
কাদের বাবু
নিরাপদে স্কুলে যাওয়া, বন্ধুদের সঙ্গে হাসিমুখে কাটানো সময়, ক্লাস শেষে বাড়ি ফেরা—এটাই তো হওয়া উচিত ছিল একেকটি শিশুর প্রতিদিনের স্বাভাবিক জীবনের গল্প। কিন্তু সেই স্বাভাবিকতাই এক বিভীষিকায় পরিণত হলো মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের কয়েকজন নিষ্পাপ শিক্ষার্থীর জন্য। যাদের জীবনের রং ছিল কেবল শুরু হওয়ার পথে, সেই রং মুছে দিল এক ভয়াবহ ট্র্যাজেডি—নির্মম, অপ্রত্যাশিত, অমানবিক।
কয়েক সেকেন্ডেই নিস্তব্ধতা
একটি গাড়ি, কিছু অসতর্কতা, আর কিছু অব্যবস্থাপনা—কেড়ে নিল একেকটি তরতাজা প্রাণ। হঠাৎই যেন থেমে গেল সময়। স্কুল ড্রেস পরে বইয়ের ব্যাগ কাঁধে নিয়ে যারা বাড়ি ফিরছিল, তাদের কেউ কেউ আর কখনোই মায়ের কোলে ফিরতে পারবে না।
ঘটনার পরের মুহূর্তগুলো ছিল বিভীষিকাময়। কাঁদতে কাঁদতে ছুটে আসা অভিভাবকদের আর্তনাদ, রক্তে ভেজা স্কুল ড্রেস, কান্নায় মুহ্যমান সহপাঠীরা—এসব যেন কোনো সিনেমার দৃশ্য নয়, একেবারে বাস্তব ও নির্মম এক অধ্যায়। মানুষের কণ্ঠে কেবল একটাই প্রশ্ন—কেন? কেন এমন হলো?
মায়ের অপার অপেক্ষা, বাবার নিঃশব্দ কান্না
“বাড়ি ফিরলে ও নুডুস খেতে চাইত। আমি রোজ বসে থাকতাম ওর জন্য…”—ভাঙা কণ্ঠে বলছিলেন এক মা। কিন্তু সেই সন্তান আর কোনোদিনও ফিরে আসবে না। বাবারা যাদের চোখে সহজেই জল আসে না, তারাও দাঁড়িয়ে ছিলেন নির্বাক, চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়া নীরব অশ্রুতে।
একটি সন্তানকে হারানোর যন্ত্রণা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। তাদের ছোট ছোট স্বপ্ন—ডাক্তার হবে, পাইলট হবে, গায়ক হবে—সব কিছু থেমে গেল এক পলকে।
সামাজিক ব্যর্থতা, দায় কার?
এটা কেবল দুর্ঘটনা নয়, এটা এক ধরনের ব্যর্থতা—সমাজের, ব্যবস্থার, আমাদের সবার। কেন নেই নিরাপদ ব্যবস্থা? কেন বাচ্চাদের নিয়ে এতটা অবহেলা? কেন বারবার এমন দুর্ঘটনা ঘটেও প্রতিকার হয় না?
মাইলস্টোনের শিক্ষার্থীদের এই নির্মম মৃত্যু যেন একটা আঙুল তুলছে আমাদের দিকেই—আমরা কী করছি শিশুদের ভবিষ্যৎ রক্ষায়?
হোক জাগরণ, হোক প্রতিকার
এই হৃদয়বিদারক ঘটনা যেন আর কোনো পরিবারকে ছিন্নভিন্ন না করে। আমরা চাই, এই মৃত্যুগুলো হোক শেষ। হোক একটি বড় জাগরণ, যাতে স্কুলগামী শিশুরা নিরাপদে বাড়ি ফিরতে পারে।
শ্রদ্ধা সেই সব শিশুর প্রতি, যারা ফিরে আসবে না আর। কিন্তু তাদের শূন্যতা আমাদের চোখে জল এনে দেবে প্রতিটি সকালে, প্রতিটি বিকেলে।
তাদের খালি বেঞ্চ, ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বই-পেনসিল, আর বন্ধুদের নির্বাক চাহনি আজও বলে—“আমরা ছিলাম, আমরা স্বপ্ন দেখতাম।”
তারা চলে গেছে, কিন্তু রেখে গেছে জেগে ওঠার তাগিদ। যেন আমরা কখনো ভুলে না যাই—একটি শিশুর জীবন, একটি পরিবারের পৃথিবী।