নিজস্ব প্রতিবেদক
‘জুলাই’ বা ‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন’ কিংবা ‘জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)’—এই নাম ব্যবহার করে কেউ যদি অসাধু কর্মকাণ্ড চালায়, তাহলে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।
শনিবার বিকেলে রাজধানীর বাংলামোটরে দলীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “যারা দল বা আন্দোলনের নাম বিক্রি করে চাঁদাবাজি বা অপকর্মে জড়াচ্ছে, তাদের দলীয়ভাবেও প্রতিরোধ করা হচ্ছে। সরকার ও প্রশাসন যদি সক্রিয় হয়, তাহলে এগুলো বন্ধ করা সম্ভব।”
চাঁদাবাজি ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান : সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে নাহিদ বলেন, “শুধু আমাদের আন্দোলন নয়, দেশের প্রায় সব রাজনৈতিক দলেই কিছু নেতা-কর্মী চাঁদাবাজিতে যুক্ত হয়েছেন। এই সংস্কৃতির বিরুদ্ধে সকলকে একসঙ্গে রুখে দাঁড়াতে হবে। চাঁদাবাজি, দুর্নীতি ও সন্ত্রাস মুক্ত বাংলাদেশ গড়াই এখন সময়ের দাবি।”
‘জুলাই অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা পূর্ণতা পায়নি’ : জুলাই অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তিতে প্রাপ্তি ও প্রত্যাশা প্রসঙ্গে নাহিদ বলেন, “জুলাই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আমরা যে পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখেছিলাম, তার পূর্ণতা এখনো আসেনি। অন্তর্বর্তী সরকারের কিছু উদ্যোগ প্রশংসনীয় হলেও বড় ধরণের কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি দেখা যায়নি।”
তিনি জানান, ৫ আগস্টের মধ্যেই ‘জুলাই সনদ’-এর সুরাহা হওয়া জরুরি, যাতে অভ্যুত্থানের এক বছরপূর্তিতে সব পক্ষ একসঙ্গে উদ্যাপন করতে পারে।
৩ আগস্টের কর্মসূচি ও ভবিষ্যৎ রূপরেখা : নাহিদ ইসলাম বলেন, “৩ আগস্ট একটি ঐতিহাসিক দিন। ২০২৪ সালের এই দিনে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে এক দফা (আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ) ঘোষণা করা হয়েছিল। সেই স্মরণে আজ আবারও শহীদ মিনারে সমাবেশ ডাকা হয়েছে। এই কর্মসূচির মাধ্যমে এনসিপির ভবিষ্যৎ রূপরেখাও তুলে ধরা হবে।”
তিনি জানান, ছাত্রদল তাদের পূর্বঘোষিত কর্মসূচির স্থান পরিবর্তন করে শাহবাগে সরিয়ে নিয়েছে, এনসিপির অনুরোধে। এ জন্য তিনি ছাত্রদলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান এবং যানজট ও জনদুর্ভোগের জন্য আগাম দুঃখ প্রকাশ করেন।
জুলাই সনদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি দাবি : নাহিদ বলেন, “জুলাই সনদের বিষয়ে অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ঐকমত্য হয়েছে। যেসব বিষয়ে মতপার্থক্য রয়েছে, তা কীভাবে সমাধান হবে—তা এখনো পরিষ্কার নয়। এনসিপি চায় এই সনদের একটি আইনি ও সাংবিধানিক ভিত্তি থাকুক।”
তিনি জানান, সরকারকে ইতিমধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্রের খসড়া দেওয়া হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, চূড়ান্ত ঘোষণাটি দায়িত্ব নিয়ে দেওয়া হবে।
নাহিদের ভাষায়, “আমরা চাই, ঘোষণাপত্রটি সংবিধানের প্রস্তাবনা ও তফসিলে যুক্ত হোক, যাতে আগামী নির্বাচন ও সংসদ গঠনের ভিত্তি হিসেবে এটি কাজ করে। সংস্কারের দায়িত্ব নির্বাচিত সংসদের হাতে ছেড়ে দেওয়া যাবে না।”
উপস্থিত নেতৃবৃন্দ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন ও আরিফুল ইসলাম আদীব, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব নাহিদা সারোয়ার, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদ, যুগ্ম সদস্যসচিব আবদুল্লাহ আল-আমিন, এস এম সাইফ মোস্তাফিজ ও মো. নিজাম উদ্দিন প্রমুখ।