মালিকপক্ষ ও কর্মকর্তাদের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ, গ্রাহক-এজেন্সিগুলোর অনিশ্চয়তা
নিজস্ব প্রতিবেদক
দেশের অন্যতম অনলাইন টিকিট বুকিং প্ল্যাটফর্ম ‘ফ্লাইট এক্সপার্ট’-এর ওয়েবসাইট হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন শত শত গ্রাহক ও ট্রাভেল এজেন্সি। অগ্রিম টিকিট বুকিংয়ের বিপরীতে বিপুল পরিমাণ অর্থ পরিশোধ করা হলেও হঠাৎ প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সেই টাকা ফেরত পাওয়ার নিশ্চয়তা মিলছে না।
শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর মতিঝিলে ফ্লাইট এক্সপার্টের কার্যালয়ে ভিড় করেন অসংখ্য গ্রাহক ও টিকিট সরবরাহকারী এজেন্সির প্রতিনিধি। উপস্থিত অনেকেই ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেন। ইউনিয়ন ট্রাভেলস নামের একটি এজেন্সির মালিক কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “সব শেষ, ভাই। আমার ২৫–৩০ লাখ টাকা ডুবে গেছে।”
২০১৭ সালের মার্চে যাত্রা শুরু করা ফ্লাইট এক্সপার্ট দ্রুতই জনপ্রিয়তা পায় দেশি-বিদেশি এয়ারলাইন্সের টিকিট বুকিং, হোটেল রিজার্ভেশন, ট্যুর প্যাকেজ ও ভিসা প্রক্রিয়াকরণের সেবা দিয়ে। তবে অভিযোগ রয়েছে, প্রতিষ্ঠানটি সরাসরি এয়ারলাইন্সের কাছ থেকে নয়, দুটি মধ্যস্থতাকারী এজেন্সির মাধ্যমে টিকিট সংগ্রহ করত। এখন সেই দুটি এজেন্সি টিকিট রিফান্ড করে টাকা তুলে নিচ্ছে বলে দাবি অনেকের।
অভ্যন্তরীণ একটি ফেসবুক গ্রুপে ফ্লাইট এক্সপার্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সালমান বিন রশিদের একটি বার্তার স্ক্রিনশট ছড়িয়ে পড়েছে। সেখানে তিনি দাবি করেন, প্রতিষ্ঠানের দুই কর্মকর্তা তিন কোটি টাকা তুলে নিয়ে তাঁকে ফাঁসিয়েছেন। নিজেকে হুমকি ও অপবাদ থেকে রক্ষায় প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে বিদেশে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে উল্লেখ করেন তিনি।
তবে যোগাযোগ করলে সালমান পালানোর অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, “ক্রেতারা টাকা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই টিকিট পেতেন। পালানোর সুযোগ নেই। বরং সাঈদ আহমেদ ইচ্ছাকৃতভাবে সরবরাহকারীদের টিকিট রিফান্ড করতে বলে প্রতিষ্ঠানকে বিপদে ফেলেছেন।”
অন্যদিকে, প্রতিষ্ঠানটির হেড অব কমার্শিয়াল সাঈদ আহমেদ বলেন, মালিকপক্ষই কোটি কোটি টাকা নিয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন অসংখ্য গ্রাহক ও ট্রাভেল এজেন্সি। তিনি জানান, মতিঝিল থানায় এ বিষয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে।
জিডিতে উল্লেখ করা হয়, শনিবার হঠাৎ করেই সালমান বিন রশিদ পরিবারসহ বিদেশে পাড়ি জমান এবং কর্মীদের একটি হোয়াটসঅ্যাপ বার্তায় প্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘোষণা দেন।
মতিঝিল সিটি সেন্টার ভবনের নিরাপত্তাকর্মীরাও জানিয়েছেন, গত তিন দিন ধরে ফ্লাইট এক্সপার্টের এমডি অফিসে আসেননি। কার্যালয়ের দরজা বন্ধ, কোনো উত্তরদাতা নেই। পরিস্থিতি ঘোলাটে হওয়ায় গ্রাহক ও ট্রাভেল এজেন্সিগুলোর মধ্যে বাড়ছে উদ্বেগ।
এজেন্সিগুলোর অভিযোগ, ছোট ট্রাভেল এজেন্সিগুলো বড় প্ল্যাটফর্মগুলোর ওপর নির্ভর করতে বাধ্য, আর সেই নির্ভরতাই এখন কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দ্রুত হস্তক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্তরা।