বিশেষ সংবাদদাতা
গুলিস্তানে অবস্থিত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ভবনে টাঙানো হয়েছে ‘আন্তর্জাতিক ফ্যাসিজম ও গণহত্যা গবেষণা ইনস্টিটিউট’ নামে দুটি ব্যানার। প্রায় এক বছর পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা ভবনটিতে বর্তমানে চলছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ।
বৃহস্পতিবার বিকেলে সরেজমিনে দেখা যায়, ১০ তলা ভবনটির নিচতলা, দোতলা ও তৃতীয় তলার আবর্জনা ও ইটের খোয়া সরানো হচ্ছে। পরিষ্কারের কাজ করছেন অন্তত ১০–১২ জন। ভবনের সামনের প্লাস্টিকের চেয়ারে বসে থাকা কয়েকজন জানান, পুরো ভবনটি পরিষ্কার করে তুলে দেওয়া হবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের হাতে।
তাঁদের ভাষ্য, ভবনটির প্রতিটি তলা ব্যবহার হবে ভিন্ন ভিন্ন জনমুখী কর্মকাণ্ডে—যেমন শহীদ পরিবার, আহত কর্মীদের অফিস, সহায়তামূলক সেল। যদিও তাঁরা কেউ নাম প্রকাশে রাজি হননি, এবং ব্যানারে লেখা ‘আন্তর্জাতিক ফ্যাসিজম ও গণহত্যা গবেষণা ইনস্টিটিউট’-এর উদ্যোক্তা বা সংগঠন পরিচয় নিয়েও মুখ খুলতে চাননি কেউ।

অবশ্য এই ভবনের ইতিহাসও বেশ আলোচিত। ২০১৮ সালের ২৩ জুন আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভবনটির উদ্বোধন করেন। ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই কার্যালয়টি ছিল দলটির সাংগঠনিক কেন্দ্র। তবে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র–জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ভবনটিতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এরপর মাসব্যাপী চলে লুটপাট।
স্থানীয় দোকানিরা জানান, গত এক বছরে ভবনটি কার্যত পরিণত হয়েছিল উন্মুক্ত শৌচাগারে। দুর্গন্ধে আশপাশে চলাচল করাও ছিল কষ্টসাধ্য। এখন ব্যানার টাঙিয়ে এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার মাধ্যমে ভবনটির নিয়ন্ত্রণ কারা নিচ্ছে—সেই প্রশ্ন সামনে এসেছে।
সামনে দাঁড়িয়ে থাকা পথচারী আবদুস ছাত্তার বলেন, “যখন একটি দল স্বৈরতন্ত্রে ডুবে যায়, তখন এমন পরিণতিই হয়। এই ভবন এখন ইতিহাসের শিক্ষা হয়ে থাকল।”
এদিকে কারা এই ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা, ভবন ব্যবহারে আইনি অনুমতি আছে কি না—এসব বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এখন দেখার বিষয়, ভবনটি কি সত্যিই একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানে রূপ নেবে, নাকি এর পেছনে আছে বড় কোনো রাজনৈতিক পুনর্বাসনের কৌশল—তা সময়ই বলে দেবে।