জাতীয় নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ এখনও ঘোষণা না হলেও নির্বাচিত নতুন সরকারের প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীদের জন্য রাজধানীতে বাসা খোঁজার প্রক্রিয়া শুরু করেছে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। প্রধানমন্ত্রীর আবাসনের জন্য হেয়ার রোডের রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন ‘যমুনা’ এবং তার পার্শ্ববর্তী দুটি বাংলোকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।
এ উদ্দেশ্যে ৭ জুলাই মন্ত্রণালয় একটি উচ্চপর্যায়ের ছয় সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করে। অতিরিক্ত সচিব ফারুক আহম্মেদ এই কমিটির নেতৃত্ব দেন। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা সরেজমিন পরিদর্শনের পর ২০ জুলাই কমিটি তাদের সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দেয়।
গণভবনে আর প্রধানমন্ত্রী থাকবেন না
শেখ হাসিনার টানা তিন মেয়াদে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ছিল গণভবন। কিন্তু জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর অন্তর্বর্তী সরকার গণভবনকে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘর’ হিসেবে ঘোষণা করে। সেখানে এখন জাদুঘর নির্মাণের কাজ চলছে, যা ৫ আগস্ট উদ্বোধন করা হবে। এর ফলে ভবিষ্যতে আর কোনো সরকারপ্রধান গণভবনে থাকতে পারবেন না।
প্রধানমন্ত্রীর নতুন আবাসন কোথায়?
কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হেয়ার রোডের ২৪ ও ২৫ নম্বর বাংলো এবং যমুনা ভবন মিলিয়ে নতুন প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন গড়ে তোলা যেতে পারে। যমুনা ভবন বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। শেরেবাংলা নগরে সাবেক বাণিজ্য মেলা মাঠকেও বিবেচনা করা হলেও স্থাপত্যগত ও নকশাগত সীমাবদ্ধতার কারণে সেই স্থানকে উপযোগী মনে করেনি কমিটি।
মন্ত্রীদের বাসাবাড়ি নিয়ে সংকট
সরকারি হিসাব অনুযায়ী, মিন্টো রোড, হেয়ার রোড ও বেইলি রোড মিলিয়ে মন্ত্রীদের জন্য ৪৬টি আবাসনের ব্যবস্থা রয়েছে। তবে এর মধ্যে অনেক ফ্ল্যাট ও বাংলো বর্তমানে বিচারপতি, উপদেষ্টা, নির্বাচন কমিশনার এবং সরকারের অন্যান্য উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের দখলে রয়েছে।
‘মিনিস্টার্স অ্যাপার্টমেন্ট’-এর ৩০টি ফ্ল্যাটের মধ্যে ১২টি দখলে রেখেছেন বিচারপতিরা এবং বাকি ১৮টির অধিকাংশেই রয়েছেন অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। যদিও বিচারপতিদের জন্য কাকরাইলে আলাদা একটি ২০ তলা ভবনে ৭৬টি ফ্ল্যাট রয়েছে, যার ২৪টি ফাঁকা পড়ে আছে। এ অবস্থায় নির্বাচনের পর নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যদের জন্য পর্যাপ্ত বাসার সংকট দেখা দিতে পারে বলে মনে করছে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়।
নতুন ভবনের প্রস্তাব
কমিটি দুটি জায়গায় নতুন মন্ত্রীদের জন্য আধুনিক ভবন গড়ার প্রস্তাব দিয়েছে:
১. মিন্টো রোডের ৩৩ ও ৩৪ নম্বর বাংলো: আয়তন ৯০ ও ৯৭ কাঠা। ছয়তলা ভবন নির্মাণ করলে অন্তত ১২ জন মন্ত্রী থাকতে পারবেন।
২.বেইলি রোডের ২০ ও ২১ নম্বর বাংলো: আয়তন ১২১ কাঠা। এখানে আরও ১২ জন মন্ত্রীর বাসস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা সম্ভব।
তবে এসব বাড়ি ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় নতুন স্থাপনা নির্মাণের আগে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর ও স্থপতিদের মতামত নেওয়ার সুপারিশ করেছে কমিটি।
বিকল্প স্থান
এছাড়া গুলশান ১১৩ নম্বর সড়কের ২০ নম্বর ও ধানমন্ডি ২ নম্বর সড়কের ১২০ নম্বর পুরাতন বাড়ি—এই দুটি পরিত্যক্ত সরকারি সম্পত্তিতেও মন্ত্রীদের জন্য আবাসিক ভবন নির্মাণের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখন অন্তর্বর্তী সরকারের
কমিটির প্রধান অতিরিক্ত সচিব ফারুক আহম্মেদ জানান, তারা প্রয়োজনীয় সুপারিশ জমা দিয়েছেন। এখন এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে অন্তর্বর্তী সরকার।