বিশেষ প্রতিবেদক
ঢাকার মেট্রোরেলে যাত্রী ভিড়ে ঠাসা হলেও টিকিট বিক্রির আয়ে ঋণের কিস্তি মেটানো সম্ভব হচ্ছে না। বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত অর্থবছরে মেট্রোরেল থেকে আয় হয়েছে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা, অথচ আগামী কয়েক বছর প্রতি বছর ৪৬৫ কোটি থেকে ৭৪০ কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে হবে। ফলে সরকারের ভর্তুকি ছাড়া এই ঋণ পরিশোধ সম্ভব নয় বলে মত দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
বর্তমানে এমআরটি-৬ নামে পরিচিত উত্তরা-মতিঝিল রুটে প্রতিদিন গড়ে চার লাখ যাত্রী যাতায়াত করছে। এই লাইনের সম্প্রসারণ কাজ চলছে কমলাপুর পর্যন্ত। ভবিষ্যতে আরও পাঁচটি মেট্রোরেল লাইনের পরিকল্পনাও রয়েছে।
২০১২ সালে এমআরটি-৬ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। প্রথমে উত্তরা থেকে আগারগাঁও অংশ চালু হয় ২০২২ সালে, পরে ২০২৩ সালের নভেম্বরে আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশ। প্রকল্পের ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৩৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা, যার ৫৯ শতাংশ এসেছে জাপানের সংস্থা জাইকার কাছ থেকে ঋণ হিসেবে।
ঋণের শর্ত অনুযায়ী, ২০২৩ সাল থেকে কিস্তি পরিশোধ শুরু হয়েছে। চলতি অর্থবছরেই ১০ কোটি টাকার কিস্তি পরিশোধ করতে হবে, আর ২০২৫ সালের মে থেকে প্রতিবছর গড়ে ৭০০ কোটির বেশি টাকা দিতে হবে। সব মিলিয়ে ২০৩০-৩১ অর্থবছর পর্যন্ত ৩৭০০ কোটি টাকার বেশি কিস্তি দিতে হবে বলে জানিয়েছেন ডিএমটিসিএল (ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড) কর্মকর্তারা।
মেট্রোরেলের এমডি ফারুক আহমেদ জানান, ট্রেনের সংখ্যা ও চলাচলের সময় বাড়ানো, স্টেশন এলাকাগুলোতে দোকান বরাদ্দ দিয়ে আয় বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, মেট্রোরেলের বর্তমান ভাড়া তুলনামূলক বেশি হওয়ায় ভাড়া বাড়ানোর সুযোগ নেই। এখন ট্রেনের ফ্রিকোয়েন্সি বাড়ানো ও অপারেশনাল সময় দীর্ঘ করেই আয় বাড়াতে হবে।
বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক সামছুল হক বলেন, “মেট্রোরেলের নির্মাণ ব্যয় তুলনামূলক বেশি। তাই আয় দিয়ে ঋণ শোধ করতে গেলে ৫০ বছরের বেশি সময় লাগবে। তাছাড়া পুরোনো হতে থাকলে রক্ষণাবেক্ষণের খরচ আরও বাড়বে। তাই অপ্রয়োজনীয় খরচ কমানো ও বিকল্প উৎস থেকে আয় বাড়ানোর দিকে নজর দিতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, মেট্রোরেল ভবিষ্যতে নগরজীবনে বিশাল ভূমিকা রাখবে ঠিকই, কিন্তু টেকসই অর্থনৈতিক কাঠামো তৈরি না হলে তা সরকারের ওপর বোঝা হয়ে দাঁড়াবে।