২০২৫ সালের গ্লোবাল লিভেবিলিটি ইনডেক্সে এবার বড় এক পরিবর্তন এসেছে। বহু বছর ধরে শীর্ষে থাকা অস্ট্রিয়ার ভিয়েনাকে পেছনে ফেলে এবার এক নম্বরে উঠেছে ডেনমার্কের কোপেনহেগেন।
বিশ্বজুড়ে বেড়ে চলা ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা, নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগ এবং কিছু সাম্প্রতিক হামলার ঘটনায় ভিয়েনার অবস্থান দুর্বল হয়ে পড়ে। অন্যদিকে শিক্ষা, অবকাঠামো ও স্থিতিশীলতার দিক দিয়ে অসাধারণ অগ্রগতি করে কোপেনহেগেন উঠে এসেছে সবার শীর্ষে।
ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (EIU) প্রতিবছর এই বাসযোগ্যতা সূচক প্রকাশ করে, যেখানে স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, পরিবহন, স্থিতিশীলতা, সংস্কৃতি ও জীবনযাত্রার মান বিবেচনা করা হয়।
২০২৫ সালের শীর্ষ ১০ বাসযোগ্য শহর:
কোপেনহেগেন, ডেনমার্ক
ভিয়েনা, অস্ট্রিয়া ও জুরিখ, সুইজারল্যান্ড
মেলবোর্ন, অস্ট্রেলিয়া
জেনেভা, সুইজারল্যান্ড
সিডনি, অস্ট্রেলিয়া
ওসাকা, জাপান ও অকল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড
অ্যাডিলেইড, অস্ট্রেলিয়া
ভ্যাঙ্কুভার, কানাডা
এবার দেখা যাক, এই শহরগুলোতে জীবনযাপন কেমন?
কোপেনহেগেন, ডেনমার্ক
সুখ ও স্থিতিশীলতায় সেরা এই শহর শান্ত পরিবেশ, নির্ভরযোগ্য গণপরিবহন ও পরিবারবান্ধব সংস্কৃতির জন্য প্রসিদ্ধ।
থমাস ফ্র্যাংকলিন, একজন ফিনটেক সিইও বলেন, “এখানে ট্রেন সময়মতো আসে, আর সামাজিক চাপও অনেক কম।”
অলিভিয়া লিভেং, একজন মার্কিন সাংবাদিক, যিনি আট বছর ধরে সেখানে বসবাস করছেন, বলেন, “শিশুদের জন্য এটা আদর্শ শহর।”
সাশ্রয়ী ডে-কেয়ার, চমৎকার অবকাঠামো এবং কর্ম-জীবন ভারসাম্য এখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কর্মীরা জুলাই মাসে টানা তিন সপ্তাহের ছুটি পায়—এটি এখানকার সংস্কৃতির অংশ।
ভিয়েনা, অস্ট্রিয়া
শীর্ষস্থান হারালেও স্বাস্থ্যসেবার দিক দিয়ে এখনো সবার উপরে।
নাটালেই ও’কনেল, নিউইয়র্ক থেকে আসা এক যোগাযোগ পরামর্শক বলেন, “আমি এমন মানের জীবনযাপন খুঁজে পেয়েছি, যা অন্য কোথাও সম্ভব নয়।”
শহরের কেন্দ্রেই এক বেডরুম ফ্ল্যাটের ভাড়া মাত্র ৮৫০ ইউরো।
প্রতিদিনের পরিবহন খরচ মাত্র ১ ইউরো—পরিষ্কার, সাশ্রয়ী ও সবার জন্য সহজলভ্য।
জেনেভা, সুইজারল্যান্ড
সুইজারল্যান্ডের এই শহর স্বাস্থ্যসেবা ও অবকাঠামোয় শীর্ষ নম্বর পেয়েছে।
জেমস এফ রয়্যাল, ফ্লোরিডা থেকে আসা লেখক বলেন, “এটা বড় শহরের সব সুবিধা ধরে রেখেও বেশ আরামদায়ক।”
এখানে হেঁটে যাতায়াত করা সহজ, গণপরিবহন নির্ভরযোগ্য এবং ইউরোপের যেকোনো শহরে ট্রেনে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পৌঁছানো যায়।
মেলবোর্ন, অস্ট্রেলিয়া
শিল্প, সংস্কৃতি, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবায় মেলবোর্নের স্কোর খুবই ভালো।
অলিভার মরিসি, একজন আইনজীবী বলেন, “আমার মেয়েকে স্কুল ছুটির পর পার্কে নিয়ে যাওয়া আমার প্রতিদিনের স্বস্তি।”
ক্যাথরিন টুওমিনেন, যিনি বিশ্বের ১০টি শহরে থেকেছেন, বলেন, “মেলবোর্নের বহুসংস্কৃতির পরিবেশ একে বিশেষভাবে বাসযোগ্য করে তোলে।”
সুবিধাজনক ট্রাম ও ট্রেন শহরকে অভ্যন্তরীণ ও উপশহরের সঙ্গে ৫০ মিনিটের মধ্যে সংযুক্ত করে।
ওসাকা, জাপান
এশিয়ার একমাত্র শহর হিসেবে তালিকায় স্থান পেয়েছে ওসাকা।
স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও স্থিতিশীলতায় নিখুঁত স্কোর পেয়েছে এই শহর।
গ্রাহাম হিল ও ডমিনিক ডিজকস্ট্রা বলছেন, ওসাকার সবচেয়ে বড় গুণ হলো সময়ানুবর্তী গণপরিবহন ও টোকিওর মতো ভিড় না থাকা।
ডিজকস্ট্রা বলেন, “মানুষজন বন্ধুত্বপূর্ণ, খাবার চমৎকার, আর শহরের মাঝে যেন একধরনের হাস্যরস ও উষ্ণতা আছে।”
শান্ত পরিবেশ, সাশ্রয়ী জীবনযাপন, উন্নত পরিবহন, স্বাস্থ্যসেবা ও কাজ-জীবনের ভারসাম্য—এই উপাদানগুলোই এখনকার বাসযোগ্য শহরের মানদণ্ড।
কোপেনহেগেন থেকে শুরু করে ওসাকা পর্যন্ত প্রতিটি শহরের নিজস্ব অনন্যতা আছে, কিন্তু একটি জিনিসই তাদের একত্র করে—মানুষের জন্য নিরাপদ, স্বাস্থ্যকর ও আনন্দময় জীবন।