BDOUTLOOK
  • হোম
  • দেশ
  • বিশ্ব
  • অর্থবাণিজ্য
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • মতামত
  • শিল্পসাহিত্য
    • কবিতা ও ছড়া
    • গল্প
    • প্রবন্ধ-আলোচনা
    • রম্য
    • শিশুসাহিত্য
    • শিল্পসাহিত্যের খবর
BDOUTLOOK
  • হোম
  • দেশ
  • বিশ্ব
  • অর্থবাণিজ্য
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • মতামত
  • শিল্পসাহিত্য
    • কবিতা ও ছড়া
    • গল্প
    • প্রবন্ধ-আলোচনা
    • রম্য
    • শিশুসাহিত্য
    • শিল্পসাহিত্যের খবর
শিরোনাম
গাজায় অবশেষে যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা
২০২৬ সালের রমজানের আগেই জাতীয় নির্বাচন? ইউনূস-তারেক বৈঠকে ইঙ্গিত
কী কথা হলো?
বাণিজ্য যুদ্ধে বিশ্ব!
টাইম ট্রাভেল কি বাস্তবে সম্ভব
Sunday | July 13 | 2025
BDOUTLOOK
BDOUTLOOK
  • হোম
  • দেশ
  • বিশ্ব
  • অর্থবাণিজ্য
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • মতামত
  • শিল্পসাহিত্য
    • কবিতা ও ছড়া
    • গল্প
    • প্রবন্ধ-আলোচনা
    • রম্য
    • শিশুসাহিত্য
    • শিল্পসাহিত্যের খবর

News 24 Hours BDOUTLOOK.COM

রম্য

সৈয়দ মুজতবা আলীর রম্যরচনা ‘খোশগল্প’

বিডিআউটলুক July 12, 2025
July 12, 2025
3

যখন তখন লোকে বলে, ‘গল্প বলো’।

এ বাবদে স্বর্গত ক্ষিতিমোহন সেনের একাধিক রসাল উত্তর আছে। তিনি বাঙাল উচ্চারণে তখন বলতেন, ‘ঘর লেপ্যা মুছ্যা, আতুড় ঘর বানাইয়া,মা ষষ্ঠীর গেছে বাচ্যা চাইলেই তো আর বাচ্যা পয়দা হয় না! নয় মাস দশ দিন সময় লাগে’। অর্থাৎ গল্পের সময় এলে তবে গল্প বেরবে।

ইহুদিদের গল্প এর চেয়ে একটু ভালো। কেন সে-কথা পরে বলছি।

এক ভালো কথক রাব্বী (ইহুদিদের পণ্ডিত পুরুৎ) অনেক খানি হাঁতার পর অতিথি হয়ে উঠেছেন এক পরিচিত চাষার বাড়িতে । চাষা-বৌ জানতো, রাব্বী গল্প বলতে ভারী ওস্তাদ। পাদ্য-অর্ঘ্য না দিয়েই আরম্ভ করেছে, ‘গল্প বলুন।’ ইতিমধ্যে চাষা ভিন গাঁয়ের মেলা থেকে ফিরছে একটা ছাগী কিনে। চাষা-বৌ সঙ্গে সঙ্গেই গল্পের বায়না বন্ধ করে দুইতে গেছে ছাগীকে-ইহুদি তো! এক ফোঁটা দুধ বেরল না দেখে চাষা-বৌ বেজার মুখে স্বামীকে শুধালো, ‘এ কি ছাগী আনলে গো?’ বিচক্ষন চাষা হেসে বলল, ‘ওটা হেঁটে হেঁটে হয়রান হয়ে গিয়েছে। দানাপানি দাও- দুধ ঠিকই দেবে।’ রাব্বী সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠলেন,‘সেই কথাই তো হচ্ছে। দানাপানি না পেলে আমিই বা গল্প বলি কি করে?’

ক্ষিতিমোহন বাবু ইহুদি ছিলেন না বলে নিজের সুবিধেটা উত্তরের মারফতে গুছিয়ে নিতে পারেন নি- ইহুদি পারে।

এ গল্পটা মনে রাখবেন। কাজে লাগবে। অন্তত চা-টা পাঁপড় ভাজাটা আসবে নিশ্চয়ই।

সঙ্গে ইহুদি, স্কটম্যান সাইকেল চালাতে আরম্ভ করে দেবেন। সে আবার কি? এসোসিয়েশন অব আইডিয়াজ, অর্থাৎ এক চিন্তার খেই ধরে অন্য চিন্তা, সেটা থেকে আবার অন্য চিন্তা, এই রকম করে করে মোকামে পৌঁছে যাবেন। এখনো বুঝতে পারালেন না? তবে একটা গল্প দিয়েই বোঝাই।

সেই যে বাঁদর ছেলে কিছুতেই শটকে শিখবে না, এ ছেলে তেমনি পেটুক-যা-কিছু শিখতে দেওয়া হয়, পৌঁছে যাবেই যাবে মিষ্টি সন্দেশে। তাকে এবং দশং শিখিতে দেওয়া হয়েছে। বলছে, ‘একং, দশং, শতং, সহস্র, অযুত, লক্ষ্মী, সরস্বতী-’ 

মন্তব্যঃ ‘লক্ষ্য’ না বলে বলে ফেলেছে ‘লক্ষী’ এবং তিনি যখন দেবী তখন তাঁর এসোসিয়েশন অব আইডিয়াজ থেকে চলে গেছে আরেক দেবী সরস্বতীতেঃ তার পর বলছে, 

লক্ষ্মী, সরস্বতী, গণেশ, কার্তিক, অগ্রহায়ণ-’
(মন্তব্যঃ ‘মাঘ’কে আমরা ‘মাগ’ই উচ্চারণ করে থাকি। তার থেকে ‘ছেলেপিলে’)

‘পিলে, জ্বর, সর্দি, কাশী-’

মন্তব্যঃ তার থেকে যাবতীয় তীর্থ!-

‘কাশী, মথুরা, বৃন্দাবন, গয়া, পুরী-’

‘পুরী, সন্দেশ, রসগোল্লা, মিহিদানা, বোঁদে, খাজা, লেডিকিনি-’

ব্যাস! পুরী তো খাদ্য এবং ভালো খাদ্য, অতএব তারা এসোসিয়েশনে বাদবাকি উত্তম উত্তম আহারাদি! পৌঁছে গেল মোকামে।  

এই এসোসিয়েশন অব আইডিয়াজ থেকে গল্পের খেই ধরে নেওয়া যায়।

ইহুদির কথা যখন উঠেছে তখন ইহুদির কঞ্জুসির, স্কটম্যানের কঞ্জুসীর গল্প আরম্ভ করে দিতে পারেন। এগুলোকে আবার সাইকেল বলা হয়। এটা হল কঞ্জুসির সাইকল- অর্থাৎ দুনিয়ার যত হাড়কিপটেমির গল্প এই সাইকলে ঢুকে যাবে। ঠিক সেইরকম আরো গন্ডায় গন্ডায় সাইক্ল আছে। স্ত্রী কর্তৃক স্বামীর উপর অত্যাচার,  স্ত্রীকে লুকিয়ে পরস্ত্রীর সঙ্গে ফষ্টিনষ্টি, ট্রেন লেটের সাইকল, ডেলি পেসেঞ্জারের সাইকল, চালাকির সাইকল।    

চালাকির সাইকলকে এদেশে গোপালভাঁড় সাইকলই বলা হয়- অর্থাৎ চালাকির যে কেনো গল্প আপনি গোপালের নামে চালিয়ে যেতে পারেন, কেউ কিছু বলবে না। ইংরিজিতে এটাকে ‘ব্ল্যাঙ্কেট’ ‘অমনিবাস’ গল্পগোষ্ঠীও বলা চলে।   

গোপালের অপজিট নাম্বার আর্থাৎ তাঁরই মত চালাক ছোকরা প্রায় সব দেশেই আছে। প্রাচীন অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরির রাজদরবারে ছিলেন মিকশ, কিন্তু দুঃখের বিষয় তাঁর অধিকাংশ গল্পই সমাজে কল্কে পায় না, ভিয়েনার ভাষায় গেজেল-শাফটফেইস নয় (সমাজে অচল)। সেদিক দিয়েও গোপালের সঙ্গে তাঁর গলাগলি।    

কিন্তু এ সংসারে বুদ্ধিমানের চেয়ে আহাম্মকের সংখ্যাই বেশী, তাই আহাম্মকীর সাইকলই পাবেন দুনিয়ার সর্বত্র। অধুনা কেন্দ্রের এক প্রাক্তন মন্ত্রীকে কেন্দ্র করে এক বিরাট সাইকল তৈরি হয়েছে এবং হছে। এর জুড়ি ভিয়েনাতে গ্রাফ ফন ববে, পশ্চিম ভারতে শেখ চিল্লি ( আমার ঠিক মনে নেই, তবে বোধ করি শ্রীযুক্তা সীতা শান্তার হিন্দুস্তানী উপকথাতে এর গল্প আছে)  এবং সুইটজারল্যান্ডে পল্ডি।     

পল্ডির গল্প অফুরন্ত। আমি গত দশ বছর ধরে একখানা সুইস পত্রিকার গ্রাহক। প্রতি সপ্তাহে পল্ডি নিয়ে একটি ব্যঙ্গচিত্র থাকে। চলেছে তো চলেছে। এখনো তার শেষ নেই। কখনো যে হবে মনে হয় না।

কিছুমাত্র না ভেবে গোটা কয়েক বলি:-
বন্ধু:  জানো পল্ডি অক্সিজেন ছাড়া মানুষ বাঁচতে পারে না, ১৭৭০-এ ওটা আবিষ্কার হয়।
 পল্ডি:  তার আগে মানুষ বাঁচতো কি করে?

কিংবা

 পল্ডি: (আমেরিকান টুরিস্টকে এক ক্যাসল দেখিয়ে) ঐ ওখানে আমার জন্ম হয়। আপনার জন্ম হয় কোনখানে?
 টুরিস্ট: হাসপাতালে।
পল্ডি: সর্বনাশ! কি হয়ে ছিলো আপনার?

কিংবা

বাড়িওয়ালী:   সে কি মিঃ পল্ডি? দশ টাকার মনিওর্ডার,আর আপনি দিলেন পাঁচ টাকা বখশিশ!
পল্ডি: হেঁ,হেঁ, ঐ তো বোঝো না আর কিপ্টেমি করে।ঘন ঘন আসবে যে!

কিংবা

পল্ডি ঘোড়ার রেসে গিয়ে শুধোচ্ছেন: ঘোড়াগুলো এরকম পাগল-পারা ছুটছে যে!
বন্ধু: কি আশ্চর্য, পল্ডি, তাও জানো না! যেটা ফার্স্ট হবে সেটা প্রাইজ পাবে যে।
পল্ডি: তাহলে অন্যগুলো ছুটছে কেন?

এর থেকে আপন রেসের গল্পের মাধ্যমে কুট্টি সাইকলে অনায়াসে চলে যেতে পারেন। যেমন, কুট্টি রেসে গিয়ে বেট করেছে এক অতি নিকৃষ্ট ঘোড়া। এসেছে সর্বশেষে। তার এক বন্ধু- আরেক কুট্টি-ঠাট্টা করে বললে, ‘কি ঘোড়া (উচ্চারণ অবশ্যন ‘গোরা’- আমি বোঝাবার সুবিধের জন্য সেগুলো বাদ দিয়েই লিখছি) লাগাইলায় মিয়া! আইলো সকলের পিছনে!’
কুট্টি দমাবার পাত্র নয়। বললে,‘কন কি কত্তা! দ্যাখলেন না, যেন বাঘের বাচ্চা- বেবাকগুলিরে খ্যাদাইয়া লইয়া গেল!’

কুট্টি সম্প্রদায়ের সঙ্গে পুব-পশ্চিমে উভয় বাঙলার রসিক মন্ডলীই একদা সুপরিচিত ছিলেন। নবীনদের জানাই, এরা ঢাকা শহরের খান্দানী গোষ্ঠী। মোগল সৈন্যবাহিনীর শেষ ঘোড়সওয়ার বা ক্যাভালরি। রিকশার অভিসম্পাতে এরা অধুনা লুপ্ত প্রায়। বহু দেশ ভ্রমণ করার পর আমি নির্ভয়ে বলতে পারি, আশিক্ষিত জনের ভিতর এদের মত  witty (হাজির-জবাব এবং সুরসিক বাক-চতুর) নাগরিক আমি হিল্লী-দিল্লী কলোন-বুলোন কোথাও দেখিনি।


এই নিন একটি ছোট ঘটনা। প্রথম পশ্চিম বাঙলার ‘সংস্করণ’টি দিচ্ছি। এক পয়সার তেল কিনে ঘরে এনে বুড়ি দেখে তাতে একটা মরা মাছি। দোকানীকে গিয়ে অনুযোগ জানাতে সে বললে, ‘এক পয়সার তেলে কি তুমি মরা হাতি আসা করেছিলে!’

এর রাশান সংস্করণটি আরো একটু কাঁচা। এক কপেকের (প্রায় এক পয়সা) রুটি কিনে এনে ছিঁড়ে দেখে তাতে এক টুকরো ন্যাকড়া। দোকানীকে অনুযোগ করাতে সে বললে, ‘এক কপেকের রুটির ভিতর কি তুমি আস্ত একখানা হীরের টুকরো আশা করেছিলে?’

এর ইংরিজি ‘সংস্করণে’ আছে,এক ইংরেজ রমণী এক শিলিঙে এক জোড়া মোজা কিনে এনে বাড়িতে দেখেন তাতে একটি ল্যাডার ( অর্থাৎ মই-মোজার একটি টানা সুতো ছিঁড়ে গেলে পড়েনের সুতো একটার পর একটা যেন মইয়ের এক একটা ধাপ-কাঠির মত দেখায় বলে ওর নাম ল্যাডার)। দোকানীকে অনুযোগ জানাতে সে বললে, ‘এক শিলিঙের মোজাতে কি আপনি, ম্যাডাম, একখানা রাজকীয় মার্বেল স্টেয়ারকেস আশা করেছিলেন!’

এবার সর্বশেষ শুনুন কুট্টি সংস্করণ। সে একখানা ঝুরঝুরে বাড়ি ভাড়া দিয়েছে পুলিশের এস আই’কে। বর্ষাকালে কুট্টিকে ডেকে নিয়ে তিনি দেখাচ্ছেন, এখানে জল ঝারছে, ওখানে জল পড়ছে, জল জল, সর্বত্র জল পড়ছে। পুলিশের লোক বলে কুট্টি সাহস করে কোনো মন্তব্য বা টিপ্পনী কাটতে পারছে না- যদিও প্রতি মুহূর্তেই মাথায় খেলছে বিস্তর। শেষটায় না থাকতে পেরে বেরবার সময় বললে, ‘ভাড়া তো দ্যান কুপ্পে পাঁচটি টাকা। পানি পড়বে না তো কি শরবৎ পরবে?’

কুট্টি সম্বন্ধে আমি দীর্ঘতর আলোচনা অন্যত্র করেছি –পাঠক সেটি পড়ে দেখতে পারেন। আমার শোক-পরতাপের অন্ত নেই যে, এ সম্প্রদায় প্রায় নিশ্চিহ্ন হতে চললো। আমি জানি এদের উইট, এদের রিপোর্ট লেখাতে ও ছাপাতে সঠিক প্রকাশ করা যায় না; কিন্তু তৎসত্ত্বেও এ সম্প্রদায় সম্পূর্ণ লোপ পাওয়ার পূর্বে পুব বাঙলায় কোনো দরদী জন যদি এদের গল্পগুলির একটি সংগ্রহ প্রকাশ করেন, তবে তিনি উভয় বাঙলার রসিকমন্ডলির ধন্যবাদার্হ হবেন।

পাঠক ভাববেন না, আমি মিষ্ট মিষ্ট গল্প বলার জন্য এ প্রবন্ধের অবতারণ করেছি। আদপেই না। তাহলে আমি অনেক উত্তম উত্তম গল্প পেশ করতুম। এখানে গল্পের সাইকল ও এসোসিয়েশন অব আইডিয়াজ, কিংবা বলতে পারেন এসোসিয়েশন অব স্টোরিজ বোঝাবার জন্য যে সব গল্পের প্রয়োজন আমি তারই কাঁচা পাকা সব কিছু মিশিয়ে কয়েকটি গল্প নিবেদন করেছি মাত্র।( এবং সত্যি বলতে কি আসলে কোনো গল্পই কাঁচা কিংবা পাকা, নিরেস কিংবা সরেস নয়। মোকা-মাফিক জুৎসই করে যদি তাগতমাফিক গল্প বলতে পারেন, তবে অত্যন্ত কাঁচা গল্পও শ্রোতৃমন্ডলীর চিত্তহরণ করতে সমর্থ হবে, পক্ষান্তরে তথাকথিত শ্রেষ্ঠ গল্পও যদি হঠাৎ বেমক্কা বলে বসেন, তবে রসিকমন্ডলী বিরক্ত হয়ে ভুরু কুঁচকাবেন।)  

গল্প বলার আর্ট গল্প লেখার আর্টেরই মত বিধিদত্ত প্রতিভা ও সাধনা সহযোগে শিখতে হয় –এবং দুই আর্টই ভিন্ন। অতি সামান্য, সাধারণ গল্পও পূজনীয় স্বর্গত ক্ষিতিমোহন অতি সুন্দর রূপ দিয়ে প্রকাশ করতে পারতেন-অথচ তাঁর লেখা রচনায় সে-জিনিসের কোনো আভাসই পাবেন না। 

পক্ষান্তরে শ্রদ্ধেয় স্বগর্ত রাজশেখরবাবু লিখে গিয়েছেন বিশ্বসাহিত্যের কয়েকটা শ্রেষ্ঠ হাসির গল্প, অথচ বৈঠক মজলিসে ছিলেন রাশভারী প্রকৃতির।

 গল্প বলার সময় কেউ কেউ অভিনয়ও যোগ করে থাকেন। সুলেখক অবধূত এ বাবদে একটি পয়লা নম্বরী ওস্তাদ। যদি কখনো তাঁর সঙ্গে আপনার দেখা হয় তবে চন্দননগর চূঁচড়ো অঞ্চলের বিশেষ সম্প্রদায়ের লোক কিভাবে নিমন্ত্রন রক্ষা করেন তার বর্ণনা দিতে বলবেন। কিন্তু এ প্রবন্ধের গোড়াতে যে সাবধান বাণী দিয়ে আরম্ভ করেছি সেটি ভুলবেন না। বেমক্কা যখন তখন অনুরোধ করেছেন কি মরেছেন। অবধূত তেড়ে আসবে। অবধূত কেন, রসিকজন মাত্রই তেড়ে আসে।এই তো সেদিন অবধূত বলছিল, ‘জানেন, মাস কয়েক পূর্বে ১১০ ডিগ্রির গরমে যখন ঘন্টাতিনেক আইঢাই করার পর সবে চোখে অল্প একটু তন্দ্রা লেগে আসছে এমন সময় পাড়া সচকিত করে টেলিগ্রাফ পিয়ন ঢঙের সজোরে কড়া নাড়া। দরজা খুলতে দেখি দুই অচেনা ভদ্রলোক।কড়া রোদ্দুর, রাস্তার ধুলোমুলোয় জড়িয়ে চেহারা পর্যন্ত ভালো করে দেখা যাচ্ছে না। কি ব্যাপার?’ ‘আজ্ঞ,আদালতে শুনতে পেলুম, আমাদের মোকদ্দমা উঠতে ঘণ্টাদুয়েক বাকি, তাই আপনার সঙ্গে দু’দন্ড রসালাপ করতে এলুম।”

আমি অবধূতকে শুধোলুম ‘আপনি কী করলেন?’  অবধূত উদাস নয়নে ধানক্ষেতের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেললে। ‘আমি আর বেশি ঘ্যাঁটালুম না। কারণ মনে পড়ে গেল, মোটামুটি ঐ সময়ে চুঁচড়োর জোড়াঘাটের কাছে, সদর রাস্তার উপর দুটো লাশ পাওয়া যায়।খুনী ফেরার। এখনো ব্যাপারটার হিল্লে হয়নি।’

ভালো করে গল্প বলতে হলে আরো মেলা জিনিস শিখতে হয়-এবং সেগুলো শেখানো যায় না। আমি স্বয়ং তো আদৌ কোনো প্রকারের গল্প বলতে পারিনে। প্লট ভুলে যাই, কি দিয়ে আরম্ভ করেছিলুম, কি দিয়ে শেষ করবো তার খেই হারিয়ে ফেলি, গল্প আরম্ভ করার সঙ্গে সঙ্গে নিজেই খিল খিল করে হাসতে আরম্ভ করি, ‘ঐযে কি বলছিলুম’ প্রতি দু’সেকেন্ড অন্তর আসে, ইতিমধ্যে কেউ হাই তুললে তাকে তেড়ে যাই, শেষটায় সভাস্থ কেউ দয়াপরবশ হয়ে গল্পটা শেষ করে দেন-কারণ যে গল্পটি আমি আরম্ভ করেছিলুম সেটি মজলিস ইতিপূর্বে আমারই মুখে, ছেঁড়া-ছেঁড়া ভাবে অন্তত পঞ্চাশবার শুনে জোড়া-তাড়া দিয়ে খাড়া করতে পেরেছেন। তদুপরি আমার জিভে ক্রনিক বাত, আমি তোৎলা এবং সামনের দুপাটিতে আটটি দাঁত নেই।

 তাহলে শুধোবেন, তবে তুমি এ প্রবন্ধ লিখছ কেন? উত্তর অতি সরল। ফেল করা স্টুডেন্ট ভালো প্রাইভেট ট্যুটর হয়। আমি গল্প বলার আর্টটা শেখার বিস্তর কষ্ট করে ফেল মেরেছি বলে এখন এর টিউটরি লাইনে আমিই সম্রাট।

কিন্তু এ আর্ট এখন  মৃতপ্রায়। কারণটা বুঝিয়ে বলি।

পূর্বেই নিবেদন করেছি, গল্পের কাঁচা পাকা কিছুই নেই, মোকা-মাফিক বলতে পারা, এবং বলার ধরনের উপর ঐ জিনিস সম্পূর্ণ নির্ভর করে।

 এ তত্ত্বটি সব চেয়ে ভালো করে জানেন, বিশ্‌ব-গল্পকথক-সম্প্রদায় (ওয়ার্ল্ড স্টরি-টেলারস ফেডারেশন)। মার্কিন মুল্লুকে প্রতি বৎসর এঁদের অধিবেশন হয় এবং পৃথিবীর সর্বকোণ থেকে ডাঙর সদস্যরা সেখানে জমায়েত হন। এঁরা বিলক্ষণ জানেন, গল্প মোকা-মোফিক এবং কায়দা-মাফিক বলতে হয়। চীনের ম্যান্ডারিন সদস্য যে গল্পটি বলতে যাচ্ছেন সেটি হয়তো সবচেয়ে ভালো বলতে পারেন বঙ্গো-ইন-কঙ্গোর সদস্য লুসাবুবু। ওদিকে পৃথিবীর তাবৎ সরেস গল্পই এঁরা জানেন। কী হবে চীনার কাঁচা ভাষায় পাকা দাড়িওয়ালা ঐ গল্প তিনশ তেষট্টি বারের মত শুনে! অতএব এরা একজোটে বসে পৃথিবীর সবকটি সুন্দর সুন্দর গল্প জড়ো করে তাতে নম্বর বসিয়ে দিয়েছিন।

যেমন মনে করুন, কুট্টির সেই পানি পড়ার বদলে শরবৎ পড়ার গল্পটার নম্বর ১৯৮।

এখন সে অধিবেশনে গল্প বলার পরিস্থিতিটা কিরূপ?

যেমন মনে করুন, কথার কথা বলছি, সদস্যরা অধিবেশনের গুরু গুরু কর্মভার সমাধান করে ব্যানকুয়েট খেতে বসেছেন। ‘ব্যানকুয়েট’ বললুম বটে, আসলে অতি সস্তা লাঞ্চ-‘লাঞ্ছনা’ও বলতে পারেন, একদম দা’ঠাকুরের পাইস হোটেল মেলের। এক মেম্বর ডালে পেলেন মরা মাছি।অমনি তাঁর মনে পড়ে গেল ‘সেই বুড়ির এক পয়সার তেলে মরা,’কিংবা ‘পানি না পড়ে শরবৎ পড়বে নাকি’ গল্প। তিনি তখন গল্পটি না বলে শুধু গম্ভীরকন্ঠে বললেন নম্বর ‘১৯৮’!

সঙ্গে সঙ্গেই হো হো অট্টহাস্য। একজন হাসতে হাসতে কাৎ হয়ে পাশের জনের পাঁজরে খোঁচা দিয়ে বার বার বলছেন, ‘শুনলে? শুনলে? কি রকম একখানা খাসা গল্প ছাড়লে?’  আরেক জনের পেটে খিল ধরে গিয়েছে। তাকে মাসাজ করতে শুরু করেছেন আরেক সদস্য।

অতএব নিবেদন, এসব গল্প শিখে আর লাভ কি? এদেশেও কালে বিশ্ব-গল্পকথক-সম্প্রদায়ের ব্রাঞ্চ-আপিস বসবে, সব গল্পের কপালে কপালে নম্বর হেঁকে যাবে। তারপর নীলাম। ১৯৮ নম্বর বলতে না বলতেই এসোসিয়েশন অব আইডিয়াজে কারো মনে পড়ে যাবে অন্য গল্প- তিনি হাঁকবেন ২৭২। তারপর ৩১৮-আর সঙ্গে সঙ্গে হাসির হররা, রগড়ের গড়ীয়াহাট- আপনি আমি তখন কোথায়?

 হ্যাঁ,অবশ্য যতদিন না ব্রাঞ্চ-আপিস কায়েম হয় ততদিন অবশ্য এইসব টুটা-ফুটা গল্প দিয়ে ত্রি-লেগেড রেস রান করতে পারেন। কিংবা দুষ্ট ছেলেকে শাসন করার জন্য গুরুমশাই যে রকম বলতেন, ‘যতক্ষন বেত না আসে ততক্ষণ কানমলা চলুক।’

বাই দি ওয়ে-এ গল্পটাও কাজে লাগে। নেমন্তন্ন-বাড়িতে চপ কটলেট না আসা পর্যন্ত লুচি দিয়ে ছোলার ডাল খেতে খেতে বলতে পারেন, ‘যতক্ষণ বেত না আসে ততক্ষণ কানমলা চলুক।’

শেয়ার Facebook

সাম্প্রতিক খবর

  • সৈয়দ মুজতবা আলীর রম্যরচনা ‘খোশগল্প’

    July 12, 2025
  • মঞ্চায়ন হয়েছে নাটক ‘৪০৪ : নাম খুঁজে পাওয়া যায় নি’

    July 12, 2025
  • ভারতে বিমান দুর্ঘটনার রহস্য উদঘাটন!

    July 12, 2025
  • পুরান ঢাকায় ব্যবসায়ীকে নৃশংস হত্যা, চারজন গ্রেপ্তার

    July 11, 2025
  • ট্রাম্পের শুল্ক হুমকি : দেশগুলোর প্রতিক্রিয়া ও বাজারের অবস্থান

    July 11, 2025

BDOUTLOOK.COM

নির্বাহী সম্পাদক : কাদের বাবু

  • হোম
  • দেশ
  • বিশ্ব
  • অর্থবাণিজ্য
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • মতামত
  • শিল্পসাহিত্য
    • কবিতা ও ছড়া
    • গল্প
    • প্রবন্ধ-আলোচনা
    • রম্য
    • শিশুসাহিত্য
    • শিল্পসাহিত্যের খবর

bdoutlooknews@gmail.com

  • Privacy Policy
BDOUTLOOK
  • হোম
  • দেশ
  • বিশ্ব
  • অর্থবাণিজ্য
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • মতামত
  • শিল্পসাহিত্য
    • কবিতা ও ছড়া
    • গল্প
    • প্রবন্ধ-আলোচনা
    • রম্য
    • শিশুসাহিত্য
    • শিল্পসাহিত্যের খবর