পুষ্টি ও ত্বকের স্বাস্থ্য নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদন
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অনেকেই ভাবেন, ব্রণের সমস্যা কিশোর বয়সেই সীমাবদ্ধ থাকে। কিন্তু বাস্তবতা হলো—অনেক প্রাপ্তবয়স্কও নিয়মিত এই ত্বক সমস্যা ভোগেন। হরমোনের পরিবর্তন, বংশগত প্রভাব ছাড়াও খাদ্যাভ্যাস হতে পারে এর বড় একটি কারণ।
যুক্তরাষ্ট্রের খ্যাতনামা ত্বক বিশেষজ্ঞ ডা. করণ লাল ও ডা. এমিলি উড ইট দিস, নট দ্যাট নামক এক প্রতিবেদনে এমন কিছু খাবারের কথা উল্লেখ করেছেন, যেগুলো নিয়মিত খেলে প্রাপ্তবয়স্কদের ব্রণের সমস্যা বাড়তে পারে।
ওট মিল্ক (ওট দুধ)
সাধারণ দুধের বিকল্প হিসেবে অনেকেই ওট দুধ পান করেন, বিশেষ করে যারা দুগ্ধজাত খাবারে অ্যালার্জি বা ল্যাকটোজ ইনটলারেন্সে ভোগেন। তবে ওট দুধে উচ্চমাত্রার শর্করা থাকে যা রক্তে ইনসুলিনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। ইনসুলিন হরমোন ভারসাম্যে বিঘ্ন ঘটায় এবং ত্বকে তৈলাক্ততা বাড়িয়ে তোলে—যা ব্রণের সম্ভাবনা বাড়ায়।
ছেঁকে তৈরি প্রোটিন (প্রোটিন পাউডার)
ডায়েট বা শরীরচর্চার অংশ হিসেবে অনেকে ছেঁকে তৈরি প্রোটিন গ্রহণ করেন। তবে এতে থাকা IGF-1 নামক উপাদান অ্যান্ড্রোজেন হরমোন সক্রিয় করে, যা ত্বকে অতিরিক্ত কোষ উৎপন্ন করে এবং রন্ধ্র বন্ধ করে দেয়—ফলে সৃষ্টি হয় ব্রণ।
উচ্চ গ্লাইসেমিক সূচকযুক্ত খাবার
সাদা ভাত, সাদা পাউরুটি, বিস্কুট, মিষ্টি, কোমল পানীয়—এসব খাবার রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বাড়িয়ে তোলে, যার ফলে ত্বকে প্রদাহ এবং তৈলাক্ততা বেড়ে যায়। বিশেষজ্ঞরা বলেন, পরিশোধিত চিনি ব্রণের জন্য আদর্শ পরিবেশ তৈরি করে। এর বদলে ফলমূল বা প্রাকৃতিক চিনি গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হয়।
ভিটামিন বি-৬ ও বি-১২ সাপ্লিমেন্ট
শরীরে শক্তি জোগাতে বা রক্ত তৈরিতে অনেকে বি কমপ্লেক্স সাপ্লিমেন্ট নেন। তবে ডা. উডের মতে, এই ভিটামিন ত্বকের জীবাণু ভারসাম্য পরিবর্তন করে এবং Propionibacterium acnes নামক জীবাণুকে সক্রিয় করে তোলে—যা ব্রণের অন্যতম কারণ।
অতিরিক্ত আয়োডিনযুক্ত খাবার ও পানীয়
সামুদ্রিক শৈবাল বা কেল্পজাত সাপ্লিমেন্ট, ত্বক ভালো করার দাবি করা স্মুদি বা পানীয়তে উচ্চমাত্রায় আয়োডিন থাকতে পারে। যদিও আয়োডিন কীভাবে ব্রণ সৃষ্টি করে তা স্পষ্ট নয়, তবে ধারণা করা হয় এটি প্রদাহ সৃষ্টি করে ও ত্বক তৈলাক্ত করে তোলে।
স্কিম দুধ বা চর্বিহীন দুধ
ওজন নিয়ন্ত্রণের জন্য স্কিম দুধ অনেকেই বেছে নেন, কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে এতে ব্রণের প্রবণতা বেড়ে যায়। কারণ এতে ইনসুলিন বৃদ্ধিকারী উপাদান ও নির্দিষ্ট হরমোন থাকে। চাইলে বাদাম দুধ বা সম্পূর্ণ চর্বিযুক্ত দুধ বেছে নেওয়া যেতে পারে।
সয়া প্রোটিন
নিরামিষভোজীদের পুষ্টির উৎস হিসেবে সয়া প্রোটিন অত্যন্ত জনপ্রিয়। তবে অতিরিক্ত সয়া গ্রহণ হরমোনে প্রভাব ফেলে এবং কিছু মানুষের ক্ষেত্রে ব্রণ বাড়িয়ে তোলে। সয়াকে পুরোপুরি বাদ না দিয়ে পরিমিত পরিমাণে খাওয়ার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।
ত্বকের সৌন্দর্য শুধু বাহ্যিক যত্নের ওপর নির্ভর করে না, খাদ্যাভ্যাসও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই ব্রণের সমস্যা থাকলে কী খাচ্ছেন, তা নিয়ে সচেতন হওয়া জরুরি। সঠিক খাবার নির্বাচনের মাধ্যমে আপনি পেতে পারেন স্বাভাবিক, স্বাস্থ্যোজ্জ্বল ত্বক।