গরমে হাঁটতে হাঁটতে পিপাসা লাগলেই আমরা হাত বাড়াই বোতলজাত পানির দিকে। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের এসব পানি দেখে মনে হয় একেবারে বিশুদ্ধ—নিরাপদ। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। গবেষণা বলছে, এই বোতলজাত পানিতে রয়েছে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণা, যা আমাদের শরীরের জন্য হতে পারে মারাত্মক ক্ষতিকর।
কী আছে বোতলজাত পানিতে?
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গবেষণায় দেখা গেছে, বোতলজাত পানিতে মাইক্রো এবং ন্যানোপ্লাস্টিক কণার উপস্থিতি আছে।
মাইক্রোপ্লাস্টিক : যার আকার ৫ মিলিমিটার থেকে ১ মাইক্রোমিটার পর্যন্ত।
ন্যানোপ্লাস্টিক : আকার এত ক্ষুদ্র যে এটি মানুষের চুলের গড় প্রস্থের এক হাজার ভাগের এক ভাগ।
এই ক্ষুদ্র কণাগুলো শরীরে প্রবেশ করে রক্তপ্রবাহের সঙ্গে মিশে যায় এবং কোষে কোষে পৌঁছে যেতে পারে, যা শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের ওপর প্রভাব ফেলে।
ভয়াবহ সংখ্যার কণা!
একটি গবেষণায় দেখা গেছে, এক লিটার বোতলজাত পানিতে গড়ে ২ লাখ ৪০ হাজার প্লাস্টিক কণা পাওয়া যায়। এর মধ্যে ৯০ শতাংশই ন্যানোপ্লাস্টিক।
২০২৪ সালের জানুয়ারিতে প্রকাশিত যুক্তরাষ্ট্রের এক গবেষণায় জানা যায়, সেখানকার তিনটি জনপ্রিয় ব্র্যান্ডের পানিতে প্রতি লিটারে ১ লাখ ১০ হাজার থেকে ৩ লাখ ৭০ হাজার ন্যানোপ্লাস্টিক কণা রয়েছে!
কোথা থেকে আসে এই প্লাস্টিক?
এই কণাগুলোর উৎস শুধু বোতলের উপাদান (যেমন পলিথিন টেরেফথালেট) নয়।
* বোতলের মুখ বারবার খোলা-বন্ধ করার সময়
* তাপ বা চাপে
* বা পানির উৎস থেকেই
* এই প্লাস্টিক কণা পানির সঙ্গে মিশে যেতে পারে।
শরীরের ওপর প্রভাব
বিশেষজ্ঞদের মতে, ন্যানোপ্লাস্টিক শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। কারণ:
এটি ফুসফুস, কিডনি, লিভার ও মস্তিষ্কে পৌঁছাতে পারে
এমনকি গর্ভস্থ শিশুর কাছেও এই কণা পৌঁছার আশঙ্কা রয়েছে
এক গবেষণায় দেখা গেছে, গর্ভবতী ইঁদুর ন্যানোপ্লাস্টিক গ্রহণ করলে মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সেই কণা সন্তানের হৃদপিণ্ড, মস্তিষ্ক, কিডনি, লিভার ও ফুসফুসে পৌঁছে যায়।
মানুষের শরীরেও মিলেছে প্লাস্টিক!
বিভিন্ন গবেষণায় মানুষের রক্ত, ফুসফুসের টিস্যু এবং মলে মাইক্রো ও ন্যানোপ্লাস্টিক কণা পাওয়া গেছে।
একটি উন্নত প্রযুক্তি বর্তমানে সাত ধরনের প্লাস্টিক শনাক্ত করতে সক্ষম, যেমন: পলিমাইড, পলিপ্রোপিলিন, পলিথিন, পলিভিনাইল ক্লোরাইড, পলিস্টাইরিন, পলিমিথাইল মেথাক্রাইলেট, পলিথিন টেরেফথালেট।
কী করা উচিত?
গবেষণার ফলাফল পরিষ্কারভাবে বলছে—প্লাস্টিক কণা শরীরের ক্ষতি করে। তাই সতর্ক হওয়ার এখনই সময়।
- সম্ভব হলে বোতলজাত পানির বদলে ফিল্টারকৃত পানি ব্যবহার করুন
- বাইরে বের হলে নিজের স্টেইনলেস স্টিল বা গ্লাস বোতলে পানি বহন করুন
- অপ্রয়োজনে প্লাস্টিকের ব্যবহার কমিয়ে আনুন