তিন বছর ধরে চলা আলোচনার পর অবশেষে ভারত ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে ঐতিহাসিক মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (FTA) স্বাক্ষরিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) লন্ডনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমার এই ৬০০ কোটি ব্রিটিশ পাউন্ডের চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী একে ব্রেক্সিট-পরবর্তী যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য চুক্তি বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, এতে যুক্তরাজ্যে ২,২০০ নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। অপরদিকে প্রধানমন্ত্রী মোদি চুক্তিটিকে দুই দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির “নকশা” হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
চুক্তির আওতায় যুক্তরাজ্যের বাজারে ভারতের ৯৯ শতাংশ রপ্তানি পণ্য শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার পাবে। একই সঙ্গে ভারতীয় পেশাজীবী ও ব্যবসায়ীদের জন্য যুক্তরাজ্যে কাজের সুযোগও সহজ হবে। টাইমস অব ইন্ডিয়ার বিশ্লেষণ অনুযায়ী, এই চুক্তির ফলে ভারত ১০টি বড় সুবিধা পেতে যাচ্ছে—
১. শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার
ভারতের ৯৯% রপ্তানি পণ্য এখন যুক্তরাজ্যে শুল্কমুক্তভাবে প্রবেশ করতে পারবে। আগে যেসব পণ্যে ৮% থেকে ২০% পর্যন্ত শুল্ক ছিল—যেমন: সামুদ্রিক মাছ, তৈরি পোশাক, রাসায়নিক দ্রব্য ও ধাতু—সেগুলোতেও শুল্ক কমে যাবে। প্রায় ৯৯.৭% প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যের ওপর থেকে ৭০% পর্যন্ত শুল্ক পুরোপুরি তুলে দেওয়া হয়েছে।
২. কর্মসংস্থান বাড়বে
শুল্ক হ্রাসের ফলে ভারত থেকে রপ্তানি বাড়বে এবং এর মাধ্যমে দেশটির বিভিন্ন শ্রমনির্ভর খাতে—যেমন পোশাক, চামড়া, খেলনা, রত্ন ও গয়না—নতুন চাকরির সুযোগ সৃষ্টি হবে।
৩. সস্তা হবে ব্রিটিশ গাড়ি ও হুইস্কি
ভারতের বাজারে ব্রিটিশ গাড়ির শুল্ক ১০০% থেকে কমে ১০% হয়ে যাবে। একইভাবে, ব্রিটিশ হুইস্কির ওপর শুল্ক ১৫০% থেকে প্রথমে ৭৫% এবং পরবর্তী ১০ বছরে কমে ৪০% হবে। ফলে ভারতীয় ক্রেতাদের জন্য বিলাসবহুল ব্রিটিশ পণ্য কেনা আরও সহজ হবে।
৪. কৃষিপণ্য রপ্তানিতে সুবিধা
হলুদ, গোলমরিচ, আমের মণ্ড, আচার, ডাল, সবজি ও সিরিয়ালসহ ৯৫% কৃষিপণ্যে যুক্তরাজ্য শুল্ক তুলে দিয়েছে। এতে ভারতীয় কৃষকদের আয় বাড়বে এবং কৃষিপণ্য রপ্তানি অন্তত ২০% বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।
৫. সামুদ্রিক পণ্যে শুল্ক শূন্য
চিংড়ি, টুনা মাছ এবং মাছের খাদ্যের ওপর যেসব শুল্ক ছিল, তা শূন্য করা হয়েছে। ভারতের উপকূলবর্তী রাজ্যগুলোর জন্য এই বাজার বড় সুযোগ তৈরি করবে।
৬. ব্র্যান্ডেড ভারতীয় পণ্যের বাজার বাড়বে
ভারতের ব্র্যান্ডেড পণ্য যেমন মসলা, চা, কফি ও কোমল পানীয় যুক্তরাজ্যে আরও সহজে প্রবেশ করতে পারবে। এতে ভারতীয় কোম্পানিগুলো ইউরোপীয় প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে টেক্কা দিতে পারবে।
৭. ওষুধ ও চিকিৎসা যন্ত্রপাতির প্রবেশাধিকার
ভারতের জেনেরিক ওষুধ ও চিকিৎসা যন্ত্রপাতিও যুক্তরাজ্যে শুল্কমুক্ত রপ্তানি করতে পারবে। এতে ভারতের ফার্মাসিউটিক্যাল খাত আরও প্রসার লাভ করবে।
৮. পেশাজীবীদের জন্য কাজের সুযোগ
চুক্তির আওতায় শিক্ষক, সংগীতজ্ঞ, রাঁধুনি প্রভৃতি স্বাধীন পেশাজীবীরা যুক্তরাজ্যে অফিস ছাড়াই দুই বছর কাজ করতে পারবেন। এতে ৩৫টি খাতে ভারতীয়দের কাজের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
৯. সামাজিক সুরক্ষায় ছাড়
যেসব ভারতীয় কর্মী যুক্তরাজ্যে তিন বছর কাজ করবেন, তাঁদের আর দ্বৈত সামাজিক নিরাপত্তা তহবিলে চাঁদা দিতে হবে না। এতে প্রায় ৭৫ হাজার ভারতীয় কর্মী উপকৃত হবেন।
১০. নারীর ক্ষমতায়ন
নারীদের জন্য ব্যবসা ও চাকরির নতুন দরজা খুলবে। যেমন: মহারাষ্ট্রের কোলাপুরি চপ্পলের মতো নারীদের হাতে তৈরি পণ্য এখন শুল্কমুক্তভাবে রপ্তানি করা যাবে। এতে নারীদের অর্থনৈতিক সক্ষমতা বাড়বে।