নিজস্ব প্রতিবেদক
দেশের অর্থনীতি যখন সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তখন ব্যবসায়ী সমাজ নিয়ে বাড়তে থাকা সমালোচনার প্রতিবাদ জানালেন তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি মাহমুদ হাসান খান। তিনি বলেন, ‘লুটেরা আর প্রকৃত উদ্যোক্তার মধ্যে পার্থক্য না টানলে সৎ ব্যবসায়ীরা হেয় হচ্ছেন, নতুন উদ্যোক্তারা নিরুৎসাহিত হচ্ছেন।’
শনিবার রাজধানীতে আয়োজিত ‘সরকারের এক বছর: প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি’ শীর্ষক এক গোলটেবিল আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন।
বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, ‘মনে হচ্ছে, উদ্যোক্তা হয়ে যেন আমরা অন্যায় করে ফেলেছি। আমাদের সবাইকে রক্তচোষা বানিয়ে দেওয়া হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনার সরকারের সময় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি সরকারি আনুকূল্যে ব্যাংক লুট করেছেন, বিদেশে অর্থ পাচার করেছেন। তাঁদের কর্মকাণ্ডের দায় এখন সমগ্র ব্যবসায়ী সমাজকে বহন করতে হচ্ছে। এতে উদ্যোক্তারা জনমনে অবিশ্বাসের মুখে পড়েছেন।’
বিনিয়োগ নেই, উদ্বেগ আছে : মাহমুদ হাসান খান বলেন, গেল এক বছরে দেশে নতুন কোনো উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ হয়নি। কারণ হিসেবে তিনি তুলে ধরেন—বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশের অভাব, ঋণখেলাপির উচ্চ হার এবং আর্থিক খাতে অনিশ্চয়তা।
‘বর্তমানে যাঁরা ব্যবসা করছেন, তাঁরাও ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত। অনেকে খরচ কমাচ্ছেন, সম্প্রসারণের চিন্তা বাদ দিচ্ছেন,’ বলেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আলোচনায় আশার আলো : তবে সাম্প্রতিক কিছু ইতিবাচক দিকও তুলে ধরেন বিজিএমইএ সভাপতি। তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক বিষয়ক আলোচনায় অগ্রগতি হয়েছে। তৈরি পোশাক খাতে আগে যেখানে ৩৫ শতাংশ শুল্ক দিতে হতো, তা আলোচনার মাধ্যমে কমিয়ে ২০ শতাংশে আনা গেছে।
তাঁর মতে, এই হার আরও কমানোর সুযোগ রয়েছে। তিনি বলেন, ‘যদি আমরা উৎপাদনের অন্তত ২০ শতাংশ উপাদান যুক্তরাষ্ট্র থেকে নিতে পারি, তাহলে শুল্কহার কমে ১৪ থেকে ১৬ শতাংশে নামিয়ে আনা সম্ভব হতে পারে।’
ভবিষ্যতের জন্য সতর্ক বার্তা : আলোচনার শেষদিকে মাহমুদ হাসান খান আবারও জোর দেন সৎ উদ্যোক্তাদের মর্যাদা রক্ষার প্রয়োজনীয়তার ওপর। তাঁর ভাষায়, ‘সব ব্যবসায়ী লুটপাটকারী নন। দেশের অর্থনীতির হাল ধরতে হলে প্রকৃত উদ্যোক্তাদের সম্মান দিতে হবে। না হলে এই খাতে ভবিষ্যৎ বিনিয়োগ ও উদ্যম মুখ থুবড়ে পড়বে।’