জাবির গোপনে গোপনে আম্মুর ঘরে ঢুকে একটা বৈয়াম খুঁজে। জাবিরের আচার খুব পছন্দ। কিন্তু জাবির আচারের বৈয়াম খুঁজে না। জাবিরের গুড় পছন্দ। কিন্তু সে গুড়ের বৈয়ামও খুঁজে না। সে খুঁজে ভূতের বৈয়াম। অবাক হচ্ছো? ভূত আবার বৈয়ামে থাকে না কি! তোমার ভাবনা ঠিকই আছে। ভূত তো আর বৈয়ামে থাকে না। তবুও জাবির ভূতের বৈয়ামই খুঁজে। কারণ ওর আম্মু একটা ভূতকে বৈয়ামে আটকে রেখেছে। সেই ভূত দিয়ে জাবিরকে শায়েস্তা করবে।
শায়েস্তা কখন করা হয় জানো? যখন কেউ অপরাধ করে। জাবিরের অনেকগুলো অপরাধ লিস্ট করা আছে। সেই লিস্টটার কথা বলি।
জাবির প্রতিদিন দেরি করে ঘুমোতে যায়। সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠে না। সূর্যি মামা জাগার পরে তার ঘুম ভাঙে। ঘুম থেকে উঠে দাঁত ব্রাশ করতে চায় না। ঘুমানোর আগে রাতে দাঁত ব্রাশ করতে চায় না। জাবির পড়াশোনা করতে চায় না। সারাদিন শুধু কার্টুন কার্টুন করে। দাদা-দাদির কথা শোনে না। ভাত খেতে চায় না। শুধু চিপস খেতে চায়। দাদি বলে চিপস খেলে খাবার রুচি নষ্ট হয়ে যায়। পেটের অসুখ করে। কিন্তু কোনো কথাই ও শোনে না। সারাদিন একে খামচি দেবে ওকে খামচি দেবে। কখনো কখনো কামড়েও দেয়।
এত যন্ত্রণা সহ্য করা যায়! তাই ওকে শায়েস্তা করার জন্য আম্মু একটা ভূত ধরে নিয়ে এসেছে। সেটাকে আটকে রেখেছে বৈয়ামে। গোপনে গোপনে সেই বৈয়ামটাই খুঁজে জাবির।
জাবির কিভাবে বুঝল আম্মু একটা ভূত ধরে নিয়ে এসেছে? সে কথা বলি। কয়েকদিন আগের কথা। জাবির পড়া না পড়ে দুষ্টুমি করছিল। পাশের ঘর থেকে আম্মু শব্দ করে বলল, ‘চুপ চুপ! একদম চিল্লাবি না।’
এই শুনে জাবির স্থির হয়ে গেল। ভাবল আম্মু আবার কার সাথে এভাবে কথা বলে। আম্মুর ঘরে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিবে এমন সময় ফিস্ ফিস্ আওয়াজ কানে আসলো জাবিরের।
আম্মু ফিস ফিস করে বলল, ‘তুই শব্দ করলে তো জাবির টের পেয়ে যাবে। টের পেলে তো জাবির ভয়ে কুঁকড়িয়ে যাবে। আমি চাই না জাবির ভয়ে কুঁকড়িয়ে যাক। তবে…’
আম্মুর ফিসফিসানি থেমে গেল। তবে বলার পর আম্মু কী বলবে তা জানার জন্য ব্যাকুল হয়ে গেল। যে কারণে আড়ি পাতলো। কান লাগিয়ে রাখল আম্মু ঘরের দেয়ালে। জাবির শুনতে পেল আম্মু ফিসফিস করে আবার বলছে, ‘এখন ভয় দেখানো যাবে না। আর দু-এক দিন দেখব। যদি সবার কথা ঠিকমতো শোনে। যদি ঠিকমতো পড়াশোনা করে। তবে তোমাকে যেখান থেকে ধরে নিয়ে এসেছি সেখানে ছেড়ে দিয়ে আসব। আর যদি…’ আবার থেমে গেল আম্মু।
কাকে ধরে নিয়ে এসেছে আম্মু? আমাকে শায়েস্তা করার জন্য। ভাবে জাবির।
একটু পর আবার শোনা গেল, ‘যদি ঠিকমতো কিছুই না করে তবে তোমাকে লেলিয়ে দেব ওর পেছনে। বুঝেছো ভূত বাবু? আপাতত বৈয়ামে আটকে থাকো। এই বৈয়ামের ঢাকনা লাগালাম।’ বলেই ফিসফিসানি থেমে গেল। আম্মু তাহলে ভূত ধরে নিয়ে এসেছে। শুনে চমকে উঠল ও। খুব ভয়ও পেল। আর আম্মুর ঘরে যায়নি।
আম্মু যে একটা ভূত ধরে নিয়ে এসে বৈয়ামে আটকে রেখেছে ঠিক সেদিনই জানা হয়েছে। তবে তারপর থেকে জেনেও না জানার ভান করে ছিল। যদিও ভয়ে ভয়ে পরপর দুদিন আম্মুর ঘরে যায়নি।
তবে ও মাঝে মাঝে নিজেকেই বলে, ভয় করলে কী হবে? সাহস বাড়াতে হবে। তারপর ভয়কে জয় করার জন্য একটু সাহস জুগিয়ে গোপনে গোপনে সেই বৈয়ামটা খুঁজতে যায় ও। ভাবে বৈয়ামে যদি ভূত থাকে তবে তো সেটায় ঢাকনা লাগানো আছে। চাইলেই তো ভূতটা বের হতে পারবে না। খুঁজে দেখি ভূতটা কেমন। কিন্তু কোনোভাবেই বৈয়ামটা খুঁজে পায় না ও।
আম্মু একদিন আব্বুকেও বলল, ‘তুমি যেন আবার বৈয়াম থেকে ভূতটাকে বাইরে ফেলায় দিয়ো না। জাবির আমাদের কথা না শুনলে সত্যি সত্যি কিন্তু এই ভূতটাকে ওর ঘরে ছেড়ে দিয়ে আসব।’
জাবির শুনে আবার ভয় পেল। ভাবল দাদাকে অভিযোগ করবে। দাদা জাবিরকে খুব ভালোবাসে। পরক্ষণে ভাবল না থাক। তারচেয়ে আমি নিয়মিত পড়াশোনা করি। ভালোমতো চলি। সবার কথা শুনি।
যেমন ভাবা তেমন কাজ শুরু করল জাবির। ও এখন রাতে প্রতিদিন তাড়াতাড়ি ঘুমোতে যায়। সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠে। সূর্যি মামা জাগার আগে ঘুম থেকে উঠে দাঁত ব্রাশ করে। ঘুমানোর আগেও রাতে দাঁত ব্রাশ করে। নিয়মিত পড়াশোনা করে। কার্টুন দেখে। তবে সারাদিন শুধু কার্টুন কার্টুন করে না। দাদা-দাদির কথা শোনে। ভাত খায়। ফলমূল খায়। চিপস আর খেতে চায় না। আর কাউকে খামচিও দেয় না। মোটামুটি ভালো একটা ছেলে হয়ে গেল।
ভালো ছেলেকে সবাই ভালোবাসে। জাবিরকে সবাই ভালোবাসতে শুরু করল।
তাহলে বৈয়ামে আটকে থাকা ভূতটার কী হলো? জাবির সেই বৈয়ামে আটকে থাকা ভূতটার কথা ভুলে গেল। মনে পড়ে গেল সেদিন আবার আম্মুর ফিসফিসানি শুনে। জাবির সন্ধ্যায় পড়তে বসেছিল। মুখস্ত করা ক্লাস টু-এর কবিতা ‘আমাদের দেশটা’ খাতায় লিখছিল। এমন সময় আম্মু ফিসফিস করে বলল, ‘অ্যাই ভূত বাবু শোনো, তোমাকে কিন্তু শিগগিরই ছুটি দিয়ে দেব। জাবির এখন অনেক ভালো হয়ে গেছে।’
জাবির শুনে তো খুব খুশি। কিন্তু ভূতটাকে তো দেখা হলো না। ভূতটা কেমন ছিল। আম্মু ওটাকে ছেড়ে দেয়ার আগে খুঁজে বের করে দেখতে হবে।
আম্মু সকালবেলা রান্নাঘরে ব্যস্ত থাকে। সকাল সকাল উঠেই গোপনে গোপনে আবার আম্মুর ঘরে ঢুকল জাবির। এবার খুব সহজে মায়ের আলমিরা থেকে খুঁজে পেল সেই বৈয়াম। লাল কাপড় দিয়ে মোড়ানো। সাহস করে মোড়ানো কাপড়টা খুলতেই দেখতে পেল বৈয়ামটা। কিন্তু একি! বৈয়ামের ভেতরে ভূত কোথায়? এ তো বৈয়াম ভর্তি চকলেট। সত্যি সত্যি কী এই বৈয়ামে ভূত ছিল? নাকি ভূতটাই চকলেট হয়ে গেল!