ছোট্ট বন্ধুরা, তোমরা নিশ্চয়ই মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের নাম শুনেছ? বাংলা সাহিত্যে তিনিই প্রথম সার্থক মহাকাব্য রচয়িতা। বাংলায় চতুর্দশপদী কবিতা বা সনেটও তিনিই প্রথম লিখেছেন। ছোটবেলায় প্রচলিত গানের সুর ঠিক রেখে বাক্য পরিবর্তন করে গেয়ে ও বানিয়ে বানিয়ে গল্প বলে সবাইকে অবাক করে দিতেন মধুসূদন দত্ত। বালক বয়সেই স্কুলের বন্ধুদের নিয়ে একটি হাতে লেখা সংবাদপত্র প্রকাশ করেছিলেন তিনি। তোমরাও কিন্তু তোমাদের বন্ধুদের নিয়ে এমন কিছু করতে পারো।
তুমি কয়টি ভাষায় কথা বলতে জানো? মধুসূদন দত্ত বাংলা, ইংরেজি, সংস্কৃত, আরবি, ফারসি, জার্মান, হিব্রু ইত্যাদি সহ বারোটি ভাষায় কথা বলতে পারতেন। সাহিত্যের প্রতি ছিল তার তীব্র ঝোঁক। মাত্র দশ বছর বয়সেই ইংরেজি সাহিত্যের বড় বড় বইগুলো পড়ে ফেলেছিলেন তিনি।
মাইকেল মধুসূদন দত্তের বাবা ছিলেন জমিদার। তোমাদের মতো বয়সেই মধুসূদন বেশ উচ্চবিলাসী ও সৌখিন স্বভাবের ছিলেন। সুদূর ফ্রান্স থেকে জামা ইস্ত্রি করিয়ে এনে পরতেন। ঘোড়ার গাড়িতে চড়ে কোথাও গিয়ে গাড়ি চালককে তিন-চারগুণ বেশি ভাড়া দিয়ে বলতেন, ‘রাজনারায়ণ দত্তের ছেলে কাউকে গুনে টাকা দেয় না।’
এই গুনে টাকা না দেওয়া ছেলেটা বড় হয়ে পড়ল চরম দারিদ্র্যে। হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ করায় তার জমিদার বাবা তাকে ত্যাজ্যপুত্র করেছিল। বাবার টাকা-পয়সা, অর্থ-সম্পদ থেকে বঞ্চিত হয়েছিলেন তিনি। মাইকেল মধুসূদন দত্ত তার জীবন থেকে প্রাপ্ত দর্শন নিংড়ে বলেছিলেন, ‘যৌবনে অন্যায় ব্যয়, বয়সে কাঙ্গাল’, অর্থাৎ নিয়ম না মেনে অতিরিক্ত খরচ করতে থাকলে একসময় গরিব হয়ে যেতে হয়।
তোমরা কি জানো, গ্রাম থেকে কলকাতা শহরে যাবার পথে একটি ছেলে পথের পাশের মাইলফলক দেখে ইংরেজি ওয়ান থেকে টেন সংখ্যাগুলো শিখে ফেলেছিল। ছেলেটির নাম ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, বড় হয়ে যে হলো বাংলা গদ্যের জনক। ছোটবেলা থেকেই জ্ঞান অর্জনের প্রতি ঈশ্বরচন্দ্রের তীব্র আগ্রহ ছিল। টেবিলে বসে রাত জেগে পড়ার জন্য তিনি মাথার চুল সিলিং এর সাথে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখতেন। উদ্দেশ্য, ঘুম ধরলে চুলে টান পড়লে জেগে উঠবেন। তোমরা ঘুম তাড়ানোর জন্য কী কী পদ্ধতি অবলম্বন করো?
কলকাতার স্কুলে পড়াশোনার সময় ঈশ্বরচন্দ্র ভালো রেজাল্ট করে বৃত্তি পেয়ে সেই টাকায় কিছু কাপড়-চোপড় কিনে গ্রামের গরিব-দুঃখিদের দান করেছিলেন। তুমি এমন বৃত্তি পেলে কী করতে? উনিশ বছর বয়সে হিন্দু ‘ল’ কমিটির পরীক্ষায় অসাধারণ মেধার পরিচয় দেন বলে ঈশ্বরচন্দ্রের নামের সাথে বিদ্যাসাগর যুক্ত হয়।
মা বাবাকে কতটুকু মূল্য দাও তোমরা? ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর অসুস্থ মাকে দেখতে দামোদর নদী সাঁতরে পাড়ি দিয়ে শহর থেকে গ্রামে মায়ের কাছে চলে এসেছিলেন। একরাতে পায়ে হেঁটে পনেরো মাইল দূরে গিয়ে মায়ের জন্য কবিরাজের কাছ থেকে ওষুধ নিয়ে এসেছিলেন তিনি।
নারী জাতির প্রতি ছিল তাঁর সীমাহীন শ্রদ্ধা। সেই যুগে স্বামীর মৃত্যুতে স্ত্রীকে স্বামীর সাথে একই চিতায় পুড়িয়ে মারার নিয়ম ছিল। এই নিয়মকে বলা হতো ‘সতীদাহ প্রথা’। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর এই অমানবিক প্রথার বিরোধী ছিলেন এবং এই প্রথা বন্ধ করার জন্য আইন তৈরি করেছিলেন। বড় হয়ে তোমাদেরও কিন্তু সমাজের প্রচলিত অসংগতিপূর্ণ অমানবিক প্রথাগুলোর বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে।