মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও পাল্টা শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন। সোমবার তিনি নতুন করে ১৪টি দেশের পর আরও সাতটি দেশকে চিঠি পাঠিয়ে সতর্ক করেছেন—যদি ১ আগস্টের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তিতে না আসে, তাহলে তাদের ওপর নতুন শুল্ক আরোপ করা হবে।
এই হুমকির পর বিশ্বজুড়ে সংশ্লিষ্ট দেশগুলো নিজেদের বাণিজ্যিক স্বার্থ রক্ষায় সক্রিয় হয়েছে। তবে আশ্চর্যের বিষয় হলো, এর আগে যেমন চীন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা কানাডা পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছিল, এবার কেউই তেমন কিছু করেনি। সবাই কৌশলে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছে।
বাজারের মৃদু প্রতিক্রিয়া
ট্রাম্পের ঘোষণার পর ওয়াল স্ট্রিটে সূচকের সাময়িক পতন হলেও তা দ্রুত কাটিয়ে ওঠে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, বাজার এখন ট্রাম্পের এমন হুমকিকে খুব বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে না। ট্রাম্প আগেও একাধিকবার শুল্ক আরোপের কথা বললেও বাস্তবায়ন পিছিয়েছেন। ফলে এই হুমকি এখন অনেকের চোখে রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টির কৌশল মাত্র।
আইজি অস্ট্রেলিয়ার বাজার বিশ্লেষক টনি সাইকামোর ভাষায়, এই ঘোষণা অনেকটা ভূমিকম্প-পরবর্তী কম্পনের মতো—যার জন্য বাজার আগেই প্রস্তুত ছিল। তাই এবার তেমন কোনো বড় প্রভাব পড়েনি।
দেশগুলোর কূটনৈতিক অবস্থান
যেসব দেশ চিঠি পেয়েছে, তারা ট্রাম্পের সময়সীমা বাড়ানোর সিদ্ধান্তকে ইতিবাচকভাবে নিয়েছে। জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা জানান, যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্তে তারা হতাশ হলেও আলোচনা চালিয়ে যেতে আগ্রহী। দক্ষিণ কোরিয়াও জানায়, তারা বাজার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে এবং প্রয়োজন হলে দ্রুত পদক্ষেপ নেবে।
তবে কিছু সিদ্ধান্ত বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। যেমন, থাইল্যান্ডের রাজাকে ট্রাম্পের শুল্ক হুমকি দিয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে, যদিও তাঁর কোনো নির্বাহী ক্ষমতা নেই। এই ধরনের ঘটনা ট্রাম্প প্রশাসনের বাণিজ্য কৌশলকে অগোছালো ও অপরিপক্ব বলে প্রমাণ করে।
বিশ্বজুড়ে প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া
বহু দেশ এখন যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক হুমকি থেকে নিজেদের অর্থনীতি রক্ষায় উদ্যোগ নিচ্ছে। তবে কেউই ট্রাম্পের শুল্কনীতি অনুসরণ করছে না। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো, যাদের মধ্যে অনেকেই বিশ্ববাণিজ্যে গুরুত্বপূর্ণ, তারা পরিস্থিতি সামলাতে লক্ষ্যভিত্তিক ও স্বল্পমেয়াদি ব্যবস্থা নিচ্ছে—দীর্ঘমেয়াদি নীতিগত পরিবর্তন নয়।
চীন ইতিমধ্যে এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে বৈশ্বিক প্রযুক্তি বিনিয়োগ ও রপ্তানি বৃদ্ধির চেষ্টা করছে। যুক্তরাষ্ট্র যখন পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি থেকে সরে আসছে, চীন তখন এ খাতে আধিপত্য প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে যাচ্ছে।
দুইটি বড় ঘাটতি
বিশ্লেষকেরা বলছেন, এই পরিস্থিতির মধ্যে দুটি বড় ঘাটতি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে:
১. এখনো ট্রাম্পবিরোধী কোনো সমন্বিত ও ইতিবাচক বাণিজ্য নীতি গড়ে ওঠেনি।
২. বড় বড় বহুজাতিক কোম্পানি তাদের সরবরাহ ব্যবস্থা পুনর্গঠনের বিষয়ে স্থায়ী সিদ্ধান্ত নেয়নি।
তবে যদি যুক্তরাষ্ট্রের নীতিগত অনিশ্চয়তা বাড়ে, তাহলে কোম্পানিগুলো নতুন করে ভাবতে বাধ্য হবে।