নিজস্ব প্রতিবেদক
বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য দেশে একটি আধুনিক হাসপাতাল নির্মাণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল। শনিবার বিকেলে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে ‘রেমিট্যান্স যোদ্ধা দিবস’ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এ ঘোষণা দেন তিনি।
জুলাই আন্দোলনের সহযোদ্ধাদের প্রতি সম্মান : আসিফ নজরুল বলেন, “জুলাই আন্দোলনে যখন দেশের ভেতরে শিক্ষার্থীরা ফ্যাসিবাদবিরোধী প্রতিবাদে নেমেছিল, তখন দেশের বাইরেও আমাদের রেমিট্যান্স যোদ্ধারা জীবনকে ঝুঁকির মুখে ফেলে সংহতি প্রকাশ করেছিলেন। তাঁদের অনেকেই বিদেশের রাস্তায় বিক্ষোভে অংশ নিয়ে নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। সরকার হিসেবে আমরা তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞ। তাই সরকার বিদায়ের আগে প্রবাসীদের জন্য কিছু করে যেতে চায়।”
তিনি জানান, প্রবাসীদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে একটি বিশেষায়িত হাসপাতাল নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে ঠিক কোথায় এটি নির্মিত হবে এবং কী ধরনের সেবা থাকবে, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
আমিরাতে দণ্ডিত ৫৭ জন প্রবাসীর মুক্তি: এক সংগ্রামের ফল : ২০২৪ সালের জুলাইয়ে বাংলাদেশের কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ করেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। বিক্ষোভে অংশ নেওয়ার দায়ে দেশটির পুলিশ ৫৭ জনকে আটক করে এবং তাঁদের বিরুদ্ধে দাঙ্গা ও জনসম্পদ ক্ষয়সহ বিভিন্ন অভিযোগে কঠোর সাজা দেয় আদালত। এর মধ্যে তিনজনকে দেওয়া হয় যাবজ্জীবন, একজনকে ১১ বছর এবং বাকি ৫৩ জনকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড।
এই ঘটনায় শুধু বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা সুবিধাই স্থগিত হয়নি, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তৈরি হয় চাপ। এরপর প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের নেতৃত্বে শুরু হয় কূটনৈতিক প্রচেষ্টা। এক পর্যায়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান মানবিক বিবেচনায় ৫৭ জন প্রবাসী বাংলাদেশিকে ক্ষমা করে দেন।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম তখন জানান, তাদের দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
ঐতিহাসিক রেমিট্যান্স অর্জন: একটি সম্মানজনক অবস্থান : ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রবাসী আয়ে বাংলাদেশ ইতিহাসের নতুন রেকর্ড গড়েছে। জুলাই ২০২৪ থেকে জুন ২০২৫ পর্যন্ত দেশে এসেছে ৩০ হাজার ২২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স, যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় ২৬ দশমিক ৮০ শতাংশ বেশি। সেই অর্থবছরে বাংলাদেশ রেমিট্যান্সপ্রাপ্ত দেশগুলোর মধ্যে বিশ্বে সপ্তম অবস্থানে উঠে আসে।
কর্তৃপক্ষ মনে করে, প্রবাসীরা শুধু অর্থ পাঠাননি, তাঁরা দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনেও সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন। অনেকে মনে করেন, শহীদ ও আহত আন্দোলনকারীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতেই প্রবাসীরা এই সময় বেশি করে রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন।
প্রবাসীদের প্রতি রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির ইঙ্গিত : প্রবাসীদের জন্য হাসপাতাল নির্মাণের ঘোষণাকে শুধু একটি প্রকল্প নয়, বরং রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে তাঁদের আত্মত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধা ও স্বীকৃতির প্রতীক হিসেবে দেখা হচ্ছে। প্রবাসীরা দেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি, সেই সঙ্গে জাতীয় সংকটেও তাঁরা ছিলেন ভূমিকা রাখার জায়গায়।
এই উদ্যোগ সফল হলে তা হবে প্রবাসীদের সঙ্গে দেশের সম্পর্ক আরও গভীর ও মানবিকভাবে সংযুক্ত করার একটি বাস্তব পদক্ষেপ।