ঈদে ‘নীলচক্র’ সিনেমা আর ‘নসিব’ নাটকে দুটি ভিন্নধর্মী চরিত্রে অভিনয় করে আলোচিত হয়েছেন তরুণ অভিনেত্রী প্রিয়ন্তী উর্বী। সাম্প্রতিক কাজসহ অন্য নানা প্রসঙ্গে তাঁর সঙ্গে কথা হলো
‘নীলচক্র’ সিনেমায় আপনার চরিত্রটি পুরোপুরি ইতিবাচক নয়। ক্যারিয়ারের শুরুর দিকেই এমন চরিত্র অনেকেই করতে রাজি হবেন না।
দর্শক পুরো সিনেমা নিয়ে যা–ই বলুন, আমার অভিনেত্রী চরিত্রটির কিন্তু সবাই প্রশংসা করেছেন। চরিত্রটি ইনফ্লুয়েন্সারের যে অনুসারী পেতে মরিয়া, নিয়মিত ভিডিও করে অ্যাপে পোস্ট করে। এ ধরনের চরিত্র তো এই সময়ে এসে সবারই পরিচিত। চিত্রনাট্য পড়ে মনে হয়েছিল এখানে অভিনয়ের অনেক জায়গা আছে। মুক্তির পর মনে হয়েছে পছন্দ ঠিকই ছিল। অভিনয়শিল্পী হিসেবে সব ধরনের চরিত্রই করতে চাই। আমার কাছে কোনো ভালো গল্প আসল কিন্তু চরিত্রটি যৌনকর্মীর, আমি কি করব না? অবশ্যই করব। একইভাবে এখন রাজনীতি নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে, কোনো শীর্ষ রাজনীতিবিদের চরিত্রে প্রস্তাব পেলেও রাজি হয়ে যাব। শিল্পীকে তো আসলে বারবার নিজেকে ভাঙতে হয়।

‘নীলচক্র’-এ আপনার চরিত্রটির দুটি স্তর। প্রথম সে উচ্ছল ইনফ্লুয়েন্সার, পরে একটা ঘটনায় পুরোপুরি ভেঙে পড়ে। কোন অংশটি করা বেশি কঠিন ছিল?
সবচেয়ে কঠিন ছিল ইনফ্লুয়েন্সারের চরিত্রে অভিনয়। কারণ, আমি নিজে কখনই টিকটক করিনি, ক্যামেরার সামনে নাচ-গানে আমার একটু অস্বস্তি আছে। যদিও ভরতনাট্যম শিখেছি, এরপরও কেন জানি এটাতে আমি স্বাচ্ছন্দ্য নয়। আমি সব পারি কিন্তু ক্যামেরার সামনে নাচতে পারি না। তবে তখন চরিত্রটিতে এত মিশে গিয়েছিলাম যে কোনোটাই সেভাবে কঠিন মনে হয়নি।
‘নীলচক্র’ সিনেমায় আপনার কাজ তো প্রশংসিত। সিনেমা নিয়ে নতুন কী ভাবছেন?
দিন শেষে সব শিল্পীই সিনেমায় অভিনয় করতে চান। এই মাধ্যমে কাজ করে দর্শকের সবচেয়ে কাছে পৌঁছানো যায়। ভালো চরিত্রে প্রস্তাব পেলে করব। পাশাপাশি নাটকও করব। তবে ইদানীং যেমন অনেক নাটক করছি, তখন সংখ্যা কমিয়ে দেব। আমার আসলে নিয়মিত ক্যামেরার সামনে থাকা দরকার ছিল, আরও বেশি দর্শকের কাছে পৌঁছানো, পরিচিতি পাওয়া। সে জন্যই এত কাজ করেছি। সামনে হয়তো কাজ কমিয়ে এমন চরিত্র করতে চাইব, যেটা ছাপ রাখতে পারে।
গত কয়েক বছরে ঢাকাই সিনেমায় গল্প বলার ধরন পাল্টেছে। ছোট পর্দার শিল্পীরাও প্রচুর সুযোগ পাচ্ছেন।
এটা খুবই ইতিবাচক। এখনকার বাচ্চারা হলিউডের ছবি দেখে বড় হয়। এখন ভিন্নধর্মী গল্প, ভিন্নধর্মী নির্মাণ নিয়ে হাজির হতে না পারলে মানুষ আস্তে আস্তে সিনেমা থেকে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন। যেটা মাঝে হয়েছিল। এখন ভালো কাজ করার সুযোগ তৈরি হয়েছে।
তানিম রহমান অংশুর ‘নসিব’ নাটক নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা হচ্ছে। ‘নীলচক্র’র রাইসা আর ‘নসিব’-এর নাফিসা কতটা আলাদা?
দুটি একেবারেই আলাদা—সেটা লুক হিসেবেই বলেন আর চরিত্রের ধরন বলেন। নাফিসা হয়ে উঠতে আমার অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। পর্দায় নাফিসার ওপরে কোনো একটা শক্তি ভর করে, এমন চরিত্র হয়ে উঠতে শ্রম, মেধা ও সময় দিতে হয়েছে, সেটা সাধারণ অন্যান্য চরিত্রের ক্ষেত্রে করতে হয় না।

ঈদে তো আরশ খানের সঙ্গে কয়েকটি নাটক আলোচিত হয়েছে। আপনাদের জুটি গড়ে উঠল কীভাবে?
সব নায়কের সঙ্গে আমার জুটি কিন্তু জনপ্রিয়। আরশ আমার বন্ধু, ২০১৯-২০ সাল থেকে আমাদের বন্ধুত্ব। তখন ও আর আমি দুজনেই সংগ্রাম করছি। ২০২০ সালে হাবিব শাকিলের সৎমা নাটকে আমরা ভাই-বোনের চরিত্রে অভিনয় করি। সেটাই আমাদের একসঙ্গে প্রথম কাজ। এর পর থেকে পরিচালকই আমাদের জুটি করে কাজ করতে চেয়েছেন। কিন্তু আমি না করেছি। আরশকেও বলেছি—, আমরা দুজনই নতুন, আগে একটা অবস্থান তৈরি হোক, এরপর একসঙ্গে কাজ করব। এখন কাজ করছি। ঈদে যেমন আমাদের ‘পাখি গো নাম ধরে ডাকো’, ‘প্রেমে ডুবি’ আলোচিত হয়েছে।
ঈদের কোন কাজগুলো ভালো লাগল?
রায়হান রাফীর ‘তাণ্ডব ভালো লেগেছে। এ ছাড়া রাফাত মজুমদারের নাটক ‘ভালো থেকো খুব ভালো লেগেছে, (মাসুদ হাসান) উজ্জ্বল ভাই আমার খুব প্রিয় পরিচালক। তাঁর ‘চুপকথা’ও ভালো লেগেছে।
নতুন আর কী করছেন?
নতুন একটা নাটকের জন্য দীর্ঘ প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে কিন্তু নাটকের বিষয়ে এখনই কিছু বলতে পারব না। এ ছাড়া প্রথমবার গানের মিউজিক ভিডিও করেছি। আগে অনেক অনেক প্রস্তাব পেলেও করা হয়নি। ওই যে বললাম ক্যামেরার সামনে নাচ-গানে স্বাচ্ছন্দ্য নয়। ‘প্রেম আমার হলো’ গানটির শুটিং আমরা কক্সবাজারে করেছি। মুক্তির পর ভক্তদের ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া পেলে মাঝেমধ্যে মিউজিক ভিডিও করব।