এই ম্যাচের রোমাঞ্চ হয়তো টান টান কোনো থ্রিলারকেও হার মানাবে। মাত্র ১৩৩ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে ৪৭ রানে ৭ উইকেট হারানো পাকিস্তান যেখানে একরকম হেরে বসেছিল, সেখান থেকেই এক ফাহিম আশরাফ ফেরালেন ম্যাচে রক্তচাপ বাড়ানো উত্তেজনা। তবে শেষ পর্যন্ত জয় হলো বাংলাদেশেরই। আর তাতেই তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতে নিল লিটন দাসের দল, এক ম্যাচ হাতে রেখেই।
পাকিস্তান ইনিংসের শুরুটা ছিল বিপর্যয়ের আদর্শ উদাহরণ। মাত্র ১৫ রানে ৫ উইকেট হারায় তারা, যা টি–টোয়েন্টি ইতিহাসে পাকিস্তানের সবচেয়ে বাজে শুরুর একটি। অন্যদিকে, বাংলাদেশ এই ম্যাচেই গড়েছে নতুন কীর্তি—টি-টোয়েন্টিতে প্রতিপক্ষের সবচেয়ে কম রানে প্রথম ৫ উইকেট নেওয়ার (১৫ রানে ৫ উইকেট) রেকর্ড, যা আগের ছিল ২৪ রানে পাপুয়া নিউগিনির বিপক্ষে।
বাংলাদেশের পেস আক্রমণের নেতৃত্ব দেন শরীফুল ইসলাম, যিনি ১৭ রান দিয়ে নেন ৩ উইকেট। তার সঙ্গে মেহেদী হাসান, তানজিম হাসান ও মোস্তাফিজুর রহমান সবাই রেখেছেন দারুণ অবদান। তানজিমের এক ওভারে পরপর দুই বলে মোহাম্মদ নেওয়াজ ও হাসান নেওয়াজকে ফিরিয়ে দেন, জাগিয়ে তোলেন হ্যাটট্রিক সম্ভাবনাও।
তবে ম্যাচে সবচেয়ে বড় ভয়টা আসে পাকিস্তানের অষ্টম উইকেট জুটিতে। ফাহিম আশরাফ ও আব্বাস আফ্রিদির ৪১ রানের জুটিতে প্রায় হাতের বাইরে চলে যাচ্ছিল ম্যাচ। রিশাদ হোসেনের এক ওভারে ১৫ রান নিয়ে যখন পাকিস্তান শেষ ওভারে এসে জয়ের জন্য মাত্র ১৩ রানের দরকারে পৌঁছে যায়, তখন রুদ্ধশ্বাস পরিস্থিতি। মোস্তাফিজের করা শেষ ওভারের প্রথম বলেই চার মারেন আহমেদ দানিয়াল। তবে পরের বলেই মিডউইকেটে শামীম হোসেনের হাতে ক্যাচ দিয়ে পাকিস্তান থামে ১২৫ রানে। জয় পায় বাংলাদেশ, ব্যবধান ৮ রানের।

এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশ শুরু থেকেই চাপে পড়ে যায়। ওপেনিংয়ে নাঈম শেখ দ্বিতীয় ওভারেই কট বিহাইন্ড হন। এরপর দ্রুত ফিরে যান লিটন দাস, হৃদয় ও পারভেজ হোসেন। পাওয়ারপ্লেতে স্কোরবোর্ডে মাত্র ২৯ রান, হারিয়ে ফেলে ৪ উইকেট।
চাপের মধ্যে ব্যাট হাতে দলের হাল ধরেন জাকের আলী ও মেহেদী হাসান। পঞ্চম উইকেটে এই জুটি যোগ করেন ৫৩ রান, যা পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পঞ্চম উইকেট জুটি। মেহেদী ২৫ বলে ৩৩ রান করে আউট হলেও, একপ্রান্ত আগলে রেখে লড়াই চালিয়ে যান জাকের। ৪৮ বলে ৫৫ রানের দায়িত্বশীল ইনিংস খেলে দলকে এনে দেন লড়ার পুঁজি। শেষ ওভারে দুটি ছক্কা মেরে ফিফটি পূর্ণ করেন, এবং ম্যান অব দ্য ম্যাচ হন।
ম্যাচ শেষে সবচেয়ে বড় বার্তা একটাই—বাংলাদেশের বোলিং আক্রমণ এখন ধারালো, সাহসী এবং আত্মবিশ্বাসী। ১৩৩ রানের পুঁজি নিয়েও রোমাঞ্চ ছড়িয়ে সিরিজ জয় প্রমাণ করে দিল যে, বাংলাদেশ টি–টোয়েন্টিতে ধীরে ধীরে পরিণত একটি দল হয়ে উঠছে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১৩৩ রান (জাকের ৫৫, মেহেদী ৩৩; মির্জা ২/১৭, দানিয়াল ২/২৩)
পাকিস্তান: ১৯.২ ওভারে ১২৫ রান (ফাহিম ৫১, আব্বাস ১৯; শরীফুল ৩/১৭, মেহেদী ২/২৫)
ফলাফল: বাংলাদেশ ৮ রানে জয়ী
সিরিজ অবস্থা: বাংলাদেশ ২–০ তে এগিয়ে (৩ ম্যাচ সিরিজে)
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: জাকের আলী