দুঃসময়ে মুখোমুখি
আমি সুনিশ্চিত এতটুকু কিছুতেই কিছু বলব না
আমি নিশ্চিন্ত মনে এখানে কী কী কল্পনা করেছিলাম
আমি কখনোই বলব না, কোনো কিছুতেই কিছু আর
রাজনীতির স্কুলে পড়িনি, বুঝিনি রাজনীতিবিদ খিলাড়ি…
সগোত্রীয় অধিভুক্ত দলে পাল্লায় খেলা দেখিয়ে চলে
দক্ষ ক্রীড়ক পরিচালনা- ভাবতেই ভালো লাগে
ভাবনাগুলোর জট বেঁধে গেল ঘুমে অচেতন পলিটিক্স
চতুর্দিকে পাহাড় ঘেরায়- কে কখন খেলে খেলারাম!
শেকলে বাঁধা অজস্র পাখি- কী কারণে কিচিরমিচির
বেঁচে কী গেল চিরতরেই- সুনিবিড় মনোহর স্বপ্নে?
মেঘ যেমন অবজ্ঞা ছুড়ে নামে বৃষ্টি স্বপ্নের আকাশ-
আকাশ বেচারাই জড়ালে বিভাবনার ত্বক জড়িয়ে!
রোজকার মতো বৃষ্টি নামে- বৃষ্টিতে স্বপ্নের পাখা গজে
তুমুলযুদ্ধ ঘোরতর ধ্বংসযজ্ঞ- পাখা কতটুকু মেলে?
কখন যেন মেলেছিলাম অস্তিত্ব ও অস্তিত্বের কিছু;
কোনো এক অদৃশ্য মরণ যেন টেনে নিয়ে গেছে সব।
শূন্য আরো গহীন শূন্যতা- বাকিটুকু নষ্ট রাজনীতি-
দ্বিধার আকাশে অবশেষ জমাট রক্তের বৃষ্টিজল-
একদিকে ক্লান্তির স্বদেশ অন্যদিকে বিষাদ পৃথিবী,
রক্তের নেশায় ঝর্ণাধারা বহে গহীন জলের পরে।
যখন রাজনীতিই রক্ত আর ক্ষমতা আরও রক্তাক্ত
তখন লিখতেই পারি না আমি, কবিতার শিরোনাম,
খণ্ডিত গৌরব ধ্বংসের কিনারে উজাড় হলো বাগান
কী করে এখন আমি মানব হৃদয়ে নৈবদ্য সাজাই!
শিল্পলোকে শিল্প থাকে না
এরপর কখনো ভাবিনি ভাবতেই যেন ভুলে গেছি
এতটাই মনে রাখতাম আর রাখতে পারি না
শিল্পলোকে শিল্পই থাকে না; সাহিত্যে বসত করে
পূর্বপুরুষের অনেকেই চলে গেছে সেই কবে
কবরের পাশে গেলে চিনতে ভীষণ কষ্ট হয়।
দাদা-দাদির কবর ফুঁড়ে বেড়েছে অচেনা গাছ
কেমন কুলাঙ্গার ভাবিনি রক্তপাপ বেঈমানি;
শিল্পলোকে জন্ম হয় প্রতিদিন নতুনত্ব-
তবু ভুলে গেছি শিল্প লোকজন শিল্পজন্ম।
আবহমান সময়ে পেয়েছি যেটুকু
উদাসীন কাটিয়েছি বেলা নিজেরই অবহেলা
ভুলের সাগরে ঢেউ উঠে ভুলের তরঙ্গ
ভাঙাগড়া নিয়তির অবনতি
আফসোস শব্দটিই মৃত সৃজন করে শিল্পলোকে
পথ ধরে উত্তরপুরুষ থেমে থাকবে না কিছু
আদিম রক্তের গতি
আরও অতি আধুনিক হতে হতে হয় জিরো
নিরাবরণ সৃষ্টির মতো শিল্পলোকে শিল্পই থাকে না
কেবল অস্তিত্বে অনস্তিত্বের নগণ্য চিন্তাঘ্রাণ!
আর জন্মে মানুষ হব না
আমি তো আমার জন্য কবিতা লিখতে পারিনি
কলম নেই বলে-
হারাধনেরা আমাকে নিয়ে আরামসে খেলেছে।
পৃথিবীর ভদ্র সম্প্রদায় ভাবে লোকে মশা-মাছি
কানামাছি খেলতে খেলতে এতদূর এগিয়েছি;
গরুর হাড্ডি ও কালিমূর্তি দেখিয়ে আর লাভ কী!
২.
দুপুরের তেজী সূর্য তেজে চষে বেড়াতেই থাকে
জাতি ডিম ভেঙে ফেলে,
উজানের ভাঙনের ঢল কোনো বাধাই মানে না আর
যেন রাগান্বিত পানি।
৩.
সাগরকে তো আর সরোবর বলা যায় না
যেমন বাড়ির উঠোনকে বলা যায় না সবুজ চত্বর
গাছপালা আর ঘাস,
তেমন গ্রহকে ঠিক নক্ষত্র বলা যায় না, যেমন..
৪.
একটা গোলমেলে তাঁবুতে ঘুমাতে পারলাম না;
ক্ষমতা বাড়া এতটা লম্বা, আর জন্মে মানুষ হব না।
উপলব্ধি
ভাঙা কাচ- আস্ত গ্লাসটির কী অবস্থা;
চিন্তার সুষ্ঠু সমাধান রিফাইনারি তো বুঝি-
জুলাইয়ের চূর্ণ কণা, একাত্তরের বালুকা রেণু
দূরবর্তী লাল রঙ অদৃশ্য, দৃশমান নীল-বেগুনি!
জুলাইয়ে বিষণ্নতা কাটে না কেন?
নেই কোনো অভিযোগ, নেই কোনো অভিমান
কোনটা যে বড়, আর কোনটা যে ছোট-
না বুঝি জুলাই, আর নাইবা বুঝি ডিসেম্বর;
বাকি দশ মাস, মায়ের প্রসব ব্যথারই মতো যন্ত্রণার
ফেলে দাও, দূরে ছুড়ে আধুনিক অধম বিজ্ঞান
কী জন্মালে খুশি, শুনি, ছেলে নাকি মেয়ে…
দেশ: আমাদের মা- চাই তো সাম্য আর সমতা;
কপালের ফের দুঃখিত মানুষের মতো, বিকল ও মৃত
জুলাই বিপ্লব ও একাত্তরের যুদ্ধ- দ্বৈত স্বাধীনতা
ফলাফল কিন্তু যা তা, এক এবং একত্র বাসা;
বাস করে কারা? এ অনিয়মের আলিশান বাসায়;
অজ্ঞাতসারে ঝরায় চোখ, চোখে জল আছে যত!
ভাষা হারায় সমস্ত বর্ণমালা কাঁদতে পারে নাই কেবল
জীবনের ব্যথা আর কঠিন গুঞ্জন, কেবলই একা,
কিছুটা বিলীন হয়, কিছুটা অঙ্গার হয় পুড়ে-
লুকানোর নেই স্থান- নিশ্বাসে দীর্ঘশ্বাসেরই সর্বনাশ!
জুলাইয়ের ঈদ ডিসেম্বরের মতো শ্মশানের আগুন
রক্ত পুড়ে ছাই হলো, হলো ক্লান্ত বিধ্বস্ত জনজীবন!
চোখের জল হারিয়ে গেল- নতুন পুরোনো ঘর-
সুদীর্ঘ জলের চিঠি হাতে, হাঁটে নীল রঙের বুক পকেট
জুলাই ধরে ভাঙাবুকের নাথ
জুলাই মাসের একুশ কেন শোকে
ট্রাজেডিও নোংরানীতির ফাঁকে।
বার্ন ইউনিট জ্বালা বোঝে বুক
স্বজন কত দুঃখ পুষে শোক!
হঠাৎ করে মৃত্যু আসে রোজ,
সব মরণে যম রাখে না খোঁজ!
স্বজন কাঁদে পাথর শোকে ফাল,
লক্ষ্যচ্যুত মাইলস্টোন কাল!
হেলায় টানি স্বার্থচলা গাড়ি,
কাজে কর্মে আকাশপাতাল পড়ি।
জীবন নিয়ে বড্ড খেলি ভাই,
দোষ যেন সব দুর্ঘটনার তাই।
আষাঢ় শ্রাবণ রক্ত করে ভোগ,
বজ্র টানে হৃদয় ধরা যোগ!
যার চলে যায় সেও যেন এক পথ
জুলাই ধরে ভাঙাবুকের নাথ!
অপার্থিব ভালোবাসা
জন্ম দিতে হলে রক্ত লাগে, মন লাগে-
তাহলেই তো শিল্প সন্তানেরা আলোর মুখ দেখে;
যেমন একদিকে মা- অপরদিকে শিল্পীরা।
যা কিছু ভাবছি আমি, তা হয়তোবা সামান্য-
তুমি যা কিছুই কল্পনা মাখছ- এত অসামান্য:
জেগে আছে ভূমি বুকে নিয়ে ভালোবাসা।
আজ চিন্তায় যদি সুদিন হাতছানি দেয়;
আগামীকাল, পরশু- কী হবে তা কেউই জানে না,
নিজেকে জীবিত রাখলেই সাদা-কালো আহা।
এ চৈতি নিশিহাওয়া কখনও ফিরবে না,
এতটা রঙিন করো না; অতটা রাঙিয়ে তুলো না-
জীবন বোঝে না জীবনানন্দের এই হাঁটাচলা।
আব্বা তুমি বটগাছ- তুমি চৈত্রের তৃপ্ত দুপুর-
কেউ তো বোঝেনি, না বুঝেছি এই আমি;
আমি কিন্তু এ কথা কাউকে আদৌও বলিনি।
পৃথিবীর , সব বাতি তুমি জ্বেলে দিলে-
গোলাম আমি, এক ও অদ্বিতীয়, বালক তোমার
অন্ধকারের এ ভালোবাসা এতটা সুখদায়ক।
এ কথা কেউ তো জানে না, নাই-বা জানুক-
তুমি সূর্য বা প্রার্থনা ও হারমোনিয়ামের যত সুর-
কী করে বইব আমি এতসব এ-ই আয়োজন?
সিলেট থেকে