নিজস্ব প্রতিবেদক
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত একটি প্রদর্শনী থেকে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের দায়ে দণ্ডিত ব্যক্তিদের ছবি সরিয়ে নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) সন্ধ্যায় বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলোর তীব্র প্রতিবাদ ও উত্তেজনার মুখে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ইসলামী ছাত্রশিবির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা আয়োজন করেছিল ‘৩৬ জুলাই: আমরা থামব না’ শীর্ষক তিন দিনব্যাপী প্রদর্শনী ও সাংস্কৃতিক কর্মসূচি। সেখানে যুদ্ধাপরাধীদের ছবি ব্যবহার করায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনার ঝড় ওঠে।
প্রশাসনের হস্তক্ষেপ : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. সাইফুদ্দীন আহমেদ জানান, “আমরা ছবিগুলো সরিয়ে নিতে ছাত্রশিবিরকে বলি। তারা সম্মতি দিলে আমাদের সহকারী প্রক্টর ও প্রক্টরিয়াল টিমের সহায়তায় ছবিগুলো সরানো হয়।”
রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত টিএসসি এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছিল। বামপন্থী ছাত্র সংগঠন ও শিবিরের কর্মীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি স্লোগান দেওয়া হয়।
শিবিরের অবস্থান : ছবি সরানোর পর ছাত্রশিবির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি এস এম ফরহাদ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দাবি করেন, “আমাদের প্রদর্শনীর ফ্রেমের একটি অংশকে ঘিরে কৃত্রিম বিতর্ক তৈরি করা হয়েছে। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ আমাদের গৌরবময় অধ্যায়, তবে শাহবাগ ও বাকশালের নামে যারা ইতিহাস বিকৃত করেছে, তাদের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান স্পষ্ট।”
তিনি বলেন, “যাদের ছবি প্রদর্শন করা হয়েছিল, তারা বিচারিক হত্যাকাণ্ডের শিকার। এই বিচার ছিল পক্ষপাতদুষ্ট ও আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের বাইরে।”
প্রতিবাদ ও নিন্দা : বামপন্থী সংগঠনগুলো এ ঘটনাকে ‘একাত্তর ও চব্বিশের মুখোমুখি দাঁড় করানোর ঘৃণ্য অপচেষ্টা’ হিসেবে আখ্যা দেয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক উমামা ফাতেমা বলেন, “জুলাই অভ্যুত্থানকে বিতর্কিত করে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে কলঙ্কিত করার ঘৃণ্য চেষ্টা করেছে শিবির।”
গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের আহ্বায়ক আবদুল কাদের বলেন, “শিবির একাত্তরকে মুছে দেওয়ার হীন প্রয়াস চালাচ্ছে।”
বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন ও ছাত্রদল পৃথক বিবৃতিতে প্রদর্শনীতে দণ্ডিত যুদ্ধাপরাধীদের ছবি রাখার ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ জানায়। ছাত্রদলের বিবৃতিতে বলা হয়, “এই ছবির মাধ্যমে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মতো যুদ্ধাপরাধে দণ্ডিত রাজাকারদের পুনর্বাসনের চেষ্টা করা হয়েছে।”
চার দফা দাবি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে চার দফা দাবি উত্থাপন করেছে:
১. তাৎক্ষণিকভাবে যুদ্ধাপরাধীদের ছবি সরানো এবং প্রদর্শনী বন্ধ
২. ছাত্রশিবিরকে জনসমক্ষে ক্ষমা চাইতে হবে
৩. ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে নিশ্চয়তা দিতে হবে
৪. প্রশাসন কীভাবে এমন ঘটনা অনুমোদন দিল তা ব্যাখ্যা দিতে হবে এবং ক্ষমা চাইতে হবে