বিনোদন প্রতিবেদক
বাংলা চলচ্চিত্রের সাম্প্রতিক সময়ে যে ক’জন অভিনেত্রী অভিনয়ে নতুন মাত্রা যোগ করেছেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম তমা মির্জা। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত এই অভিনেত্রী অভিনয়জগতে যাত্রা শুরু করেছিলেন নাচ দিয়ে। তবে সময়ের ধারায় নিজেকে পরিণত করেছেন এক নিখুঁত অভিনয়শিল্পীতে। ‘দাগি’ ও ‘আমলনামা’র মতো সাহসী ও চরিত্রনির্ভর কাজের মধ্য দিয়ে শুধু সাধারণ দর্শকের নয়, বরং চলচ্চিত্রবোদ্ধাদেরও প্রশংসা কুড়িয়েছেন তিনি।
ঈদুল আজহার ছবি ‘দাগি’ মুক্তির পরপরই তার প্রশংসায় মুখর হয়েছেন অনেকে। তমা নিজেও বিশ্বাস করেন, এই ছবি তার অভিনয়জীবনে একটি মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে। “দাগি ও আমলনামা দুটোই আমার ক্যারিয়ারে গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন। গল্প ও চরিত্র একেবারে আলাদা। একজন অভিনেত্রীর জন্য এটা অনেক বড় চ্যালেঞ্জ,” বললেন তমা।
এই চ্যালেঞ্জের ভেতর দিয়েই এগিয়ে যাচ্ছেন তিনি, তবে সাম্প্রতিক সময়ে নতুন কোনো কাজের ঘোষণা না আসায় ভক্তরা কিছুটা কৌতূহলী। একাধিক সিনেমা ও ওয়েব সিরিজের কথা থাকলেও আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো কিছু জানাননি তমা।
তবে এই অপেক্ষার মধ্যেও থেমে নেই তিনি। নিজেকে প্রস্তুত করছেন আরও ভালো গল্প ও চরিত্রের জন্য। তমা বলেন, “আমার যেন দুটো ডানা আছে, কিন্তু ডানা মেলে উড়তে পারছি না। শিল্পীর নিয়মিত কাজ থাকা উচিত। বছরে যদি তিন থেকে চারটি মানসম্মত কাজ করা যায়, তাহলে নিজেকে আরও গড়েপিটে তোলা যায়।”

নিজের পৃথিবী ও নিজস্বতা
তমা মির্জা অভিনয়ের বাইরে নিজেকে সময় দিতে ভালোবাসেন। একা থাকা, গান শোনা, বই পড়া, রান্না করা—এসবই তাঁর প্রিয়। “রান্না করতে ভালোবাসি। গরুর মাংস, হাঁস, খাসি—সব মাংসের কারি আমার হাতে ভালো হয়। নতুন রেসিপি ট্রাই করি,” বলেন তিনি। তবে রান্নার থেকেও যেটা তাঁর কাছে বেশি প্রিয়, তা হলো নিঃসঙ্গ সময়। “চা হাতে ঘরের ভেতর হেঁটে বেড়াই, ভাবি জীবনে কী ভুল করেছি, কীভাবে শোধরানো যেত। এই ভাবনাই আমাকে গড়ে তোলে।”
প্রেম, সম্পর্ক ও রায়হান রাফী প্রসঙ্গ
তমা মির্জার আলোচিত বেশ কয়েকটি কাজের পরিচালক ছিলেন রায়হান রাফী। তাঁদের ঘনিষ্ঠতা নিয়ে গুঞ্জন কম হয়নি। কেউ কেউ বলেছিলেন, তাঁরা প্রেম করছেন, এমনকি বিয়েও করেছেন। তবে এসবের বেশিরভাগকেই গুজব বলেই উড়িয়ে দিয়েছেন তমা। “রাফীর সঙ্গে বড় পর্দায় ‘সুড়ঙ্গ’ ছিল শেষ কাজ। এখন একসঙ্গে কাজের সম্ভাবনাও নেই,” জানালেন তিনি।
তমার মতে, একজন তারকার ব্যক্তিগত জীবন খুব বেশি দিন ব্যক্তিগত থাকে না। “আড্ডা, দেখা বা কথাবার্তা—এসবকে ছন্দপতন মনে করি না। সময়ের সঙ্গে অনেক কিছু বদলায়। আমি আমার মতো করে আছি, এটাই ভালো,” বললেন তিনি।

সংসার ভাবনা ও বাস্তবতা
একসময় সংসার করেছিলেন তমা। সেই সম্পর্ক ভেঙে গেছে অনেক আগেই। বর্তমানে বিয়ে বা সংসার নিয়ে ভাবছেন না বলেই জানালেন। “সংসার করতে হলে আগে মনস্থির করতে হয়। কাউকে বিয়ে করে সংসার করব—এমন মানুষ এখনো পাইনি,” বললেন তিনি।
তবে ভবিষ্যৎ নিয়ে তিনি হতাশ নন। “হঠাৎ যদি মনে হয়, কারও সঙ্গে বাকি জীবনটা কাটানো সম্ভব—তখনই বিয়ে করব। এখন কোনো পরিকল্পনা নেই,” বললেন এই সাহসী অভিনেত্রী।

ভবিষ্যতের চোখে স্বপ্ন
তমা মির্জা এখন নিজেকে আরও গড়ে তুলতে চান। ভালো গল্প, শক্তিশালী চরিত্র এবং ভিন্নধর্মী প্রজেক্ট—এই তিনেই চোখ তাঁর। চলচ্চিত্রের বাইরেও ওটিটি প্ল্যাটফর্মে নিজের জায়গা পাকাপোক্ত করছেন তিনি। সিনেমা দেখা, গল্প শোনা আর আত্মসমালোচনার মধ্য দিয়ে তিনি নিজেকে নতুনভাবে আবিষ্কার করছেন প্রতিদিন।
তমা মির্জার জীবনযাত্রা, কাজের প্রতি দায়বদ্ধতা এবং ব্যক্তিগত উপলব্ধি আমাদের মনে করিয়ে দেয়, একজন শিল্পীর জন্য প্রকৃত সাহসিকতা মানেই নিজের মতো করে বাঁচা এবং নিজের স্বপ্নকে অনুসরণ করা।