বর্ষার বাংলাদেশ যেন এক অনন্য রূপে ধরা দেয়। পাহাড়ের গায়ে নেমে আসে সবুজ চাদর, জলপ্রপাত ফিরে পায় প্রাণ, হাওর ও সমুদ্র হয়ে ওঠে আরও রহস্যময় ও উদ্দাম। তাই এই মৌসুমে ভ্রমণপিপাসুদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে দেশের পাহাড়, হাওর ও সমুদ্র। তবে বর্ষাকালের প্রকৃতি যেমন সুন্দর, তেমনই চ্যালেঞ্জিংও বটে। নিরাপদ, আনন্দদায়ক ও সচেতন ভ্রমণের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মনে রাখা জরুরি।
নিচে বর্ষায় পাহাড়, হাওর বা সমুদ্র ভ্রমণের আগে যে ১০টি বিষয় অবশ্যই জানা ও মানা উচিত, তা তুলে ধরা হলো:
১. আবহাওয়ার হালনাগাদ তথ্য নিন
বর্ষায় হঠাৎ ভারী বৃষ্টি, বন্যা কিংবা পাহাড়ধসের ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই ভ্রমণের পরিকল্পনার আগে সংশ্লিষ্ট এলাকার আবহাওয়ার পূর্বাভাস, বন্যার অবস্থা এবং ভূমিধসের সতর্কতা সম্পর্কে জেনে নিন।
২. পর্যাপ্ত রেইনগিয়ার ও শুকনো কাপড় রাখুন
সঙ্গে রাখুন রেইনকোট, ছাতা ও সহজে শুকিয়ে যায় এমন পোশাক। পানিতে ভিজে গেলে যেন দ্রুত পোশাক বদলানো যায়, সে ব্যবস্থা রাখুন।
৩. পাহাড়ি পথের জন্য উপযুক্ত জুতা ব্যবহার করুন
পাহাড়ি এলাকায় হাঁটতে হলে এমন জুতা পরুন, যা পিচ্ছিল ও পাথুরে পথে সাপোর্ট দেয় এবং পা সুরক্ষিত রাখে।
৪. স্থানীয় গাইডের সহায়তা নিন
গহিন পাহাড়ে ভ্রমণের সময় অভিজ্ঞ স্থানীয় গাইড নিন। তাঁরা সঠিক পথ দেখাতে ও বিপদ থেকে রক্ষা করতে সহায়ক হবেন।
৫. জোঁকের থেকে সতর্ক থাকুন
বর্ষায় পাহাড়ে জোঁকের দেখা পাওয়া সাধারণ বিষয়। মোজার ভেতর প্যান্ট বা পায়জামা গুঁজে নিলে কিছুটা সুরক্ষা পাওয়া যায়। জোঁক ধরলে সরানোর জন্য সঙ্গে শক্ত কাগজ বা লবণ রাখতে পারেন।
৬. সৈকতে সতর্কতা মেনে চলুন
সমুদ্র সৈকতে লাল নিশান চিহ্নিত জায়গায় কোনোভাবেই গোসল করবেন না। সাঁতার না জানলে পানিতে নামার সময় অবশ্যই লাইফ জ্যাকেট ব্যবহার করুন এবং লাইফগার্ডের নির্দেশনা মেনে চলুন।
৭. জলপ্রপাতে অতিরিক্ত ঝুঁকি নেবেন না
বর্ষায় জলপ্রপাতের পাথর ও ঢাল পিচ্ছিল থাকে। ওপরের দিকে ওঠার চেষ্টা বা কূপে নামা বিপজ্জনক হতে পারে। সামান্য ভুলে ঘটে যেতে পারে বড় দুর্ঘটনা।
৮. মশা ও ওষুধের প্রস্তুতি নিন
রাতযাপনের জায়গায় মশারির ব্যবস্থা আছে কি না নিশ্চিত হোন। মশা তাড়ানোর ক্রিম বা স্প্রে সঙ্গে রাখুন। সাধারণ জ্বর-সর্দি বা পেটের সমস্যা হলে ব্যবহারের জন্য প্যারাসিটামলসহ প্রয়োজনীয় ওষুধ সঙ্গে রাখুন।
৯. টাঙ্গুয়ার হাওরে নিয়ম মেনে চলুন
হাওরে ভ্রমণের সময় হাউসবোটে পর্যাপ্ত লাইফ জ্যাকেট আছে কি না দেখে নিন। প্লাস্টিকের পণ্য ব্যবহার ও উচ্চ শব্দে গান বাজনা থেকে বিরত থাকুন। পাখি, মাছ বা ডিম সংগ্রহ একেবারেই নিষেধ। সংরক্ষিত কোর জোনে প্রবেশ করবেন না।
১০. প্রকৃতির প্রতি সম্মান দেখান
আপনার ভ্রমণ যেন প্রকৃতি ও স্থানীয় জীববৈচিত্র্যের জন্য হুমকি না হয়ে দাঁড়ায়। স্থানীয় সংস্কৃতি ও পরিবেশের প্রতি সম্মান জানিয়ে ভ্রমণ করুন। নিরাপদ ভ্রমণই সুখকর ভ্রমণ।