লন্ডনে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ঐতিহাসিক বৈঠকের পর প্রকাশিত যৌথ বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হলে ২০২৬ সালের রমজানের আগেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে।
লন্ডনের সময় সকাল ৯টায় (বাংলাদেশ সময় দুপুর ২টা) পার্ক লেনের হোটেল ডোরচেস্টারে শুরু হয় এই বহু প্রতীক্ষিত বৈঠক। শুরুতেই পরিচিতির পর্বের পর রুদ্ধদ্বার আলোচনায় অংশ নেন ইউনূস ও তারেক। প্রায় দেড় ঘণ্টার বৈঠক শেষে একে একে যুক্ত হন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান ও বিএনপি নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
যৌথ বিবৃতির মূল বার্তা
বৈঠক শেষে দেয়া যৌথ লিখিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে,
“জনাব তারেক রহমান আগামী বছরের রমজানের আগেই নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তাব দেন। প্রধান উপদেষ্টা জানান, এপ্রিলের প্রথমার্ধে নির্বাচন সম্ভব—যদি সংস্কার ও বিচারসংক্রান্ত পর্যাপ্ত অগ্রগতি অর্জিত হয়।”
দুই পক্ষই জানায়, আলোচনা হয়েছে “অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে” এবং তারা বৈঠকের ফলাফল নিয়ে “সন্তুষ্ট”।
সংবাদ সম্মেলনে কী জানানো হলো?
বাংলাদেশ সময় বিকেল ৪টায় (লন্ডন সময় সকাল ১১টা) অনুষ্ঠিত হয় যৌথ সংবাদ সম্মেলন। সরকারের পক্ষে ছিলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান, আর বিএনপির পক্ষে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। সঞ্চালনায় ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
খলিলুর রহমান জানান,
“নির্বাচনের ব্যাপারে আমরা কোনো সমস্যা দেখছি না। নির্বাচন কমিশনকে তারিখ ঘোষণার জন্য আমরা প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।”
খসরু বলেন,
“নির্বাচনের আগে ও পরে দেশ গঠনের বিষয়টি আমরা গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করছি। ঐকমত্য ভিত্তিতে সংস্কার চলবে।”
তিনি আরও বলেন, “তারেক রহমান নিজ ইচ্ছাতেই দেশে ফিরতে পারবেন; এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত একান্তই তার।”
জুলাই সনদ ও এনসিপির অবস্থান
জুলাই সনদের প্রসঙ্গে খসরু বলেন,
“ঐকমত্যের ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত হবে। আমরা খুব দ্রুত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারবো বলে বিশ্বাস করি।”
এদিকে এনসিপির নির্বাচন কমিশন সংস্কার ছাড়া নির্বাচনে না যাওয়ার বিষয়ে খলিলুর রহমান জানান,
“সব দলের মতামত আছে, তবে আমরা চাই সবাইকে নিয়ে নির্বাচন হোক।”
বৈঠক কেন গুরুত্বপূর্ণ?
এই বৈঠকটি এমন সময় হলো যখন ডিসেম্বরের নির্বাচন ঘিরে সরকার ও বিএনপির মধ্যে ব্যাপক মতপার্থক্য বিদ্যমান। ৬ জুন জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে অধ্যাপক ইউনূস নির্বাচন রূপরেখা উপস্থাপন করেন। এর প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি কড়া অবস্থান নেয় এবং আন্দোলনের হুমকি দেয়। এমন অবস্থায় লন্ডনে এই বৈঠক অনেকের চোখে একটি ‘টার্নিং পয়েন্ট’ হিসেবে ধরা পড়ছে।
পরবর্তী করণীয় কী?
সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বিচার ও সংস্কার সংক্রান্ত পদক্ষেপগুলো যদি যথাসময়ে সম্পন্ন হয়, তবে এপ্রিলের মধ্যেই নির্বাচন সম্ভব। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, নির্বাচন নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে চলা অনিশ্চয়তা হয়তো এখন একটি বাস্তবসম্মত সময়সীমা ও রূপরেখা পাচ্ছে।
নির্বাচন আয়োজনের সম্ভাব্য সময় হিসেবে ২০২৬ সালের রমজানের আগের সপ্তাহের কথা বলা হলেও, তা নির্ভর করছে সংস্কার ও বিচার-সংক্রান্ত কার্যক্রমের অগ্রগতির উপর।