বিশ্বে ইন্টারনেট গতির এক নতুন যুগের সূচনা করল জাপান। দেশটির ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশনস টেকনোলজি (NICT) সম্প্রতি দাবি করেছে, তারা প্রতি সেকেন্ডে ১ লাখ ২৫ হাজার গিগাবাইট (১২৫ টেরাবাইট) ডেটা স্থানান্তরের সফল পরীক্ষা চালিয়েছে—যা যুক্তরাষ্ট্রের গড় ব্রডব্যান্ড গতির তুলনায় প্রায় ৪০ লাখ গুণ বেশি।
এই রেকর্ড সৃষ্টিকারী পরীক্ষায় ডেটা ১ হাজার ১২০ মাইল (প্রায় ১ হাজার ৮০০ কিলোমিটার) দূরত্ব অতিক্রম করে পৌঁছায়। গবেষকেরা জানিয়েছেন, এই গতির মাধ্যমে ইন্টারনেট আর্কাইভে থাকা সব তথ্য মাত্র চার মিনিটের কম সময়েই ডাউনলোড করা সম্ভব।
লাইভ সায়েন্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৪ সালের আগের রেকর্ড ছিল প্রতি সেকেন্ডে ৫০ হাজার ২৫০ গিগাবাইট। এবার NICT সেটিকে দ্বিগুণেরও বেশি গতিতে ছাড়িয়ে গেছে।
প্রযুক্তির পেছনের রহস্য
এই অভাবনীয় অর্জনের পেছনে রয়েছে নতুন ধরনের অপটিক্যাল ফাইবার, যার ব্যাস মাত্র ০.১২৭ মিলিমিটার হলেও এটি প্রচলিত একক ফাইবার ক্যাবলের সমান পুরু। ফলে বিদ্যমান অবকাঠামোতেই এটি ব্যবহারযোগ্য।
নতুন ফাইবারের ভেতরে রয়েছে ১৯টি আলাদা আলোকচ্যানেল, যেগুলো একযোগে আলোর সংকেত পাঠাতে পারে। এই পদ্ধতিতে তথ্য ক্ষতি বা সংকেত বিভ্রান্তির সম্ভাবনা খুবই কম, ফলে দীর্ঘ দূরত্বেও কার্যকর এবং নির্ভরযোগ্য ডেটা স্থানান্তর সম্ভব হয়েছে।
বৈজ্ঞানিক সম্মেলনে উপস্থাপন
২০২৫ সালের ৩ এপ্রিল, যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকোতে অনুষ্ঠিত ৪৮তম অপটিক্যাল ফাইবার কমিউনিকেশন কনফারেন্সে (OFC) এই গবেষণার বিস্তারিত তুলে ধরেন বিজ্ঞানীরা।
NICT গবেষকেরা জানিয়েছেন, ২০২৩ সালের মার্চে তারা একই প্রযুক্তিতে সীমিত দূরত্বে সফলতা পেয়েছিলেন। এবারের পরীক্ষায় দীর্ঘ পরিসরে ডেটা প্রেরণ এবং সংকেত রক্ষায় বিশাল অগ্রগতি হয়েছে। পরীক্ষায় দেখা গেছে, একটানা ২১ বার ঘূর্ণনের পরেও সংকেত গন্তব্যে নিখুঁতভাবে পৌঁছেছে।
ভবিষ্যতের সম্ভাবনা
গবেষকেরা এই প্রযুক্তিকে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন, বিস্তৃত পরিসরের অপটিক্যাল যোগাযোগের ভবিষ্যৎ হিসেবে দেখছেন। তাদের মতে, বৈশ্বিকভাবে দ্রুত বাড়তে থাকা ডেটা চাহিদা মেটাতে এমন প্রযুক্তির বাস্তবায়ন এখন সময়ের দাবি।
পরবর্তী ধাপে, এই ফাইবার প্রযুক্তিকে টেলিকম খাতে কার্যকরভাবে কাজে লাগানোর লক্ষ্যে কাজ শুরু করবে গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি।
এটি শুধু ইন্টারনেট গতির এক নতুন রেকর্ড নয়—বরং আগামী দিনের যোগাযোগ ব্যবস্থায় এক বৈপ্লবিক পরিবর্তনের পূর্বাভাস।