মাহির নতুন নাটক ‘বকুল ফুল’ ইউটিউবে প্রকাশ পেয়েছে। কাজ করছেন নতুন ধারাবাহিকের। সম্প্রতি তাঁর কয়েকটি ছবি ফেসবুকে প্রকাশের পর ট্রলের শিকার হন, অনেকেই তাঁকে পর্নোতারকা মিয়া খলিফার সঙ্গে তুলনা করে কটাক্ষ করেন। পরে ফেসবুকে এর জবাবও দেন অভিনেত্রী। এসব প্রসঙ্গে তাঁর সঙ্গে কথা হলো।
প্রশ্ন: এমন তুলনার ঘটনা জানার পরপরই আপনার প্রতিক্রিয়া কীভাবে প্রকাশ পায়?
সামিরা খান মাহি: যারা এই ধরনের সমালোচনা করে, এদের নিয়ে আর কিছু বলার নেই। আমি জানি না, এই সিগনেচারটা কে তৈরি করেছে? চশমা পরলেই আমাকে অন্য কারও মতো লাগতে হবে, এমন তো কথা না। আসলে আমার কাছে মনে হয়েছে, আমাদের দেশের বেশির ভাগ পুরুষ সেক্সুয়ালি হতাশাগ্রস্ত। হতাশাগ্রস্ত বলেই রিডিং গ্লাস পরা ছবি দেখে তাদের মনে হয়েছে অন্য কিছু। এ ছাড়া আমি কোনো কারণ খুঁজে পাই না। একজন আর্টিস্ট অনেক ধরনের ছবি আপলোড করতে পারে। সেটা নিয়ে মন্তব্য করা স্বাভাবিক, কিন্তু এই ধরনের অসভ্যতা মানা যায় না।

প্রশ্ন: সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিদ্বেষমূলক মন্তব্য পড়লে কি উত্তর দেন?
সামিরা খান মাহি: আমি সাধারণত কোনো উত্তর দিই না। কিন্তু এবার বিষয়টা এত হাস্যকর ও বেশি বাড়াবাড়ি মনে হয়েছে, তাই ভাবলাম কথা বলি।
প্রশ্ন: অনেকে বলেন, ট্রলে প্রচারণা বাড়ে, ক্যারিয়ারে সুবিধা দেয়…
সামিরা খান মাহি: আমি কখনোই এ ধরনের নেতিবাচক, সস্তা ও অরুচিকর প্রচারণা চাই না। কারণ ছাড়াই যারা উল্টাপাল্টা মন্তব্য করে, তারা অসুস্থ—তাদের সঠিক চিকিৎসা দরকার।
প্রশ্ন: আপনি কি মনে করেন, গ্ল্যামারাস ইমেজের জন্য নারী শিল্পীরা বেশি সমালোচনার শিকার হন?
সামিরা খান মাহি: এটা শুধু আমার সঙ্গে না, প্রায় সব নারী শিল্পীর সঙ্গেই ঘটে। পুরুষ শিল্পীদের তুলনায় নারীরা বেশি বুলিংয়ের শিকার হয়। বেশির ভাগ বাজে মন্তব্য পুরুষেরাই করে। নারীদের নিয়ে নেতিবাচক ধারণা, দোষারোপ—এসব আমাদের সামাজিক কাঠামোর অংশ হয়ে গেছে।

প্রশ্ন: এসব কি আপনাকে হতাশ করে?
সামিরা খান মাহি: অনেক সময় উড়িয়ে দিই, কিন্তু কিছুটা থেকে যায়। আমরা আসলে প্রতিরোধে বেশি কিছু করতে পারি না। তাই যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলার চেষ্টা করি।
প্রশ্ন: এখন কাজের খবর বলুন।
সামিরা খান মাহি: সম্প্রতি ‘বকুল ফুল’ নামে আমার নাটক মুক্তি পেয়েছে। এতে মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষের চরিত্রে অভিনয় করেছি। ভিন্ন রকম চরিত্র বলে কাজটিতে অনেক পরিশ্রম করেছি। প্রশংসাও পেয়েছি।
প্রশ্ন: তার মানে আপনি কি গ্ল্যামারাস চরিত্রের বাইরেও ব্যতিক্রম চরিত্রে অভিনয় করতে চান?
সামিরা খান মাহি: অবশ্যই। আমি চাই সব ধরনের চরিত্রে নিজেকে উপস্থাপন করতে। অভিনয়ে বৈচিত্র্য না থাকলে সেটা শিল্পীর জন্য ক্ষতি। তাই এক্সপেরিমেন্টাল কাজের প্রতি আগ্রহী আমি।
প্রশ্ন: কাজের জন্য কি কখনো নিজের ব্যক্তিগত কমফোর্ট জোন ছাড়তে হয়েছে?
সামিরা খান মাহি: অনেকবারই। অভিনয়ে টিকে থাকতে হলে ব্যক্তিগত স্বাচ্ছন্দ্য ভুলে যেতে হয়। ভালো কাজের অংশ হতে হলে এই ত্যাগ স্বীকার করতেই হয়।
প্রশ্ন: প্রেম নিয়ে খোলামেলা থাকার পেছনে আপনার যুক্তি কী?
সামিরা খান মাহি: আমি স্বচ্ছতা পছন্দ করি। সম্পর্কের কথা খোলাখুলিভাবে বললে অন্য কেউ ভুল ধারণা করার সুযোগ পায় না। আমার ভক্তরা আমাকে শিল্পী হিসেবে ভালোবাসুক, কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে আমি চাই তারা জানুক আমার একজন আছে।
প্রশ্ন: গণমাধ্যমে প্রেম বা সম্পর্কের কথা বলে কি কখনো বিপদে পড়েছেন?
সামিরা খান মাহি: একবার হয়েছিল। মন খারাপ করে একটা স্ট্যাটাস দিয়েছিলাম, সবাই ভেবেছিল ব্রেকআপ হয়ে গেছে। পরে বুঝলাম, এসব ব্যাপারে খোলাখুলি বলা ঝুঁকিপূর্ণও হতে পারে।
প্রশ্ন: বিয়ে নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়েছে?
সামিরা খান মাহি: হ্যাঁ, আমাদের পরিকল্পনা আছে। তিন বছরের মধ্যে বিয়ে করব—যখন আমার প্রেমিক ব্যবসায় স্থিতিশীল হবে।
প্রশ্ন: একজন শিল্পীর ব্যক্তিগত জীবন দর্শকের জানার অধিকার আছে বলে মনে করেন?
সামিরা খান মাহি: এটা একান্তই শিল্পীর ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। আমি যতটুকু জানাতে চাই, ততটুকুই জানাই।
প্রশ্ন: সম্পর্কের কারণে কি কখনো পেশাগত সিদ্ধান্তে প্রভাব পড়েছে?
সামিরা খান মাহি: না, বরং আমার সঙ্গী সব সময় আমাকে অনুপ্রাণিত করে।

প্রশ্ন: আপনাকে যদি ‘বোল্ড’ বলা হয়, সেটা কীভাবে নেন?
সামিরা খান মাহি: মিশ্র অনুভূতি হয়। কখনো কমপ্লিমেন্ট মনে হয়, কখনো খোঁচা।
প্রশ্ন: সোশ্যাল মিডিয়ার লাইক, শেয়ার, কমেন্ট কি আপনার আত্মবিশ্বাসে প্রভাব ফেলে?
সামিরা খান মাহি: না, এগুলো কোনো প্রভাব ফেলে না। আমি জানি, সাফল্যের পর পতনও আসবে, তাই মানসিক প্রস্তুতি রেখেছি।
প্রশ্ন: গ্ল্যামারাস ইমেজ ধরে রাখতে কী পরিশ্রম করতে হয়?
সামিরা খান মাহি: সব সময় আপ–টু–ডেট থাকার চেষ্টা করি। তবে ব্যক্তিগত জীবনে খুব সাধারণ থাকতে ভালো লাগে। সব সময় শোবিজের সাজসজ্জা নিয়ে চলা সম্ভব নয়।
প্রশ্ন: কোন ঘরানার চরিত্রে নিজেকে সবচেয়ে বেশি দেখতে চান?
সামিরা খান মাহি: এমন একটা চরিত্র চাই, যেটা সিগনেচার হয়ে থাকবে। নাটকে তা পাওয়া কঠিন, সিনেমায় সম্ভব। আমার আশা সিনেমায় এমন চরিত্র পাব।
প্রশ্ন: স্বপ্ন পূরণের জন্য উদ্যোগ কবে নেবেন?
সামিরা খান মাহি: ভালো স্ক্রিপ্ট পেলে তখনই সিদ্ধান্ত নেব।
প্রশ্ন: জীবন ও ক্যারিয়ার থেকে সবচেয়ে বড় শিক্ষা কী পেয়েছেন?
সামিরা খান মাহি: আমি আগে চুপ থাকতাম, এখন স্ট্রেট ফরোয়ার্ড হয়েছি। সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়, আলোচনা করতে হয়—এটাই শিখেছি।

প্রশ্ন: কঠিন সময়ে আপনাকে সবচেয়ে বেশি শক্তি দিয়েছে কে বা কী?
সামিরা খান মাহি: আমার বন্ধুরা। তাদের সাহস আর অনুপ্রেরণাই আমাকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করেছে।
প্রশ্ন: সমালোচনা আর প্রশংসার মধ্যে কোনটা আপনাকে বেশি প্রেরণা দেয়?
সামিরা খান মাহি: দুটোই। সমালোচনা শেখায়, আর প্রশংসা কাজের অনুপ্রেরণা বাড়ায়।
প্রশ্ন: নতুন কোনো কাজ শুরু করেছেন?
সামিরা খান মাহি: হ্যাঁ, ‘খুশবু’ নামে একটি ধারাবাহিকের শুটিং শুরু করেছি। এতে আমার চরিত্র ছোট হলেও গুরুত্বপূর্ণ।