নিজস্ব প্রতিবেদক
ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)–এর বিরুদ্ধে আবারও দুই বাংলাদেশিকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। শনিবার চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার পাঁকা ইউনিয়নের পদ্মা নদী থেকে দুটি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। নিহত ব্যক্তিদের পরিবার ও স্থানীয়রা দাবি করছেন, তারা বিএসএফের গুলিতে নিহত হয়েছেন।
নিহতরা হলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার মনাকষা ইউনিয়নের তারাপুর-হঠাতপাড়ার বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম (৪৫) ও সেলিম রেজা (৩৭)। শফিকুল একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান এবং দুজনই পেশায় জেলে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
নদীতে ভেসে ওঠে লাশ : বিকেলে পদ্মা নদীর নিশিপাড়া চর ও বিশরশিয়া এলাকায় ভেসে ওঠে শফিকুল ও সেলিমের লাশ। স্থানীয় জেলেরা প্রথমে লাশ দুটি দেখতে পান এবং পরে বিজিবিকে খবর দেন। খবর পেয়ে বিজিবি ও পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নিহতরা কয়েক দিন আগে পদ্মা নদী পাড়ি দিয়ে ভারতের অভ্যন্তরে প্রবেশ করেছিলেন। এরপর থেকে পরিবারের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। আত্মীয়রা বিভিন্ন মাধ্যমে তাদের খোঁজ করছিলেন। শেষ পর্যন্ত পদ্মায় ভেসে ওঠে তাঁদের মরদেহ।
গরু আনতে গিয়ে বিএসএফের হাতে আটক ও হত্যা? : স্থানীয়দের একটি অংশ দাবি করছে, নিহত দুজন সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে গরু আনতে গিয়েছিলেন। ভারত থেকে ফেরার পথে ধুলিয়ান ঘাট এলাকায় বিএসএফের একটি স্পিডবোট তাঁদের ধাওয়া করে। পরে তারা ধরা পড়লে বিএসএফ তাঁদের মারধর করে হত্যা করে এবং পদ্মা নদীতে ফেলে দেয়।
তবে অপর একটি মত রয়েছে—তারা মাছ ধরতে গিয়েছিলেন এবং স্রোতের টানে ভারতের দিকে চলে গিয়েছিলেন। বিষয়টি স্পষ্ট নয়।
বিভিন্ন দিক থেকে তদন্তের দাবি : মনাকষা ইউনিয়নের ইউপি সদস্য মো. সমির উদ্দীন বলেন, “আমাদের ধারণা, তারা স্রোতে ভেসে ভারতীয় সীমানায় চলে যান। বিএসএফ চোরাকারবারি ভেবে তাদের হত্যা করে থাকতে পারে।”
শিবগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. গোলাম কিবরিয়া বলেন, “লাশ দুটি অর্ধগলিত হওয়ায় শরীরে স্পষ্টভাবে আঘাতের চিহ্ন বোঝা যাচ্ছে না। বিস্তারিত জানার জন্য ময়নাতদন্ত করা হবে।”
বিজিবি ও বিএসএফ—দুই পক্ষের অবস্থান : চাঁপাইনবাবগঞ্জে দায়িত্বপ্রাপ্ত ৫৩ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল ফাহাদ মাহমুদ রিংকু বলেন, “স্থানীয়দের অভিযোগের ভিত্তিতে ভারতের ৭১ বিএসএফ ব্যাটালিয়নের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। তবে বিএসএফ তাদের কোনো ভূমিকার কথা অস্বীকার করেছে।”
তিনি আরও বলেন, “লাশ দুটি যে ভারতের ভেতর থেকে এসেছে, সেটা নিশ্চিত হওয়া গেলে আমরা আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ জানাব। তবে এখনো নিহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে কেউ আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি।”
এক মাসে তিনজন নিহত : এর মাত্র কয়েক দিন আগেই, ২৮ জুলাই রাতে একই সীমান্ত এলাকায় বিএসএফের গুলিতে নিহত হন সৈবুর আলী নামে এক বাংলাদেশি রাখাল। ৩১ জুলাই রাজশাহীর গোদাগাড়ী এলাকায় পদ্মা নদী থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করা হয়। ফলে এক মাসের ব্যবধানে একই সীমান্তে তিন বাংলাদেশির মৃত্যুর ঘটনায় সীমান্ত নিরাপত্তা ও মানবাধিকার নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
মানবাধিকার সংগঠনগুলোর উদ্বেগ : এ ধরনের মৃত্যুকে ‘সন্দেহজনক হত্যা’ বলে উল্লেখ করে মানবাধিকার সংগঠনগুলো দীর্ঘদিন ধরে সীমান্তে জবাবদিহির দাবি জানিয়ে আসছে। ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় বিএসএফের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির আওতায় ‘বিনা বিচারে হত্যা’ বন্ধে প্রতিশ্রুতি থাকলেও বাস্তবে এর প্রতিফলন মিলছে না বলে তারা মনে করে।