয়ের পর তিন বছর একসঙ্গে বৈধভাবে দাম্পত্য জীবন কাটালেই নাগরিকত্বের আবেদন করা যায়। ভাষা বা সংস্কৃতির আলাদা শর্ত নেই। তুরস্কের পাসপোর্ট দিয়ে বিশ্বের ১১০টিরও বেশি দেশে ভিসামুক্ত ভ্রমণ সম্ভব।
সুইজারল্যান্ড
সুইস নাগরিককে বিয়ে করলে ৩ বছর একসঙ্গে থাকা এবং ৫ বছর বসবাসের পর নাগরিকত্ব পাওয়া যায়। দেশের বাইরে থাকলেও ৬ বছরের দাম্পত্য জীবন পূর্ণ হলে আবেদন করা যায়। তবে সুইস ভাষা ও সংস্কৃতিতে অভ্যস্ত হওয়ার প্রমাণ লাগবে।
ব্রাজিল
বিয়ের মাধ্যমে নাগরিকত্ব পাওয়ার ক্ষেত্রে অন্যতম সহজ দেশ ব্রাজিল। মাত্র এক বছর বসবাস করলেই নাগরিকত্বের আবেদন করা যায়। দ্বৈত নাগরিকত্বের অনুমতিও আছে।
পর্তুগাল
পর্তুগিজ নাগরিককে বিয়ে করে তিন বছর কাটালেই নাগরিকত্বের আবেদন করা যায়, এমনকি দেশে না থাকলেও। নাগরিকত্ব পেলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সব সুবিধা পাওয়া যায়।
পোল্যান্ড
পোলিশ নাগরিককে বিয়ে করলে তিন বছর পর নাগরিকত্বের সুযোগ মিলবে, তবে টানা দুই বছর পোল্যান্ডে বসবাস করতে হবে। পোলিশ ভাষায় দক্ষতাও বাধ্যতামূলক।
সার্বিয়া
সার্বিয়ায় তিন বছরের বৈধ দাম্পত্য সম্পর্ক ও স্থায়ীভাবে বসবাসের শর্তে নাগরিকত্ব পাওয়া যায়। নিয়ম অনেক সময় শিথিল হওয়ায় প্রক্রিয়াটি তুলনামূলক সহজ।
ফ্রান্স
ফরাসি নাগরিককে বিয়ে করলে নাগরিকত্ব পেতে সময় লাগে চার বছর। ফ্রান্সের বাইরে বিয়ে করলে সময়সীমা আরও বাড়তে পারে। তবে নাগরিকত্ব পেলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সুযোগ মিলবে।
ইতালি
ইতালির নাগরিককে বিয়ে করলে দেশে বসবাস করলে দুই বছর, আর দেশের বাইরে থাকলে তিন বছর পর আবেদন করা যায়। সন্তান থাকলে সময়সীমা অর্ধেক কমে যায়।
কেপ ভার্ড
পশ্চিম আফ্রিকার সুন্দর দ্বীপরাষ্ট্র কেপ ভার্ডে বিয়ে করলেই নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করা যায়। এখানে বসবাসের পূর্বশর্ত নেই। তাই প্রক্রিয়াটি দ্রুত ও সহজ।
স্পেন
স্পেনের আইনে, স্প্যানিশ নাগরিককে বিয়ে করলে মাত্র এক বছরের বসবাসেই নাগরিকত্বের আবেদন করা যায়। একবার নাগরিকত্ব পেলে লাতিন আমেরিকা, ফিলিপাইন ও পর্তুগালসহ আরও অনেক দেশের সঙ্গে দ্বৈত নাগরিকত্বের সুবিধা মেলে।
আর্জেন্টিনা
আর্জেন্টাইন নাগরিককে বিয়ে করলে স্থায়ীভাবে থাকার অনুমতি মেলে। মাত্র দুই বছর পর নাগরিকত্বের আবেদন করা যায়। তবে অপরাধমুক্ত থাকা ও সাধারণ স্প্যানিশ ভাষাজ্ঞান থাকা জরুরি।
বিয়ের আগে ভেবে নিন
বিয়ে শুধু নাগরিকত্ব পাওয়ার মাধ্যম নয়; এটি জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। সত্যিকারের ভালোবাসার টানে যদি সম্পর্ক গড়ে ওঠে, আর সেটি নাগরিকত্বের পথ খুলে দেয়— তবে সেটি হতে পারে বাড়তি সুযোগ। কিন্তু শুধু নাগরিকত্বের জন্য সম্পর্ক হলে তা কাগুজে সম্পর্কেই সীমাবদ্ধ থেকে যায়, মানসিক শান্তি মেলে না।