নিজস্ব প্রতিবেদক
বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনৈতিক বাস্তবতা, রাজনৈতিক পটপরিবর্তন এবং সামনের জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশের অর্থনীতি একটি অনিশ্চিত মোড়ের মুখে দাঁড়িয়ে। এর মাঝেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ দিয়েছেন এক স্পষ্ট বার্তা—“সময় কম, তবে যতটা পারি সংস্কার করেই যাবো।”
তিনি বলেন, “আমরা ফেব্রুয়ারির মধ্যে চলে যাব। এই অল্প সময়ের মধ্যেই চেষ্টা করবো যতটা পারি অর্থনীতিকে গুছিয়ে দিতে।”
সংস্কার হবে ‘সংক্ষেপে, কিন্তু গুরুত্বের সাথে’ আজ ৬ আগস্ট, বুধবার রাজধানীর মিরপুরে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক স্টাফ কলেজে দেশব্যাপী বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জাহিদ হোসাইন ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেক।
উদ্বোধনী বক্তব্যে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “গতকাল নির্বাচনের সময় ঘোষণা করা হয়েছে। আমরা জানি আমাদের হাতে সময় নেই। কিন্তু সংস্কার থেমে থাকবে না। আমরা যেটুকু পারি, করে যাবো। এরপর যারাই আসবে, তারা যেন সেখান থেকে শুরু করতে পারে।”
তার মতে, “সংস্কার একটা চলমান বিষয়। এটা এমন কিছু না যে আমি করে গেলাম, আর কাজ শেষ। এটা জীবনের মতো—বহমান। তবে কিছু কাজ শুরু করে যেতে পারলেই আমি তৃপ্ত হবো।”
ব্যাংক খাতে ভয়াবহ লুটপাটের চিত্র তুলে ধরলেন ব্যাংক খাত নিয়ে স্পষ্ট ভাষায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন অর্থ উপদেষ্টা। তিনি বলেন, “আমার ছাত্র মনসুর (বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর) বলতো—সে ১০০ দেশের অর্থনৈতিক কাঠামোর সঙ্গে কাজ করেছে, কিন্তু এমন লুটপাট কোথাও দেখেনি।”
তার বক্তব্য অনুযায়ী, “একটি ব্যাংকে ২০ হাজার কোটি টাকা থাকলে, ১৬ হাজার কোটি টাকা নিয়ে নেয়া হয়েছে। এই টাকা কার? আমার, আপনার, দেশের মানুষের। ব্যাংক খাত এখন লুটপাটের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে।”
আত্মবিশ্বাসী কিন্তু বাস্তববাদী অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ মূলত একজন অর্থনীতিবিদ, যিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর হিসেবে সুপরিচিত। এখন অন্তর্বর্তী সরকারের অংশ হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন। দায়িত্ব নিয়েই তিনি বলছেন, তিনি সময়ের সংকীর্ণতা বুঝে কাজ করতে চান। কোনো অলৌকিক সমাধানের প্রতিশ্রুতি নয়, বরং টেকসই ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনই তার লক্ষ্য।
নতুন সরকারের জন্য ভিত্তি তৈরি করার অঙ্গীকার উপদেষ্টা জানান,
“আমরা জানি দীর্ঘ মেয়াদে কী করতে হবে। কিন্তু এখন সময় সীমিত। তাই আমরা দীর্ঘমেয়াদি কাঠামোর দিকে যাব না—আমরা যেন অন্তত প্রয়োজনীয় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে দিতে পারি, সেটাই লক্ষ্য।”
এই শৃঙ্খলার আওতায় থাকতে পারে: কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ শক্তিশালীকরণ, খেলাপি ঋণের লাগাম টেনে ধরা, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা, ডলার সংকট নিরসনে অস্থায়ী ব্যবস্থা, আস্থার সংকট মেটাতে চাচ্ছেন স্পষ্টতা।
ড. সালেহউদ্দিনের বক্তব্যে কিছুটা হতাশার সুর থাকলেও, ছিল আত্মবিশ্বাস এবং দায়িত্বশীলতার প্রতিশ্রুতি। তিনি এমন কোনো প্রতিশ্রুতি দেননি যা বাস্তবতা থেকে দূরে, বরং যা সময়োপযোগী।
“অর্থনীতি রাজনীতি দ্বারা প্রভাবিত—আমরা জানি। কিন্তু যারা অর্থনীতিকে বোঝে, তারা জানে নৈতিক শৃঙ্খলা ছাড়া কিছুই চলে না। সেই নৈতিকতা ফেরানোর চেষ্টা করবো,”— বলেন অর্থ উপদেষ্টা।