চট্টগ্রাম প্রতিনিধি
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চট্টগ্রাম শাখার সাবেক মুখপাত্র ফাতেমা খানম রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। গতকাল (শুক্রবার) রাতে নিজের ফেসবুক পেজে সরাসরি লাইভে এসে তিনি বলেন, ‘আমার দ্বারা আর রাজনীতি করা সম্ভব নয়।’
১৬ মিনিট ৩৬ সেকেন্ডের ওই ফেসবুক লাইভে ফাতেমা বলেন, ‘চট্টগ্রামে যাঁদের সঙ্গে আমরা জুলাই আন্দোলন করেছি, তাঁরাই আজ নারীদের বিরুদ্ধে অপমানজনক বয়ান তৈরি করছেন। তাঁদের আচরণে নারীদের রাজনৈতিকভাবে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে। এসব একেবারেই মেনে নেওয়া যায় না।’
তিনি অভিযোগ করেন, চট্টগ্রামের রাজনৈতিক নেতৃত্বে কিছু ‘ভাই-ব্রাদার’ ব্যক্তি স্বার্থে কেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে একের পর এক কোরাম তৈরি করেছেন এবং আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্যকে আড়াল করে ফেলেছেন। ‘আমাদের লড়াই ছিল ফ্যাসিজমের বিরুদ্ধে, কিন্তু এখন লড়াই করতে হচ্ছে নিজেদের লোকজনের বিরুদ্ধেই,’ বলেন ফাতেমা।
তিনি আরও বলেন, ‘চট্টগ্রামে মেয়েদের নিয়ে যেভাবে নোংরামি করা হয়, সেটা ভাষায় বোঝানো যায় না। ব্যক্তিগতভাবে তাদের আক্রমণ করা হয়। আর এটা করে কারা? নিজেদের সংগঠনের ভাইয়েরাই।’
নেতৃত্বের সংকট ও নৈতিক অবক্ষয়ের প্রসঙ্গে ফাতেমা উল্লেখ করেন, ‘যাঁরা নেতৃত্ব দিচ্ছেন—তালাত মাহমুদ রাফি, রাসেল আহমেদ, রিজাউর রহমানসহ অনেকেই—তাঁরা কখনো প্রকাশ্যে নারীদের সম্মান রক্ষায় কথা বলেননি।’
লাইভের পর শনিবার বিকেল ৪টা ৫৬ মিনিটে নিজের ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে ফাতেমা লেখেন, ‘আমি আনুষ্ঠানিকভাবে জানাচ্ছি, আমি এই রাজনৈতিক পথ থেকে সরে দাঁড়াচ্ছি। তবে বিশ্বাস করি, আমার পরে কেউ না কেউ এই পথ চলবে। কিন্তু চট্টগ্রামের নারী রাজনীতিকদের ভবিষ্যৎ নিয়ে আমি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।’
তিনি লেখেন, ‘এই শহরে যদি কোনো নারী রাজনীতির মাঠে আসতে চান, তাঁর জন্য কী অপেক্ষা করছে, তা নিয়ে আমি ভয় পাই। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের পাশাপাশি নিজেদের দলের লোকদের মাধ্যমেও নারীরা সহিংসতা, অপমান ও ষড়যন্ত্রের শিকার হচ্ছেন। আমি এই অভিজ্ঞতা নিজের জীবন দিয়ে অনুভব করেছি।’
রাজনীতি ছাড়ার ঘোষণায় তিনি বলেন, ‘নারীরা যখন হাজারো বাধা পেরিয়ে রাজনীতির মাঠে নামেন, তখন যদি তাঁদের নিজের দলের ভাইয়েরাই হেয় করেন, অপমান করেন—তাহলে সেই জায়গাটায় আর রাজনীতি করার পরিবেশ থাকে না।’
চট্টগ্রাম কলেজের ইতিহাস বিভাগের স্নাতক প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ফাতেমা খানম একসময় নগর কমিটির সমন্বয়ক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমি কাউকে সরাসরি দোষ দিতে চাই না। কিন্তু নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, সংগঠনের ভেতর থেকেই মেয়েদের টার্গেট করে অপমানজনক মন্তব্য ছড়ানো হয়েছে। আর তা নিয়েই আমি প্রতিবাদ করছি।’
এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চট্টগ্রাম শাখার (বর্তমানে স্থগিত) সাবেক আহ্বায়ক আরিফ মইনুদ্দিন বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। অনেকে এখন বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ ও জাতীয় নাগরিক পার্টির কমিটিতে স্থান না পাওয়ার আশঙ্কায় নানা অজুহাত দেখিয়ে পদত্যাগ করছেন। ফাতেমার ক্ষেত্রেও সেটি হতে পারে।’
তিনি জানান, মাস কয়েক আগে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে ফাতেমাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল, যদিও পরে সেই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা হয়।
প্রসঙ্গত, গত ২৭ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটি ছাড়া সারাদেশের সব ইউনিটের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়।