নিজস্ব প্রতিবেদক
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের ঘোষিত জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার ঝড় উঠেছে। এই ঘোষণাকে ‘অপূর্ণ’, ‘জনআকাঙ্ক্ষা-বিচ্যুত’ এবং ‘ঐতিহাসিক বাস্তবতা উপেক্ষাকারী’ আখ্যা দিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী বলছে—জাতীয় নির্বাচনের ভিত্তি হতে হবে ঐতিহাসিক জুলাই সনদ।
আজ ৬ আগস্ট, বুধবার রাজধানীর মগবাজারের আল ফালাহ মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব মন্তব্য করেন দলের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। তিনি বলেন,
“আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হলে আমাদের আপত্তি নেই। তবে তা হতে হবে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি ও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করে।”
‘ঐতিহাসিক ঘোষণাপত্রে জনমানুষের স্বপ্ন নেই’ : জামায়াতের বক্তব্যে বারবার ফিরে এসেছে একটি অভিযোগ—জুলাই ঘোষণায় জনগণের দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রামের প্রতিফলন ঘটেনি। তাহের বলেন, “এটি একটি অপূর্ণ বিবৃতি। যেখানে ১৯৪৭-এর আজাদী, ২০০৯ সালের পিলখানা হত্যাকাণ্ড, ২০১৩ সালের শাপলা চত্বরের গণহত্যা, ২০২3 সালের ২৮ অক্টোবরের ঘটনা, কিংবা সদ্য সংঘটিত জুলাই অভ্যুত্থানের বিশাল পরিসর—সবই উপেক্ষিত।”
তিনি আরও বলেন, “এই ঘোষণায় না আছে মাদ্রাসা ছাত্র-শিক্ষক, না আছে আলেম-ওলামা, না আছে অনলাইন অ্যাকটিভিস্টদের অবদান। এটি শুধু ইতিহাসের প্রতি অবিচার নয়, বরং জুলাই চেতনার প্রতি অমর্যাদা।”
‘নির্বাচন হোক, তবে সনদের ভিত্তিতে’ : অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস গতকাল জাতীয় নির্বাচনের সময়সীমা ঘোষণা করেছেন—আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি। এই ঘোষণাকে জামায়াত ইতিবাচকভাবে দেখলেও তারা পরিষ্কার বলেছে, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি না হলে এটি একটি খালি ঘোষণা হয়ে থাকবে।
তাহের বলেন, “ঐকমত্য কমিশনের মাধ্যমে ১৯টি বিষয়ে সমঝোতা হয়েছিল, যার ভিত্তিতেই সনদ রচিত হয়েছে। অথচ ঘোষণায় কোথাও তার রেফারেন্স নেই। এই সনদের বাস্তবায়ন ছাড়া কোনো নির্বাচনই জনগণের চোখে গ্রহণযোগ্য হবে না।”
সংবিধান সংশোধন, গণভোট বা অধ্যাদেশ—কী চায় জামায়াত?
জামায়াত বলছে, জুলাই সনদকে আইনি ভিত্তি দিতে হবে—তা হোক গণভোট, অধ্যাদেশ কিংবা সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে। তারা হুঁশিয়ার করে বলেছে, “আইনি ভিত্তি ছাড়া এই সরকার সংস্কারের যে অঙ্গীকার করছে, তা ব্যর্থ হবে।”
তারা চায়, প্রশাসন, সেনাবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করে রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য সমান সুযোগ তৈরি করা হোক। তাহের বলেন, “সরকার ও প্রশাসনকে স্বৈরাচার-অনুগত অংশ থেকে মুক্ত করতে হবে। নির্বাচন কমিশনসহ সব স্তরে নিরপেক্ষতা আনতে হবে।”
জামায়াত দীর্ঘদিন ধরে জাতীয় নির্বাচনে সংখ্যানুপাতিক (Proportional Representation) পদ্ধতির দাবি জানিয়ে আসছে। এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তাহের বলেন, “এটি আমাদের ন্যায্য দাবি। আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাবো। অংশ নেব কি না, সেটি সময়ই বলে দেবে।”
‘ঐকমত্য উপেক্ষা করলে জনগণের হতাশা বাড়বে’ জামায়াত মনে করে, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মূল আকাঙ্ক্ষা ছিল রাষ্ট্র সংস্কার ও ন্যায্য প্রতিনিধিত্ব। অথচ প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণায় এসব অনুপস্থিত। তাহের বলেন,
“শহীদ ও আহতদের পরিবার, জুলাই যোদ্ধারা হতাশ। সরকার যদি জনগণের আকাঙ্ক্ষাকে এড়িয়ে যায়, তবে জনগণ তাদের প্রত্যাখ্যান করতেও দ্বিধা করবে না।”