বিনোদন প্রতিবেদন
পাকিস্তানি অভিনেত্রী আলিজে শাহ অবশেষে বিনোদন অঙ্গনের গোপন শোষণ, হেনস্তা ও অবমাননার বিরুদ্ধে মুখ খুললেন। ২৫ জুলাই রাতে ইনস্টাগ্রাম স্টোরিতে একাধিক পোস্টে নিজের সঙ্গে ঘটে যাওয়া অভিজ্ঞতা এবং ইন্ডাস্ট্রির নানা অনিয়মের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক মন্তব্য করেন এই ২৫ বছর বয়সী অভিনেত্রী।
আলিজে বলেন, “আমি এখন একে একে মুখোশ খুলব—যারা আমাকে কষ্ট দিয়েছে। ট্রোল, মিম, ব্যঙ্গ–এসব যেন আর না হয়। অভিনেত্রীদের জীবন কতটা কঠিন, আপনাদের কোনো ধারণা নেই।”
‘ব্রাইডাল শো’র ইচ্ছাকৃত হেনস্তা
২০২১ সালের ‘ব্রাইডাল কটিওয়্যার উইক’-এ সংগীতশিল্পী শাজিয়া মানজুরের সঙ্গে র্যাম্পে হাঁটার সময় হোঁচট খেয়ে পড়ে যান আলিজে। সে সময় ঘটনাটিকে ‘দুর্ঘটনা’ বলা হলেও এবার আলিজে দাবি করেন, শাজিয়া ইচ্ছাকৃতভাবে তাকে ফেলে দেন।
তিনি বলেন, “আমরা ডান দিকে হাঁটছিলাম, হঠাৎ সে আমাকে টেনে ফেলে দেয়। পুরো শো’জুড়ে সে আমার কোমরে হাত রেখেছিল এবং আমাকে বারবার ফেলার চেষ্টা করছিল।”
তিনি আরও জানান, এই ঘটনার পর জান্নাত মির্জা ও জুগন কাজিম মিলে তাকে নিয়ে উপহাস করতেন এবং পরবর্তী অনুষ্ঠানেও তাকে অপমান করতেন।
পারিশ্রমিক ও ব্ল্যাকলিস্ট করার অভিযোগ
পাকিস্তানি শোবিজের পারিশ্রমিক সংক্রান্ত অনিয়ম নিয়েও কড়া সমালোচনা করেন আলিজে। বলেন, “আমাদের নিজের টাকা পেতে মাসের পর মাস অপেক্ষা করতে হয়। তিন মাস পর একটা চেক দিলে মনে হয় তারা যেন দয়া করে দিচ্ছে।”
এই অনিয়ম নিয়ে কথা বলার কারণেই তাকে ব্ল্যাকলিস্ট করা হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। বলেন, “সোশ্যাল মিডিয়ায় পেইড ট্রোল ছড়িয়ে আমাকে হেয় করা হয়।”
অডিশনে ডেকে অপমান, কাজ না দেওয়া
তিনি অভিযোগ করেন, অনেক পরিচালক তাকে মিটিংয়ে ডেকে কেবল অপমান করেন। বলেন, ‘তোমার ইমেজ খারাপ, আমরা তোমাকে নিতে পারি না।’
আলিজে প্রশ্ন তোলেন, “যদি কাজ না দাও, তাহলে অপমান করে মিটিংয়ের নামে ডাকো কেন? আমি কারো সম্পত্তি নই। আমার ইমেজ নিয়ে প্রশ্ন তোলার অধিকার তোমাদের নেই।”
সহ-অভিনেত্রীর সঙ্গে ঝামেলা ও সীমারেখা লঙ্ঘনের অভিযোগ
এক বছর আগে এক সহ-অভিনেত্রীর ওপর সিগারেট ছুঁড়ে মারার অভিযোগ ওঠে আলিজের বিরুদ্ধে। তিনি বলেন, “সে আমাকে ধাক্কা দেয়, পরে চড় মারে। আমি তার রুমে গিয়ে স্যান্ডেল ছুঁড়ে মারি, কিন্তু ছুঁইনি পর্যন্ত।”
তবে শুটিংয়ের ভিডিও ফুটেজে সিগারেট ছোড়ার প্রমাণ না থাকলেও তাকে পুলিশে অভিযোগ করতে বাধা দেওয়া হয়, যাতে নাটকের কাজ বন্ধ না হয়।
শারীরিক স্পর্শ নিয়ে স্পষ্ট অবস্থান জানিয়ে তিনি বলেন, “কোনো দৃশ্যে না থাকলে আমাকে ছোঁয়ার অধিকার কারো নেই। আগে জিজ্ঞেস করতে হবে। আমি কোনো মালিকানাধীন বস্তু নই।”
এই সীমারেখা রক্ষা করতে গিয়ে তিনি অনেক প্রযোজকের ‘টার্গেট’ হয়েছেন বলেও জানান।
সম্মান চাই, করুণা নয়
আলিজে শাহ তার পোস্টের শেষাংশে বলেন, “পিতৃতান্ত্রিক সমাজে একজন নারী শিল্পী হিসেবে কাজ করাটা কতটা কঠিন, সেটা যারা ট্রোল করে, তারা বুঝবে না। আমাদের প্রতি সম্মান দেখান। ব্যঙ্গ নয়।”
আলিজের এই খোলামেলা স্বীকারোক্তিতে পাকিস্তানের বিনোদন অঙ্গনে নারী অভিনেত্রীদের প্রতি বিদ্যমান বৈষম্য, হেনস্তা ও শোষণের বাস্তবতা সামনে চলে এসেছে। এখন দেখার বিষয়, এই সাহসী উচ্চারণের পর শিল্পী সমাজ ও ইন্ডাস্ট্রি কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানায়।