BDOUTLOOK
  • হোম
  • দেশ
  • বিশ্ব
  • অর্থবাণিজ্য
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • মতামত
  • শিল্পসাহিত্য
    • কবিতা ও ছড়া
    • গল্প
    • প্রবন্ধ-আলোচনা
    • রম্য
    • শিশুসাহিত্য
    • শিল্পসাহিত্যের খবর
BDOUTLOOK
  • হোম
  • দেশ
  • বিশ্ব
  • অর্থবাণিজ্য
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • মতামত
  • শিল্পসাহিত্য
    • কবিতা ও ছড়া
    • গল্প
    • প্রবন্ধ-আলোচনা
    • রম্য
    • শিশুসাহিত্য
    • শিল্পসাহিত্যের খবর
শিরোনাম
ভারতে বিমান দুর্ঘটনার রহস্য উদঘাটন!
পুরান ঢাকায় ব্যবসায়ীকে নৃশংস হত্যা, চারজন গ্রেপ্তার
ট্রাম্পের শুল্ক হুমকি : দেশগুলোর প্রতিক্রিয়া ও বাজারের অবস্থান
ভোটের টাইমলাইনে কী বলছে দলগুলো
গাজায় অবশেষে যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা
Sunday | July 13 | 2025
BDOUTLOOK
BDOUTLOOK
  • হোম
  • দেশ
  • বিশ্ব
  • অর্থবাণিজ্য
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • মতামত
  • শিল্পসাহিত্য
    • কবিতা ও ছড়া
    • গল্প
    • প্রবন্ধ-আলোচনা
    • রম্য
    • শিশুসাহিত্য
    • শিল্পসাহিত্যের খবর

News 24 Hours BDOUTLOOK.COM

গল্প

ভয়ঙ্কর জঙ্গলে বিভীষিকা :: রেজাউল করিম খোকন

বিডিআউটলুক July 11, 2025
July 11, 2025
18

বেশ কয়েক বছর আগের কথা। মাসুক তখন সিঙ্গাপুরে বড় একটি কোম্পানির মেকানিক্যাল ইউনিটে কাজ করে। বুদ্ধিমান, চৌকস, কর্মঠ এবং সাহসী মানুষ হিসেবে কারখানাজুড়ে আলাদা সুখ্যাতি বাংলাদেশি এই সুদর্শন যুবকের। এজন্য সবাই তাকে চেনে বিশেষভাবে। সহকর্মীদের মধ্যে কেউ কোনো বিপদে পড়লে মাসুকের কথা মনে পড়ে যায় সবার আগে। সে নিজেও বিপদগ্রস্তদের সাহায্য-সহযোগিতায় কোনোরকম স্বার্থের কথা না ভেবে ছুটে যায়। বিপদগ্রস্তকে সাহায্য করতে গিয়ে নিজেও বিপদে পড়তে পারে, তাতে চরম ক্ষতি এমনকি জীবনহানিও হতে পারে তার। সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই মাসুকের।
একদিন হঠাৎ কারখানার ইলেকট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ার ন্যান্সি ব্রাউনকে হাউমাউ করে কাঁদতে দেখে কৌতূহলী হয়ে কাছে এগিয়ে যায় মাসুক। প্রিয়জন কাউকে হারালে আর্তনাদ করে যেভাবে কাঁদে মানুষ ন্যান্সিও সেভাবে কাঁদছিল। আশেপাশে কৌতূহলীদের ছোটখাটো জটলা জমেছিল। কেউ তার সমস্যা সম্পর্কে জানতে তেমনভাবে সাহসী হচ্ছিল না। মাসুক তো অন্য সবার মতো নয়। বিপদগ্রস্ত কাউকে দেখে নিশ্চুপ, নির্বিকার থাকার মতো মানুষ নয় সে। যে কোনো বিপদগ্রস্তের সহযোগিতায় ঝাঁপিয়ে পড়া তার স্বভাব।
ন্যান্সি কাঁদতে কাঁদতে জানায়, তার যমজ বোন সামান্থা কয়েক সপ্তাহ আগে জাপান গিয়েছিল। সোস্যাল এনভয়েরমেন্ট অ্যান্ড বিহেভিয়ার‌্যাল সায়েন্সের ওপর পিএইচডি করছে সে। এর আগে ইন্দোনেশিয়ার বালি দ্বীপে কয়েকদিন ধরে কাজ করছিল সামান্থা। সেখানে বেড়াতে আসা কয়েকজন জাপানি ট্যুরিস্টের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছিল মাত্র কয়েকদিনে। তবে আগে থেকেই তার জাপান যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল। কয়েক মাস পরে যাবে সেখানে, ঠিকঠাক হয়েছিল। কিন্তু নতুন বন্ধু হওয়া জাপানি ট্যুরিস্টদের চাপাচাপিতে আগেই সেখানে যাবার সিদ্ধান্ত নেয় সামান্থা। তাদের সাহায্য-সহযোগিতার আশ্বাস তাকে একটু বেশি আগ্রহী করেছিল।
ন্যান্সির মতো অবিকল দেখতে তার যমজ বোন সামান্থা। পাশাপাশি দাঁড়ালে দু’জনকে আলাদা করা কঠিন হয়ে পড়ে অনেকেরই। ন্যান্সি ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডিগ্রি নিয়ে চাকরিতে ঢুকেছে এক বছর আগে। মাত্র কয়েক মাস আগে বিয়েও করেছে ডেভিড ব্রাউনকে। ডেভিড সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। কাজ করে একটি শিপিং কোম্পানিতে। ওদিকে সোস্যাল বিহেভিয়ার‌্যাল সায়েন্সে মাস্টার্স করে এখন পিএইচডি করছে সামান্থা। এর মধ্যেই একটি আন্তর্জাতিক সংস্থায় চাকরিও পেয়ে গেছে সে। পিএইচডি গবেষণার জন্য ওই আন্তর্জাতিক সংস্থার কাছ থেকে আর্থিক ও অন্যান্য সহযোগিতা পাচ্ছে সে। ফলে কাজটা করতে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। বেশ ভালোভাবে এগিয়ে চলেছে সবকিছুই। গবেষণা কাজের জন্য এশিয়া অঞ্চলের কয়েকটি দেশে যেতে হচ্ছে তাকে। তার গবেষণার ক্ষেত্র এই অঞ্চলকে ঘিরে আবর্তিত। এর মধ্যে জাপানও রয়েছে।
জাপান যাওয়ার পর সামান্থার কাজ ঠিকঠাকমতো চলছিল। প্রায় প্রতিদিনই যমজ বোন ন্যান্সির সঙ্গে হোয়াটসআপ এবং মেসেঞ্জারে কথা হতো। কয়েকদিন আগে সে জানিয়েছিল, পিএইচডি গবেষণার তথ্য জোগাড় করতে সেখানকার আওকিগাহারা ফরেস্টে যাবে। জায়গাটা নাকি ভয়ঙ্কর। সেখানে নানা বিপদ ওত পেতে থাকে সবসময়। অশরীরী আত্মা আর ভুত-প্রেতদের রাজত্ব সেখানে। আওকিগাহারা ফরেস্টের নাম শুনলে ভয়ে অনেকেরই গা কাঁটা দিয়ে ওঠে।
জাপান যাওয়ার পর ওসাকা শহরে একদিন থেকে ফুজি পর্বতের পাদদেশে অবস্থিত ভয়ঙ্কর জায়গাটিতে যাচ্ছে সে, জানিয়েছিল। গবেষণার কাজে এর মধ্যে আওকিগাহারা ফরেস্টে বেশ কয়েকবার সে গেলেও সেখানে থাকেনি। কাজ শেষে চলে এসেছে কাছের ডরমিটারি হাউজে। কিন্তু দুদিন সেখানে কাজ করার পর থেকে হঠাৎ সে নিখোঁজ। সামান্থা রহস্যজনকভাবে উধাও হয়ে গেছে। তার জাপানি ট্যুরিস্ট বন্ধুরা যতটা সম্ভব অনুসন্ধান চালিয়েছে সেখানে। কোনোভাবেই তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। বোনের নিখোঁজ হওয়ার খবরটা পেয়েই মুষড়ে পড়েছে ন্যান্সি। জাপানের ভয়ঙ্কর জঙ্গল আওকিগাহারা ফরেস্টের কথা বিভিন্নজনের কাছে শুনেছে সে। ভয়ঙ্কর সব প্রেতাত্মারা সেখানে নাকি ঘুরে বেড়ায়। তাদের রাজত্ব সেখানে।
জাপানে আত্মহত্যাকারীদের পছন্দের জায়গা হিসেবে আওকিগাহারা ফরেস্টের বিশেষ পরিচিতি রয়েছে। জাপানি পৌরাণিক ইতিহাস থেকে এ সম্পর্কে নানা কথা জানা যায়। হনসু দ্বীপের ফুজি পর্বতের পাদদেশে এই গভীর জঙ্গলটি বিস্তৃত হলেও জানা যায়, বহু বছর আগে ফুজি পর্বতের আগ্নেয়গিরির ভয়াবহ বিস্ফোরণে যে লাভা নির্গত হয়েছিল তা পরবর্তী সময়ে জমে শক্ত হয়ে যাওয়ার পর দিনে দিনে সেই পার্বত্যভূমিতে এখানে গহীন জঙ্গলের বিস্তার ঘটেছে। সেই শক্ত ভূমির ওপর জঙ্গলের অবস্থান। শীতের সময়ে এ জায়গাটা সাদা বরফে ঢেকে যায় পুরোপুরিভাবে। তবে শীত কমে এলে অন্য সময়ে পর্যটকরা ভিড় করে এখানে। গহীন জঙ্গলে তারা ঘুরতে আসে দল বেঁধে। যদিও আওকিগাহারা ফরেস্টের অনেক বদনাম রয়েছে। এ জায়গাটা নাকি সব ভুত-প্রেতের আস্তানা। গত শতাব্দীর ১৯৬০ সাল থেকে এ জায়গাটা জাপানিদের আত্মহত্যার দারুণ পছন্দের বলে বিবেচিত হচ্ছে। কেউ কেউ ‘আত্মহত্যার জঙ্গল’ নামেও অভিহিত করে। এই জঙ্গল নিয়ে অনেক কিংবদন্তি, গা ছম ছম করা গল্প-কাহিনী প্রচলিত আছে জাপানিদের মধ্যে।
বহু বছর থেকেই জাপানে আত্মহত্যার প্রবণতা অনেক বেশি। এখানে এই জঙ্গল অনেক জাপানি আত্মহত্যা করতে আসে। তাদের সবাই হয়তো সফল হয় না। আত্মহত্যার চেষ্টা করে যারা ব্যর্থ হয় তারা হয়তো প্রাণে বেঁচে যায়। তবে প্রায় সময়েই জঙ্গলে বিভিন্ন জায়গায় মৃতদেহ ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকতে দেখা যায়। কেউ হয়তো জঙ্গলে বড় বড় গাছের ডালে দড়িতে ঝুলে আত্মহত্যা করে। আবার কেউ সঙ্গে আনা ওষুধের ওভারডোজ গ্রহণ করে মৃত্যুর স্বাদ নিতে চায়। যদিও আজকাল জাপান সরকার নানাভাবে প্রচারণা চালিয়ে আত্মহত্যার বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলাসহ এই আওকিগাহারা জঙ্গলে বিশেষ নজরদারির ব্যবস্থা চালু করেছে। এর মাধ্যমে সরকার আত্মহত্যার হার অনেকেটা কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে। জায়গাটা ভয়ংকর একটি ভুতের আস্তানা হিসেবে বেশির ভাগ মানুষের কাছে পরিচিত। সেখানে বেড়াতে কিংবা অন্য কোনো কাজে গিয়ে ভৌতিক অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন, এমন মানুষের সংখ্যা অনেক। তারা সেখান থেকে ফিরে এসে যে ধরনের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন তা রোমহর্ষক এবং ভয়াবহ। ফলে এই জঙ্গলকে ঘিরে সবার মনে আলাদা আতঙ্ক বাসা বেঁধে আছে।
যমজ বোন সামান্থার আওকিগাহারা জঙ্গলে গবেষণার কাজে যাবার কথা শুনে প্রথমে অজানা আশঙ্কায় ন্যান্সির বুকের ভেতরটা কেমন যেন দুলে উঠেছিল। সেখানে যেতে সাধারণভাবে মোটেও ইচ্ছা প্রকাশ করে না কেউ। ওখানে গেলেই ভয়ানক কোনো বিপদে পড়তে হবে, তেমন ধারণা পোষণ করে। সেই কুখ্যাত জঙ্গলে নিজের বোনকে যেতে নিষেধ করতে চেয়েও পারেনি ন্যান্সি। কারণ, সামান্থা সরেজমিনে পিএইচডি গবেষণার তথ্য সংগ্রহ করতে ওই ভয়ংকর জঙ্গলে যাচ্ছে। এ কাজে বাধা দিলে বোনটি আবার ভুল বুঝতে পারে ভেবে কিছু বলেনি তখন। ন্যান্সি এখন বারবার আর্তনাদ করে বলছে, ‘আমি ওকে বাধা দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু কেন যে তাকে বাধা দিলাম না। আমি নিষেধ করলেও সে কী শুনত! সামান্থা তো বাচ্চা মেয়ে নয়। সে তো নিজেকে সামলে নেওয়ার মতো একজন মানুষ। এখন সে কী বেঁচে আছে, নাকি মরে গেছে কিছু বলতে পারছি না।’
তার কান্নায় ভারি হয়ে ওঠে চারদিকের পরিবেশ।
‘আমি সামান্থাকে খুঁজতে জাপান যাব। যতই বিপদের আশঙ্কা থাকুক আমি ফুজি পর্বতের নিচে আওকিগাহারা জঙ্গলে গিয়ে আমার বোনকে খুঁজে বের করব। আমার মন বলছে, নিশ্চয়ই সে বেঁচে আছে। জাপানি পুলিশ আমাকে ফোন করেছিল। যদি আমি যেতে চাই, তাহলে তারা সব ধরনের সহযোগিতা করবে বলেছে। কিন্তু আমি একাকী কীভাবে যাব? আমার হাসবেন্ড ডেভিড তো সাউথ আফ্রিকা গেছে অফিসিয়াল কাজে। এখন আমি কাকে সঙ্গে নিয়ে যাব ভাবছি। কেউ কী যেতে রাজি হবে আমার সঙ্গে জাপানে যেতে?’ হতাশা এবং দুঃখ-বেদনা জড়ানো গলায় কথাগুলো বলে ন্যান্সি ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকে। কেউ তার কথার জবাবে কিছু বলে না। ন্যান্সির বিপদে সেদিন নির্বিকার চুপচাপ বসে থাকতে পারেনি মাসুক। তার সঙ্গে নিখোঁজ বোন সামান্থার অনুসন্ধানে যেতে রাজি হয়ে যায়।

দুই
তারা দুজন রাতের ফ্লাইটে জাপান রওনা হয়। জাপান গিয়েই সেখানকার পুলিশ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে। জাপানি পুলিশ কর্তৃপক্ষ তাদের অনুসন্ধান চেষ্টার বিবরণ দেয় ন্যান্সির কাছে। তারা জানায়, সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়েও সামান্থার কোনো খোঁজ পায়নি। আওকিগাহারা ফরেস্টে গিয়ে কারো রহস্যময় অন্তর্ধানের ঘটনা নতুন নয়। সেখানে এমন ঘটনা হরদম ঘটে। তদন্ত করেও এর পেছনে কারা দায়ী, কূলকিনারা করতে পারেনি। এখানে অতিপ্রাকৃত শক্তির দাপটের ব্যাপারটা কথায় কথায় জানায় তারা। অনুসন্ধান চালাতে গিয়ে গোয়েন্দারা ভয়ংকর সব অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে। পারতপক্ষে ওদিকে কেউ পা বাড়াতে রাজি নয়। তারপরও তরুণ বয়সী জাপানি পুলিশ সার্জেন্ট শিনজি তানাকাকে তদন্ত চালিয়ে যেতে বলা হয়েছে। ন্যান্সি ও মাসুক তার সঙ্গে একান্তে কথা বলে। যেখান থেকে তার বোন সামান্থা নিখোঁজ হয়েছে সেখানে গিয়ে আরেকবার অনুসন্ধান চালাতে চায় ন্যান্সি। কাজটা অনেক ঝুঁকিবহুল। বিপদের আশঙ্কা প্রতি মুহূর্তে। তাতে প্রাণটাও যেতে পারে। সবার সতর্কবার্তা, পরামর্শ উপেক্ষা করে ন্যান্সি আওকিগাহারা জঙ্গলে যাবার সিদ্ধান্ত নেয়। সঙ্গে থাকে মাসুক ও শিনজি তানাকা। কিন্তু এক ধরনের অনিশ্চয়তা ও আশঙ্কা নিয়ে রওনা হয় তারা তিনজন।
জাপানে পা রাখার পর সবার মুখে ভয়ংকর একটি জায়গা হিসেবে আওকিগাহারা জঙ্গলের নানা গল্প শুনে মাসুকের মনেও ভীষণ ভয় ঢুকে গেছে। ন্যান্সিকে নিয়ে সেখানে যাওয়া এবং গহীন জঙ্গলে বিপৎসংকুল পরিবেশে অনুসন্ধান চালানোটা কোনোভাবেই সহজসাধ্য ব্যাপার নয়। নানাভাবে বাধা দিতে চেয়েছে সে ন্যান্সিকে। জাপানি পুলিশ সার্জেন্ট শিনজি তো স্পষ্ট বলে দিয়েছে, ওই ভয়ংকর জায়গায় যাওয়া মানে মৃত্যুকে কাছে ডেকে আনা। ওখান থেকে নিরাপদে অক্ষতভাবে ফিরে আসার সম্ভাবনা খুব কম। এতসব কথার পরও পিছিয়ে আসেনি ন্যান্সি। তার ধারণা, ওই আওকিগাহারা জঙ্গলে এখনও বেঁচে আছে যমজ বোন সামান্থা। হয়তো কোথাও বিপদে জড়িয়ে আটকা পড়েছে। মৃত্যুর মুখোমুখি অবস্থান করছে সে। তাকে উদ্ধার করতেই হবে যেকোনো মূল্যে। তবে যদি সে এখন পর্যন্ত প্রাণে বেঁচে থাকে। অনেক আশঙ্কা, ভয়, নিরাপত্তাহীনতাকে সঙ্গী করে ফুজি পর্বতের পাদদেশে অবস্থিত কুখ্যাত জঙ্গল আওকিগাহারা ফরেস্টে পা রাখে তারা তিনজন। বেশ অনেকটা ভেতরে ঢোকার পরও মানুষজনের আনাগোনা কিংবা পদচারণা চোখে পড়ে না। অদ্ভুত এক নীরবতা যেন এখানকার পরিবেশকে আরও ভয়ংকর করে তুলেছে। জাপান সরকার এই জঙ্গলে এসে আত্মহত্যার প্রবণতা ঠেকাতে অনেক পদক্ষেপ নিয়েছে। আত্মহত্যা বিরোধী প্রচারণাসহ এখানে পাহারার ব্যবস্থা করেছে। জঙ্গলে ঢোকার বিভিন্ন পথে নজরদারি করা হচ্ছে। কিন্তু তারপরও সব নজরদারি, পাহারা এড়িয়ে আত্মহত্যা করতে কেউ কেউ ঢুকে পড়ছে এবং তারা তাদের জীবনের ইতি ঘটাচ্ছে নানাভাবে।
দিনের বেলাতে গহীন জঙ্গলে আবছা আলো আঁধারিতে পথ চলতে কষ্ট হচ্ছে তাদের। ন্যান্সি বেশ কয়েকবার হোঁচট খেয়ে মাটিতে পড়ে গেছে। একটা বড় গাছের ডালায় গলায় দড়ি বেঁধে আত্মহত্যা করা একজনের লাশ ঝুলছিল। বোধহয়, এক দুদিন আগে মধ্যবয়সী লোকটা আত্মঘাতী হয়েছে। মৃতদেহটায় পচন ধরেছে। উৎকট গন্ধ ছড়াচ্ছে চারপাশে। মাছি ভনভন করছে সেখানে। টর্চের আলো ফেলতেই ঝুলন্ত মৃতদেহটা স্পষ্ট দেখতে পায় তারা। লোকটার জিহবা অর্ধেক বেরিয়ে আছে। চোখ দুটি বিস্ফোরিত। তার জীবনে কী এমন দুঃখ কষ্ট হতাশা বেদনা বাসা বেঁধেছিল? যা বহন করতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে বাধ্য হয়েছিল। ন্যান্সির পাশে দাঁড়িয়ে মাসুক ভাবতে থাকে লোকটার কথা।
কিছু দূর এগিয়ে যেতেই জঙ্গলের মধ্যে আরও বেশ কিছু মৃতদেহ চোখে পড়ে তাদের। এর মধ্যে কোনোটি মরে পচে শুকিয়ে কঙ্কাল হয়ে গেছে। পরনের কাপড়-চোপড়ও পচতে পচতে মিশে যাচ্ছে মাটিতে। ভয়াবহ এক পরিবেশের মধ্যে পথ চলতে গিয়ে ন্যান্সি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে। মাথাটা টলমল করে ওঠে। শরীরের ভারসাম্য হারিয়ে মাটিতে পড়ে যাবার আগে জাপানি পুলিশ সার্জেন্ট শিনজি তানাকার চোখে পড়ে। সে শক্তভাবে ধরে ফেলে তাকে। এ যাত্রায় বড় ধরনের অঘটন থেকে রক্ষা পায় ন্যান্সি। কঠিন পাথুরে বনভূমিতে পড়ে গেলে মাথায় প্রচুর আঘাত লাগত। তাতে মৃত্যুও হতে পারত। শিনজিকে ধন্যবাদ জানায় সে। তারপর একটা নিরাপদ জায়গা দেখে বিশ্রামের জন্য বসে পড়ে তারা। এরমধ্যেই ন্যান্সি ধকল সইতে না পেরে কিছুটা কাবু হয়ে পড়েছে। ন্যান্সির শারীরিক-মানসিক অবস্থা দেখে স্টিভ উপলব্ধি করে বোনের খোঁজে এসে তার নিজেরই জীবন বিপন্ন হওয়ার জোগাড় হয়েছে।
‘এই আওকিগাহারা ফরেস্ট হলো মৃত্যুর বসতি। এখানে প্রতি মুহূর্তে মৃত্যু পায়ে পায়ে এগিয়ে এসে জাপটে ধরে। ভুত-প্রেতদের অত্যাচারে এখানে ঠিকঠাকমতো কাজ করতে পারি না। বারবার এসে হানা দেয় তারা। নানারূপ ধারণ করে আমাদের বিভ্রান্ত করে। আমাদের কাজকর্ম ভণ্ডুল করে দেয়। ন্যান্সি, এখানে আর খোঁজাখুঁজি করে কিছু হবে না। এখানে যতই থাকবে, ভয়ংকর সব বিপদ এসে হানা দেবে। তার চেয়ে আজ আমরা ফিরে যাই। বিকেল হয়ে গেছে। সন্ধ্যে নামার পর অন্ধকারে এখানে পথ চলতে পারব না কেউই। তখন ফিরে যাওয়াও অসম্ভব হয়ে পড়বে। তখন তুমি এই পরিবেশে এক মুহূর্তও থাকতে পারবে না। এখনও সময় আছে। চলো, আমরা আওকিগাহারার মৃত্যুপুরী থেকে নিরাপদে বেরিয়ে যাই।’ শিনজি শান্ত গলায় কথাগুলো বলে।
ন্যান্সি জাপানি পুলিশের কথা গায়ে না মেখে বলে, ‘আমি আমার বোনের খোঁজে সেই সিঙ্গাপুর থেকে এতদূর এসেছি। আমার মন বলছে— আমার বোন সামান্থা এখনও বেঁচে আছে, তাকে আমরা খুঁজে বের করতে পারব আর একটু চেষ্টা করলেই। মাসুক কিছু একটা বলতে যাওয়ার আগে ন্যান্সি বলে, ‘দিনের আলো তো এখনও ফুরিয়ে যায়নি। আজ আরো একটু খুঁজে দেখি। স্টিভ, তুমি নিশ্চয়ই আমার সাথে একমত হবে।’
ন্যান্সির কথার পিঠে আর কিছু বলতে পারে না মাসুক। চুপচাপ সে পথ চলতে থাকে। নিরাশ না হয়ে ন্যান্সি সতর্ক দৃষ্টি মেলে চারপাশে তাকিয়ে এগিয়ে যেতে যেতে হঠাৎ কাছেই কিছু একটা দেখতে পায়। দৌড়ে ছুটে যায় সেদিকে। তার পিছু পিছু মাসুক এবং শিনজিও ছুটে যায় সেদিকে। একটি বড় গাছের নিজে ছোট্ট হলুদ রঙের তাবু খাটানো রয়েছে। পাশেই গাছের সঙ্গে বাঁধা দড়িতে কয়েকটি কাপড় ঝুলছে। হয়তো ভিজে যাওয়ায় শুকোতে দেওয়া হয়েছিল। ন্যান্সির কণ্ঠে উচ্ছ্বাস ঝরে পড়ে, ‘এই তো আমি পেয়ে গেছি আমার বোনকে! বলেছিলাম না। সে এই জঙ্গলেই আছে। এই যে তার জামা-কাপড় ঝুলছে দড়িতে। ওই তাঁবুটা খাটানো আছে দেখছো না তোমরা? ওটা সামান্থারই। কয়েকদিন আগে আমাকে হোয়াটসঅ্যাপে যে ছবি পাঠিয়েছিল সেখানে এই তাঁবুটি দেখেছি। আর এই যে কাপড়-চোপড় সবই তো তার। এক ছুটে তাঁবুর চেইন খুলে ভেতরে ঢোকে সে। তাঁবুর মধ্যে সামান্থার ব্যবহৃত আরও কিছু জিনিস দেখতে পায়। সামান্থার একটি নোটবুকও খুঁজে পায় সে তাঁবুর মধ্যে। ব্যাপারটা মাসুককে যেমন চমকে দেয়, একইভাবে অবাক হয় জাপানি তরুণ পুলিশ সার্জেন্ট শিনজি তানাকাও।
খাটানো হলুদ রঙের সিঙ্গেল তাঁবু, দড়িতে ঝোলানো কিছু জামা-কাপড় ইত্যাদি প্রমাণ করে সামান্থা এখানে অবস্থান করছিল। তবে আশেপাশে কাউকে দেখা যায় না। ততক্ষণে ন্যান্সি চড়া গলায় চিৎকার করে ডাকতে শুরু করে দিয়েছে, ‘সামান্থা, সামান্থা, বোন আমার! তুমি কোথায়, আমরা তোমাকে নিতে এসেছি, সামান্থা… সামান্থা। তুমি যেখানেই থাকো সাড়া দাও। কিন্তু ন্যান্সির ডাক আশেপাশের জঙ্গলে প্রতিধ্বনিত হলেও কেউ সাড়া দেয় না। কিংবা ছুটে আসে না কাছে তার ডাক শুনে। ব্যাপারটা পরিবেশকে অস্বস্তিকর করে তুলে। বেশ কিছুক্ষণ সময় পেরিয়ে যায় এভাবে।
আওকিগাহারা ফরেস্টের আনাচে-কানাচে অন্ধকার নামতে শুরু করেছে ততক্ষণে। কেমন ভীতিকর ভৌতিক পরিবেশ যেন ছড়িয়ে পড়ছে ক্রমেই। শীত শীত লাগছে। অনেক ভয়াবহ কিছু একটা যেন গ্রাস করতে চলেছে চারপাশ জুড়ে। কিন্তু এখানে এভাবে বসে থাকলে তো সামান্থা ফিরে আসবে না তাদের কাছে। আশেপাশে কোথাও থাকলে নিশ্চয়ই ততক্ষণে সে ফিরে আসত। ন্যান্সির ডাকে সাড়া দিত। কিন্তু তেমন কিছুই তো ঘটেনি এখানে। রাত নামার আগেই এ জায়গা ছেড়ে জঙ্গল থেকে অনেক দূরে চলে যেতে হবে। এখানে কাজ করার অভিজ্ঞতার আলোকে উপলব্ধি করে শিনজি তানাকা। এখানে আরও কিছুক্ষণ থাকা মানেই বিপদে জড়িয়ে পড়া। সে তাড়া দেয়, চলো, আমাদের দ্রুত সাবধানে পা চালাতে হবে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব জঙ্গলের সীমা পেরিয়ে নিরাপদ জায়গায় চলে যেতে হবে। আর এক মুহূর্তও নয়। চলো তো সবাই—’
এবার ন্যান্সি গো ধরে বলে, ‘তোমরা চাইলে চলে যেতে পারো। আমি কিন্তু যাব না এ জায়গাটা ছেড়ে। আমি এই তাঁবুতে থাকব। তোমরা চাইলে থাকতে পারো। সামান্থা আশেপাশে কোথাও আছে। আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি। সে হয়তো কোনো অশুভ শক্তির খপ্পরে পড়েছে । আমি বোন হয়ে স্বার্থপরের মতো তাকে এভাবে ফেলে রেখে চলে যেতে পারি না। আমার যতই বিপদ হোক, ভুত-প্রেত এসে আমার ঘাড় মটকে মেরে ফেলুক আমি কিন্তু রাতে এখানেই থাকব। কাল সকাল থেকে আবার চুষে ফেলব আশপাশটা। আমি অনেকটাই আশাবাদী, বোনটিকে অবশ্যই খুঁজে পাব। নিশ্চয়ই সামান্থা বেঁচে আছে। ঈশ্বর নিশ্চয় সহায় হবেন আমাদের ওপর।’ তার এ কথাগুলো এবং এখানে রাতে থাকতে গো ধরার ব্যাপারটা নিছক পাগলামি ছাড়া আর কিছুই নয়। এই জঙ্গলে দিনের বেলাতেই যেখানে থাকতে এবং পথ চলতে ভয়ে আতঙ্কে হৃদস্পন্দন বন্ধ হয়ে যাবার অবস্থা, সেখানে রাত কাটানোটা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। গোটা ব্যাপারটা ভয়ংকর বিপদ ডেকে আনবে। তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এটা মাসুক যেমন উপলব্ধি করছে। শিনজিও তার নিজের অভিজ্ঞতায় আরো বেশি অনুভব করছে। গত কয়েক বছরে সে অনেক চাঞ্চল্যকর ঘটনা নিজের চোখে দেখছে। অনেক বলে কয়েও ন্যান্সিকে রাজি করাতে পারে না তারা। কোনোভাবে সে এই জঙ্গল ছেড়ে যাবে না। রাতটা এখানে কাটাবে বলে তার সিদ্ধান্ত থেকে টলতে পারে না। শিনজি হাল ছেড়ে দেয়।
‘ন্যান্সির কথামতো আমি এখানে এই অভিশপ্ত ভুত-প্রেতদের জঙ্গলে রাত কাটাতে পারব না। এত সহজেই নিজের প্রাণটা হারাতে চাই না আমি। দরকার হলে আমি কাল দিনের বেলা আবার আসব। মাসুক তুমিও ন্যান্সির মতো পাগলামো করবে না নিশ্চয়ই। এখানে রাতে থাকলে কী যে ভয়ংকর বিভীষিকাময় পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে- তা অনুমানও করতে পারবে না। জাপানি পুলিশ সার্জেন্টের কথাগুলো ফেলে দেবার মতো নয়।
কিন্তু ন্যান্সির পাশে একজন নির্ভরযোগ্য বন্ধু এবং সহযোগী হিসেবে থাকার জন্যই তো সে তার সঙ্গে এসেছে সিঙ্গাপুর থেকে। এই ভয়ংকর আওকিগাহারা জঙ্গলে রাতটাতে একজন নারীকে একাকী ফেলে স্বার্থপরের মতো নিরাপদ জায়গায় চলে যেতে পারে না নিজে। ‘নাহ, আমি ন্যান্সির সঙ্গে এখানেই থাকব। তাকে একা ফেলে কোনোভাবেই চয়ে যেতে পারি না, সাফ জানিয়ে দেয় মাসুক। তার কথা শুনে অনেকটা স্বস্তিবোধ করে ন্যান্সি।
শিনজি চলে যাবার সাথে সাথে জঙ্গলের মধ্যে চারপাশটায় হঠাৎ করে যেন অন্ধকারটা গাঢ় হয়ে নেমে আসে।
সাথে থাকা চার্জার লাইটটা জ্বলছে আরো আগে থেকেই। তার আলোটা জঙ্গলের পরিবেশটাকে যেন ভয়ংকর করে তুলেছে আরও। ব্যাগ খুলে স্যান্ডউইচ আর চকলেট বার বের করে নিজে খায়, মাসুককেও দেয় ন্যান্সি।
কাছেই অদ্ভুত কিছু শব্দ শোনা যাচ্ছে। তবে তার উৎস সম্পর্কে কোনো ধারণা করতে পারে না তারা। মাসুক একটা গাছের নিচে হেলান দিয়ে বসেছে। সারাদিনের ক্লান্তিতে শরীরটা ভেঙে আসছে। কিন্তু তার কাছে এ জায়গাটা ভীষণ বিপজ্জনক মনে হচ্ছে। এখানে নির্বিঘ্নে ঘুমানোর কথা ভাবতে পারছে না মাসুক।
আশেপাশে কেউ যেন ফিসফাঁস করছে। কিন্তু সেই ফিসফাঁসের কথাগুলো স্পষ্ট নয়। ফলে বোঝাও যাচ্ছে না। কিন্তু এই রাতে কারা এখানে ফিসফিস কথা বলছে? এখান তো কোনো মানুষজনের আনাগোনা কিংবা বসবাস নেই। হঠাৎ কাউকে জঙ্গলের মধ্যে এক দিক থেকে অন্যদিকে ছুটোছুটি করতে দেখছেও সে। ব্যাপারটা প্রথমে তার কাছে দৃষ্টিভ্রম কিংবা মনের ভুল মনে হয়েছিল। বিষয়টিকে পাত্তা না দিয়ে সে চুপচাপ চোখ বুজে থাকতে চেষ্টা করে। ওদিকে ন্যান্সি কিছুক্ষণ গল্পগুজব করে পরিবেশটাকে টেনশনমুক্ত ও হালকা রাখতে সক্ষম হয়।
এখানে আসার পথে কয়েকটি গাছে ঝুলতে থাকা মৃতদেহগুলোর কথা মনে পড়তেই এক ধরনের আতঙ্ক এসে ভর করে তার মনে। এই সুইসাইড ফরেস্টে আত্মহত্যা করা নারীপুরুষদের অতৃপ্ত আত্মারা নিশ্চয়ই ঘুরে বেড়ায় জঙ্গলজুড়ে। অশরীরি আত্মারা যদি এখন এখানে আসে তাহলে কী হবে— ভাবতেই সারা শরীর ভয়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে। ভয় পেয়ে ন্যান্সি তার যমজ বোন সামান্থার রেখে যাওয়া খাটানো তাঁবুর ভেতর ঢুকে পড়ে। ঢুকেই চেইন টেনে বন্ধ করে দেয় দরজা। তাঁবুর ভেতর ঢুকে নিজের মোবাইলের ফ্ল্যাশ লাইট জ্বালিয়ে বসে থাকে। সামান্থার ফেলে যাওয়া নোটবুকটির পৃষ্ঠা ওল্টাতে ওল্টাতে আনমনা হয়ে পড়ে। একসময় তার চোখে তন্দ্রা লেগে আসে। কিছু সময় পেরিয়ে যায় এভাবে।
রাত তখন গভীর। কেউ যেন ‘ন্যান্সি, ‘ন্যান্সি’ করে ডাকছে বলে মনে হয়, তার কাছে। ধড়মড় করে সে জেগে ওঠে। তার কাছে একসময় মনে হয়, সামান্থাই যেন তাকে ডাকছিল এতক্ষণ ধরে। স্থানকালপাত্র বিবেচনা না করে অস্থিরভাবে তাঁবুর চেইন খুলে বাইরে বেরিয়ে আসে সে। বাইরে বেরিয়ে চার্জার লাইটের স্বল্প আলোতে গাছের নিচে ঘুমিয়ে থাকা মাসুককে দেখতে পায়। তাকে না জাগিয়ে কান পেতে অনুমান করার চেষ্টা করে কোন দিক থেকে ডাকটা ভেসে এসেছিল।
তখন আবার স্পষ্ট শুনতে পায় ‘ন্যান্সি’, ‘ন্যান্সি’ ডাকটা। এবার নিজেকে স্থির রাখতে পারে না সে। মাসুককে না জাগিয়ে তাকে সঙ্গে না নিয়েই ন্যান্সি ছুটতে শুরু করে অন্ধকার জঙ্গলের মধ্যে। কোনদিকে যাচ্ছে সে, কোথায় যাচ্ছে কিছুই ঠাহর করতে পারে না। এখানকার কোনো কিছুই তো ন্যান্সি চেনে না। কিছুদূর যাবার পর সঙ্গে থাকা টর্চের আলোতে জাপানি স্কুল ইউনিফর্ম পরা এক কিশোরীকে সামনে দেখতে পায় সে। ন্যান্সি হাঁপাতে হাঁপাতে তার পরিচয় জানতে চায়, ‘এই যে মেয়ে, তোমার নাম কী, এত রাতে একা একা তুমি এই গহিন জঙ্গলে কী করছো? তুমি এখানে কীভাবে এলে?’
‘আমি মারুশি আকাহিতো। এই জঙ্গলে এসেছিলাম স্কুল থেকে বেড়াতে। বান্ধবীদের সাথে ঘুরে বেড়াচ্ছিলাম। হঠাৎ হারিয়ে যাই তাদের কাছ থেকে। এখন আমি একা একা জঙ্গলে ঘুরছি আর এখান থেকে বেরোনোর পথ খুঁজছি। কিন্তু পথ খুঁজে পাচ্ছি না। তুমি কী আমাকে সাহায্য করবে?’ কথাগুলো বলতে বলতে মেয়েটা ন্যান্সির হাত ধরে। অদ্ভুত ঠাণ্ডা তার হাতটা! জীবিত কোনো মানুষের হাত এত ঠাণ্ডা হয়ে কীভাবে?
আওকিগাহারা ফরেস্টের ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় ঘুরতে ঘুরতে হয়তো তার হাত-পা, শরীর ঠাণ্ডা হয়ে গেছে ভীষণভাবে, ন্যান্সি ভাবে। কিন্তু খুব ভালোভাবে তাকাতেই ন্যান্সি খেয়াল করে, স্কুল ইউনিফর্ম পরা থাকলেও মেয়েটার চোখ নেই, মুখের চামড়া ও মাংস বেশিরভাগ খুলে পড়ছে। এখনও কিছু চামড়া ও মাংস ঝুলে আছে। তার সাদা দাঁতগুলো বেরিয়ে এসেছে। মাথার চুল ঝরে পড়েছে। অর্ধেকও নেই। মাথার খুলি দেখা যাচ্ছে। কী বীভৎস!
এরকম একটা পরিস্থিতির মধ্যে তাকে পড়তে হবে, ন্যান্সি কল্পনাও করেনি। জায়গাটা খারাপ, এখানে নানা বিপদ ওত পেতে থাকে সবসময়— তেমন ধারণা থাকলেও এভাবে একসময় ভয়ংকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে ভাবেনি সে। এবার সে টের পায় ভয়ংকর এক প্রেতাত্মার কবলে পড়েছে। ভয়ে সারা শরীর ভয়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে তার। এই মেয়েটিই তাকে ডেকে ডেকে তাঁবুর মধ্য থেকে বাইরে বের করে এনেছে, এবার বুঝতে পারে ন্যান্সি। তার রাগ ধরে যায়, ‘তুমি আমাকে ডেকেছিলে? কেন ডেকেছিলে? জানতে চায় সে ঝাঁঝালো গলায়।
অনেক ভয় পেয়েছে সে। আবার প্রচণ্ড রাগও হচ্ছে তার। তখনই মেয়েটার গলার স্বরটা হঠাৎ বদলে যায়। কেমন নাকি স্বরে বলতে থাকে, ‘তুমি ভীষণ বোকা মেয়ে! আমি তোমাকে ডাকলাম, আর তুমি এই অন্ধকারে একা একা বেরিয়ে এসেছো। তুমি আমাকে চিনতে পারোনি এতক্ষণ! আমি মারুশি আকাহিতো। আওকিগাহারা ফরেস্টে এসে আত্মহত্যা করেছি চার সপ্তাহ আগে। এখন বুঝতে পারছি কাজটা করা ঠিক হয়নি। দারুণ আক্ষেপ হচ্ছে। এক ধরনের অতৃপ্তি নিয়ে রাত-দিন জঙ্গলে জঙ্গলে ঘুরে বেড়াচ্ছি। তোমাকে দেখে ভীষণ হিংসে হচ্ছে। তোমাকে জীবিত দেখে আমার ভেতরটা জ্বলেপুড়ে খাক হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আজ আমার কাছ থেকে তোমাকে কেউই বাঁচাতে পারবে না। এই রাতে তোমার সাহায্যে কেউ এগিয়ে আসবে না। তোমার সঙ্গে আসা বন্ধুটি ঘুমোচ্ছে বেঘোরে। এখন তোমাকেও আমার দলে মানে মরা মানুষদের দলে নিয়ে আসব। হাঃ হাঃ হাঃ… তোমাকেও মরতে হবে,’ বলে কেউ যেন ন্যান্সিকে শক্তভাবে জড়িয়ে ধরে। কিন্তু কাউকে দেখতে পায় না সে। দমবন্ধ হয়ে আসতে চায় তার।
নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে আপ্রাণ চেষ্টা করে ন্যান্সি। একসময় শরীরের সব শক্তি একসঙ্গে জড়ো করে এক ঝটকায় নিজেকে মুক্ত করতে সক্ষম ন্যান্সি। মুহূর্তেই অদৃশ্য হয়ে যায় মারুশি আকাহিতোর রূপ ধরে আসা তারই প্রেতাত্মা। তখন ন্যান্সি তার নিজের ভুল বুঝতে পারে। এই গহীন জঙ্গলে যেখানে ভুত-প্রেত অশরীরি আত্মাদের আনাগোনা সবসময়, এখানে আসতে সবাই যেখানে নিষেধ করেছিল মারাত্মক বিপদের আশঙ্কায়। গভীর রাতে অচেনা কারো ডাকে হুট করে তাঁবু থেকে বাইরে বেরিয়ে আসাটা মারাত্মক বোকামি হয়েছে। সামান্য টর্চের আলোর ওপর ভরসা করে জঙ্গলের মধ্যে ছুটতে ছুটতে এতদূর চলে এসেছে ।
‘ন্যান্সি’, ‘ন্যান্সি’… ডাকটা শুনে তাঁবু ছেড়ে ছুটতে ছুটতে জঙ্গলের মধ্যে কতদূর চলে এসেছে, অনুমান করতে পারে না সে। মারুশি আকাহিতোর পিছু পিছু ছুটতে ছুটতে সঙ্গী মাসুকের কথা ভুলেছিল সে। কিছুটা ধাতস্থ হতেই তার সব মনে পড়ে যায়। এখন তাকে কোথায় খুঁজে পাবে? সামান্থার খাটানো তাঁবুটা কোনদিকে রয়েছে, সে জানে না। কোন পথে পা বাড়াবে, ভাবতে থাকে ন্যান্সি।
তখন হঠাৎ দমকা হাওয়া বইতে শুরু করে গোটা জঙ্গলজুড়ে। আওকিগাহারা ফরেস্টে নাকি মাঝে মাঝে প্রচণ্ড ঝড় বয়ে যায়। হঠাৎ কোত্থেকে এই ঝড় আসে, আবার কোনদিকে চলে যায়— কেউ বলতে পারে না। ব্যাপারটা রহস্যজনক। এই আচমকা ঝড়ের কথা সার্জেন্ট শিনজি বলেছিল কথা প্রসঙ্গে। এটাকে সবাই ভুতুড়ে ঝড় হিসেবে অভিহিত করে। তাহলে সেই ভুতুড়ে ঝড়ের কবলে পড়েছে সে!
ঝড়ের বেগ বাড়ছে ক্রমেই। এখন নিজেকে নতুন এই বিপদ থেকে রক্ষা করবে কীভাবে? সাবধানে পা ফেলে চলতে হচ্ছে তাকে। কিন্তু হঠাৎ বুনো লতা জঙ্গলে ঢেকে থাকা বড় একটা গর্তে পড়ে যায় ন্যান্সি। এ ঘটনার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না সে। অন্ধকার গর্তে পড়ে বেশ কিছুক্ষণ ঝিম মেরে পড়ে থাকে সে।
এই গর্তের মধ্যে পড়ে থাকলে কিন্তু কেউ কোনোদিনই খুঁজে পাবে না তাকে। এভাবে চুপচাপ নীরবে এখানে পড়ে থাকলে উদ্ধার পাবে কীভাবে? এখন রাত কত কে জানে। হাতের ঘড়িটা তাঁবুতে খুলে রেখেছিল সে কী মনে করে। ঘড়িটা সঙ্গে থাকলে বুঝতে পারত, সকাল হতে কতটা সময় বাকি? সকাল হলে এখান থেকে উদ্ধারের একটা উপায় খুঁজে পাওয়া যেতে পারে।
গর্তের মধ্যে পড়ে বসে না থেকে ভেতরের অবস্থা যাচাই করাটা বুদ্ধিমানের কাজ বলে মনে করে ন্যান্সি। হামাগুড়ি দিয়ে অন্ধকারে এদিক ওদিকে এগিয়ে কিছুই আবিষ্কার করতে পারে না সে। এরপর উঠে বসে এবং তারপর দাঁড়িয়ে গর্তের ভেতরের চারপাশটা ভালোভাবে পরখ করে দেখতে শুরু করে।
তখনই একদিকে একটি গুহামুখ আবিষ্কার করে সে। সেই গুহার মধ্যেও গাঢ় অন্ধকার। কিন্তু গুহার মধ্যে একটি পথ এগিয়ে গেছে। অন্ধকারেই সবকিছু ঠাহর করতে পারে ন্যান্সি। হাতড়ে হাতড়ে সেই অন্ধকার গুহাপথ ধরে এগোতে থাকে। এভাবে এগিয়ে গিয়ে আরও বড় কোনো বিপদে না পড়ে যায়! সেরকম একটা দুশ্চিন্তা তাকে খোঁচাতে থাকে।
কিন্তু একসময় সামানে সামান্য আলোর আভাস দেখা যায়। যা পরমুহূর্তেই তাকে আশাবাদী করে তোলে। এবার সে দ্বিগুণ উৎসাহে গুহার পথ ধরে আলোর উৎসের দিকে ছুটতে থাকে। একসময় সেই আলো তার সামনে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। গুহার বাইরে দিনের স্পষ্ট আলো দেখতে পায় ন্যান্সি। দৌড়ে গুহামুখ অতিক্রম করে বাইরে বেরিয়ে আসে। আগের মতো আওকিগাহারা ফরেস্টের গাছপালা, লতাগুঞ্জ, ঝোপঝাড়পূর্ণ চেনা পরিবেশ দেখতে পায় সে। যাক, তাহলে শেষ পর্যন্ত জঙ্গলের অন্ধকার গুহার বিভীষিকা থেকে বাইরে বেরিয়ে আসতে পেরেছে সে। হাঁফ ছাড়ে সে কিছুটা। কিন্তু এক্ষুনি মাসুককে খুঁজে বের করতে হবে। তা না হলে কিছুই করতে পারবে না সে। এবার ন্যান্সি গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে তার সঙ্গীকে ডাকতে শুরু করে, ‘মাসুক, মাই ফ্রেন্ড, তুমি কোথায়, আমি হারিয়ে ফেলেছি তোমাকে। এখন খুঁজে বেড়াচ্ছি তোমাকে। মাসুক, তোমাকে না পেলে এই জঙ্গলে কীভাবে খুঁজবো আমার বোনটিকে…’
রাতে মাসুক তাঁবুর বাইরে একটি বড় গাছের নিচে মাটিতে শুয়েছিল। ক্লান্তিতে গভীর ঘুমে তলিয়ে যেতে বেশি সময় লাগেনি তার। কিন্তু হঠাৎ ঘুম ভাঙতেই চার্জার লাইটের মৃদু আলোয় সামান্থার খাটিয়ে যাওয়া তাঁবুর ভেতর ন্যান্সিকে না দেখে তার বুকের ভেতরটা ধক করে উঠেছিল। এই গভীর রাতে কোথায় গেল সে?
আশপাশটা দ্রুত চষে বেড়ায় সে। কিন্তু কোথাও ন্যান্সিকে খুঁজে পায় না মাসুক। গলা উঁচু করে তাকে ডাকে। কিন্তু কেউ তার ডাকে সাড়া দেয় না। মারাত্মক ভয়ে, আতঙ্কে কেমন যেন অপ্রকৃতিস্থ হয়ে পড়ে সে। ন্যান্সিকে বিপদ-আপদ থেকে আগলে রাখার জন্যেই তো সে তার সঙ্গে এসেছিল। এতক্ষণ পাশাপাশি রয়েছিল। ন্যান্সিকে এই জঙ্গলে একা ফেলে যায়নি সে। বলতে গেলে সে নিজের তাগিদেই তার সুরক্ষার দায়িত্ব নিয়েছিল। কিন্তু কিছুক্ষণ আগে তার গভীর ঘুমে ডুবে থাকার সময়টিতে ভয়ংকর ঘটনাটি ঘটে গেছে। সে কিছুই টের পায়নি। এ ঘটনার জন্য তার নিজেকে মারাত্মক অপরাধী মনে হতে থাকে। এখন কী হবে, ন্যান্সিকে এই অন্ধকার রাতে কোথায় খুঁজতে যাবে সে? সে কোন দিকে গেছে? কোথায়, কোন বিপদে পড়েছে কিনা কিছুই তো জানতে পারছে না। গহীন জঙ্গলে আশেপাশে কারা যেন ফিসফাস করে কথা বলছে। ধপ্ ধপ্ পা ফেলার শব্দও পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু তেমন কাউকে তো দেখা যাচ্ছে না। অশরীরি আত্মারা এখানে রাতের অন্ধকারে ঘুরে বেড়ায়। হয়তো তাদের ফিসফাঁস শব্দ শোনা যাচ্ছে।
জীবনে কোনোসময়ে এরকম অসহায় অবস্থায় পড়েনি মাসুক। সহকর্মী ন্যান্সি ব্রাউনের বিপদে পাশে থাকতে এখানে এসে ভয়ংকর পরিস্থিতিতে পড়েছে। এভাবে কতক্ষণ নিজেকে রক্ষা করতে পারবে সে, ভাবতে থাকে। ন্যান্সিকে এই জঙ্গলে কোথায় খুঁজবে সে? এতসব ভাবতে ভাবতে দিশেহারা হয়ে পড়ে। এভাবে বেশ কিছুটা সময় পেরিয়ে যায়। একসময় দিনের আলো ফুটতে শুরু করলে মনে সাহস ফিরে পায় যেন সে। দিনের আলো আরও একটু বেশি ছড়িয়ে পড়তেই স্টিভ জঙ্গলের মধ্যে ন্যান্সিকে খুঁজতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। মাসুক অনেকটা পাগলের মতো উদভ্রান্ত হয়ে এদিকে ওদিক ছুটোছুটি করতে থাকে। কিন্তু এভাবে ন্যান্সিকে কী খুঁজে পাওয়া সম্ভব? নিজেকে প্রশ্ন করে সে। তাকে যদি শেষ পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া না যায় তাহলে কী হবে?
আর কিছু ভাবতে পারে না সে।
এভাবে আরও কিছুটা সময় পেরিয়ে যতেই হঠাৎ আশেপাশে কোথাও কারো ডাক শুনতে পায় মাসুক। সেই ডাকের উৎস খুঁজতে ছুটে যায় সে। কাছাকাছি যেতেই স্পষ্ট শুনতে পায় ন্যান্সি তাকে ডাকছে প্রাণপণে। তার চড়া গলায় চিৎকারের শব্দ আওকিগাহারা ফরেস্টের সব নীরবতা ভেঙে ছড়িয়ে পড়ছে। অনেক আনন্দে হঠাৎ মনটা উৎফুল্ল হয়ে ওঠে তার। বড় একটি গাছের নিচে দাঁড়িয়ে ন্যান্সি ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে।
সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই তাকে দেখে যেন প্রাণ ফিরে পায় ন্যান্সি। আবার আর্তনাদ করে কেঁদে ওঠে সে। আমি রাতভর যে ভয়ংকর সব অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি তা শুনলে মাসুক তোমার রক্ত হিম হয়ে জমে যাবে। আমি যে বেঁচে আছি— এটা এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না। কিন্তু আমি সামান্থাকে না পেলে এখান থেকে যেতে পারব না। তা না হলে এখনই এই জঙ্গল ছেড়ে চলে যেতাম। সকালের সময়টা নান্সিকে নিয়ে জঙ্গলের চারপাশটা খুঁজে বেড়ায় মাসুক। কয়েকটা বড় বড় গুহায় ঢুকে তারা অনেক দূর পর্যন্ত ঘুরে আসে। কিন্তু কোথাও সামান্থাকে খুঁজে পায় না।
‘তাহলে কী বোনটাকে আমি উদ্ধার করতে পারলাম না, সে সত্যি সত্যি হারিয়ে গেল এই পৃথিবী থেকে। সামান্থা, বোন আমার। ক্ষমা করে দিস আমাকে। আমি পারলাম না…, বলে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকে ন্যান্সি।
তার পিঠে হাত বুলিয়ে সান্ত্বনা দেয় মাসুক। সে নিজেও বেশ ভেঙে পড়েছে। এতটা ঝুঁকি নিয়ে এখানে এসে কিছু হলো না। সামান্থাকে এখনও খুঁজে পেল না তারা।
সকাল এগারোটা নাগাদ সার্জেন্ট শিনজি তানাকা সঙ্গে বিশাল সংখ্যক চৌকষ কমান্ডো নিয়ে হাজির হয়। এরপর আওকিগাহারা জঙ্গলে তারা চিরুনি অভিযান শুরু করে। সম্ভাব্য জায়গাগুলোতে অনুসন্ধান চালায়। সামান্থার খোঁজে তাদের সাঁড়াশি অভিযান দিনভর চলতে থাকে। বিকেলের দিকে যখন কমান্ডো বাহিনীর সদস্যরা কিছুটা ক্লান্ত, অবসন্ন হয়ে বিশ্রাম নিচ্ছিল তখন কেউ একজন পাশের একটি গুহা থেকে ক্ষীণ গলার কারো আর্তনাদ শুনতে পেয়ে কান খাড়া করে। সতর্কভাবে সেই আর্তনাদটা শোনার চেষ্টা করে। প্রথমে তার নিজের মনের ভুল কিংবা হ্যালুসিনেশন মনে হলেও একটানা বেশ কিছু সময় ধরে কান পেতে শোনার পর নিশ্চিত হয়। সঙ্গে সঙ্গে সে কমান্ডো দলের অন্যান্যদের ব্যাপারটা জানায়। বিশ্রাম নেওয়া বাদ দিয়ে একসঙ্গে সবাই আবার তৎপর হয়ে ওঠে। আওকিগাহারা ফরেস্টে সৃষ্টির শুরু থেকে এখানে বেশ কিছু গুহা তৈরি হয়েছে। যেগুলো বিপজ্জনক এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে রহস্যময়ও। জাপানি সেনাবাহিনীর উদ্ধারকারী কমান্ডো দল সবগুলো রহস্যময় গুহার কথা ওয়াকিবহালও নয়। তেমনি একটি গুহা ছিল তাদের খুব কাছেই। সবখানে অনুসন্ধান চালানো হলেও এই গুহায় তারা যায়নি। সামান্থাকে পাওয়া যায় ফুগাকো উইন্ড কেভের ভেতরে।
এই গুহাটিকে সাধারণত সবাই ভুতের গুহা হিসেবে চেনে। এখানে নাকি জঙ্গলে আত্মহত্যাকারী সবার অতৃপ্ত আত্মারা থাকে। তারা প্রায়ই নানা রূপ ধারণ করে আওকিগাহারা ফরেস্টে আসা মানুষজনদের ওপর চড়াও হয়। বিভিন্নভাবে প্ররোচিত করে, বিভ্রান্ত করে এই ফুগাকো উইন্ড কেড মানে ভুতের গুহা হিসেবে পরিচিত এ জায়গায় নিয়ে আসে এবং আটকে রাখে। তাদের প্রতিশোধের শিকার হওয়া মানুষ গুহার মধ্যে আটকে থাকে। দিনের পর দিন অনাহারে, পানির অভাবে ডিহাইড্রেশন ও হাইপোথারমিয়ার শিকার হয়ে মারা যায়। পরে তাদের মৃতদেহ খুঁজে পাওয়া যায় না। রহস্যজনকভাবে অন্তর্ধানের শিকার হয়ে সামান্থাও মরতে বসেছিল। ব্যাপক অনুসন্ধান না চালালে এবং এখানে রেসকিউ কমান্ডো দল সময়মতো এসে উদ্ধারকাজ না চালালে শেষ পর্যন্ত অভিশপ্ত এই জঙ্গলে তারও করুণ মৃত্যু ঘটত।

শেয়ার FacebookThreadsBluesky

আরও যেসব নিউজ পড়তে পারেন

শক্তি :: মোহিত কামাল

July 11, 2025

অদম্য কলাগাছ :: গাজী তানভীর আহমদ

July 5, 2025

রত্নদ্বীপের খোঁজে :: প্রিন্স আশরাফ

July 5, 2025

ফুলে কাঁটা :: বিশ্বজিৎ দাস

July 5, 2025

হৈমন্তী : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

July 3, 2025

সাম্প্রতিক খবর

  • সৈয়দ মুজতবা আলীর রম্যরচনা ‘খোশগল্প’

    July 12, 2025
  • মঞ্চায়ন হয়েছে নাটক ‘৪০৪ : নাম খুঁজে পাওয়া যায় নি’

    July 12, 2025
  • ভারতে বিমান দুর্ঘটনার রহস্য উদঘাটন!

    July 12, 2025
  • পুরান ঢাকায় ব্যবসায়ীকে নৃশংস হত্যা, চারজন গ্রেপ্তার

    July 11, 2025
  • ট্রাম্পের শুল্ক হুমকি : দেশগুলোর প্রতিক্রিয়া ও বাজারের অবস্থান

    July 11, 2025

BDOUTLOOK.COM

নির্বাহী সম্পাদক : কাদের বাবু

  • হোম
  • দেশ
  • বিশ্ব
  • অর্থবাণিজ্য
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • মতামত
  • শিল্পসাহিত্য
    • কবিতা ও ছড়া
    • গল্প
    • প্রবন্ধ-আলোচনা
    • রম্য
    • শিশুসাহিত্য
    • শিল্পসাহিত্যের খবর

bdoutlooknews@gmail.com

  • Privacy Policy
BDOUTLOOK
  • হোম
  • দেশ
  • বিশ্ব
  • অর্থবাণিজ্য
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • মতামত
  • শিল্পসাহিত্য
    • কবিতা ও ছড়া
    • গল্প
    • প্রবন্ধ-আলোচনা
    • রম্য
    • শিশুসাহিত্য
    • শিল্পসাহিত্যের খবর