BDOUTLOOK
  • হোম
  • দেশ
  • বিশ্ব
  • অর্থবাণিজ্য
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • মতামত
  • শিল্পসাহিত্য
    • কবিতা ও ছড়া
    • গল্প
    • প্রবন্ধ-আলোচনা
    • রম্য
    • শিশুসাহিত্য
    • শিল্পসাহিত্যের খবর
BDOUTLOOK
  • হোম
  • দেশ
  • বিশ্ব
  • অর্থবাণিজ্য
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • মতামত
  • শিল্পসাহিত্য
    • কবিতা ও ছড়া
    • গল্প
    • প্রবন্ধ-আলোচনা
    • রম্য
    • শিশুসাহিত্য
    • শিল্পসাহিত্যের খবর
শিরোনাম
ভারতে বিমান দুর্ঘটনার রহস্য উদঘাটন!
পুরান ঢাকায় ব্যবসায়ীকে নৃশংস হত্যা, চারজন গ্রেপ্তার
ট্রাম্পের শুল্ক হুমকি : দেশগুলোর প্রতিক্রিয়া ও বাজারের অবস্থান
ভোটের টাইমলাইনে কী বলছে দলগুলো
গাজায় অবশেষে যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা
Sunday | July 13 | 2025
BDOUTLOOK
BDOUTLOOK
  • হোম
  • দেশ
  • বিশ্ব
  • অর্থবাণিজ্য
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • মতামত
  • শিল্পসাহিত্য
    • কবিতা ও ছড়া
    • গল্প
    • প্রবন্ধ-আলোচনা
    • রম্য
    • শিশুসাহিত্য
    • শিল্পসাহিত্যের খবর

News 24 Hours BDOUTLOOK.COM

গল্প

শক্তি :: মোহিত কামাল

বিডিআউটলুক July 11, 2025
July 11, 2025
11

ওড়িশা অস্থির।
একবার টেবিলে বসছে, আবার উঠছে। ঢকঢক করে পান করে গ্লাসের পর গ্লাস পানি শেষ করছে।
আগামীকাল ওড়িশার ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষা।
ওড়িশা বড় ভালো মেয়ে, মেধাবী ছাত্রী।
ওর গায়ের রং কালো, কুচকুচে কালো। ডাগর চোখ, মিষ্টি মুখ, ভরাট শরীর। যেন খোদাই করা জীবন্ত ভাস্কর্য এক।
চারদিকে শোরগোল, প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে। বিক্রি হচ্ছে ফটোকপি।
ওড়িশাও চায় এক কপি।
প্রশ্ন পাওয়ার আশায় মোহাচ্ছন্ন হয়ে আছে সে। ওর একার এ অবস্থা নয়, সবার মনে একই প্রতিক্রিয়া চলছে। অন্য মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতিক্রিয়াও খুব খারাপ, তারাও চায় এক কপি। প্রশ্নপত্র ফাঁসের কথা শুনে বিগড়ে গেছে সবার মাথা।
রাত আটটা।
মিরান এসে দরজায় টোকা দেয়। তড়িঘড়ি করে দরজা খোলে ওড়িশা। এদিক-ওদিক তাকিয়ে সাবধানে প্রশ্ন করল, এনেছো?
মিরান চুপ, মুখে দুষ্টুমির হাসি।
কথা বলছো না কেন? এনেছো? মুখ ঝামটা মারে ওড়িশা।
নাহ্। পেলাম না। আমি যাওয়ার আগে সব হরিলুট হয়ে গেছে। পরিচিত একজনের থেকে এক সেট ফটোকপি করে নিতে চাইলাম, দিল না। ভয় পেয়েছে সে, যদি পুলিশের হাতে ধরা পড়ে!
রাগে নিজের চুল ছিঁড়তে ইচ্ছে করছে। মুখে ঝাঁঝ মেখেই বলল, খালি হাতে এলে? না এলেই তো শান্তি পেতাম।
তোমাকে দেখতে এলাম। বড় দেখতে ইচ্ছে করল।
চুপ। মিথ্যে কথা রাখো। রূপ কি আমার গলে গলে পড়ছে?
পড়ছেই তো। মিরানের নির্লিপ্ত জবাব।
ওড়িশা ভীষণ খেপেছে। ওর চোখ-মুখ থেকে আগুনের ঝাঁঝ বেরুচ্ছে। ফোঁস ফোঁস করছে।
ওড়িশাকে খেপিয়ে বড় বেশি আনন্দ পায় মিরান। ওর খ্যাপাটে মুখে দারুণ এক লাবণ্য ফুটে ওঠে। দু চোখ দিয়ে মিরান শুষে নেয় সবটুকুন কোমলতা।
চেয়ারে বসেছে ওড়িশা। দু হাত ভাঁজ করে রাখল টেবিলে। হাতের ওপর মাথা রেখে ক্ষোভে ফোঁপাচ্ছে এখন।
ওড়িশা! কোমল স্বরে ডাকল মিরান।
ও মাথা তুলছে না, রাগে পুড়ে যাচ্ছে পুরো শরীর।
শরীর ঘেঁষে দাঁড়াল মিরান। হাত দিয়ে ওর বাঁ বাহু আলতো করে চেপে ধরল।
ঝটকা দিয়ে ওড়িশা বিক্ষুব্ধ চোখে তাকাল মিরানের দিকে, যেন এই মুহূর্তেই পুরো গিলে খাবে তাকে।
তর্জনী দিয়ে টেবিলের দিকে দেখাল মিরান। টেবিলে চোখ পড়তেই হর্ষোৎফুল্ল হয়ে ওঠে ওড়িশা।
শুধু প্রশ্ন নয়। উত্তরও সাজানো রয়েছে। বইয়ের পাতা কেটে সিরিয়ালি গোছানো।
উফ্! খুশিতে উদ্বাহু নেচে উঠল ওড়িশা।
মিরানের শার্ট দু হাত দিয়ে খামচে ধরে ঝাঁকুনি দিল।
ওর শরীরের সব বাঁক থেকে ঠিকরে ঠিকরে বেরুচ্ছে আনন্দ। ঢেউ উঠেছে ফোলানো ঠোঁটে, চোখ-মুখ চিকচিক করছে আনন্দধারায়। মিরান আর মিরানের ভেতর নেই।
দু হাতের তালুতে আলতো করে ভরে নেয় ওড়িশার মায়াবী মুখ, টেনে আনে ঠোঁটের কাছে।
এভাবে আগে কখনও ধরা দেয়নি ওড়িশা। কত চেষ্টা করেছে মিরান। বিফল হয়েছে বার বার। অথচ আজ ওড়িশা তার হাতের মুঠোয়।
খস খস পায়ের আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। ভেতরের ঘর থেকে কেউ আসছেন।
মোহাচ্ছন্ন ভাব কেটে গেল ওড়িশার। দ্রুত ছুটে গিয়ে টেবিলে বসে লক্ষ্মী মেয়ের মতো পড়া শুরু করল।
মিরানও চেয়ারে বসে গেল দ্রুত। গৃহশিক্ষকের কঠিন দায়িত্ব পালনই এখন তার মহান কাজ।
ওড়িশার বাবা নাসের সাহেব রাশভারি লোক। কালো মেয়েটিকে নিয়ে তার চিন্তার শেষ নেই। এ মুহূর্তে মেয়ের পড়ার ঘরে ঢুকে স্বস্তি পেলেন।
মেয়ে পড়ছে।
গৃহশিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছে মিরান। নিজের ছেলের মতো, ছেলেবেলার বন্ধু আহসানের একমাত্র ছেলে। সদ্য বের হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। এখনো বেকার।
মিরান বিনয়ের সঙ্গে উঠে দাঁড়াল।
বসো, বসো বাবা।
মিরান বসল।
কেমন প্রিপারেশন হলো তোমার ছাত্রীর? ওকে ভালো রেজাল্ট করতেই হবে।
জি, ভালোই প্রিপারেশন হয়েছে মনে হয়।
গোল্ডেন গ্রেট তো পেতেই হবে, নম্বরও তুলতে হবে বেশি। পারবে তো, কী বলো?
অবশ্যই পারবে। মিরান তাকে আশ্বস্ত করে।
নাসের সাহেবের মুখ থেকে দীর্ঘশ্বাস বের হয়।
ম্লান কণ্ঠে বললেন, ওকে নিজের পায়ে নিজে দাঁড়াতে হবে। কেন যে ওর গায়ের রং কালো হলো! এত ভালো মেয়ে আমার।
ওড়িশা ঝট করে চেয়ার থেকে উঠে ক্ষুব্ধ চোখে বাবার দিকে তাকাল।
নাসের সাহেব থতমত খেলেন, বোকা বনে গেলেন।
কতবার ওড়িশা বাবাকে কড়া কথা শুনিয়েছে, ফল হয়নি। তিনি বার বার ভুলটা করেন, তার ভুল ওর কচি মনে আঘাত করে। বুদ্ধি হওয়ার পর থেকে একই কথা শুনতে শুনতে নিজের প্রতি ঘৃণা জমেছে ওড়িশার।
নিজের ঠোঁট সজোরে কামড়ে ধরে ধপ করে বসে পড়ল। নাসের সাহেব নিজের ভুল আবারও বুঝলেন। বোকার মতো মাথা নিচু করে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন।
মিরান জ্বলজ্বল করে তাকিয়ে আছে ওড়িশার দিকে। ওড়িশাও সহজ হয়ে মুখ তুলে তাকাল এবার।
চোখাচোখি হলে মিরান চোখ নামায়। ওড়িশা মৃদু হাসে। হাসিমুখে বলল, তোমার অপূর্ণ আশা পূর্ণ হবে। পরীক্ষা শেষ হোক।
মানে? মিরানের আহত প্রশ্ন।
ওই যে, সুযোগ বুঝে শরীরে হাত দিতে চাইলে, চুমু খেতে চাইলে… খিলখিল করে হেসে ওঠে ওড়িশা।
হাসির ভেতর আছে তীক্ষ্ম খোঁচা, লুকিয়ে আছে গোপন খেদও।
মিরান অপ্রস্তুত, আহত হয়ে কপালে হাত রেখে চোখ বোজে।
ওড়িশা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে মিরানকে। এত ভালো লাগে কেন ওকে? ভালো লাগে বলেই সম্পর্ক আপনি থেকে তুমিতে এসেছে। সবার সামনে ‘আপনি’ সম্বোধন করে। তবে সম্পর্কের ভেতর এখনও বেশ দূরত্ব রয়েছে।
মিরানেরও কি ওকে একই রকম ভালো লাগে?
সে তো কালো মেয়ে, কুচকুচে কালো। কালো মেয়েকে কোনো ছেলের কি স্থায়ীভাবে ভালো লাগতে পারে?
আরও দু-একজনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা হয়েছিল ওড়িশার। সবাই মিষ্টি কথা বলে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে শরীর চায়। শরীর! খুট-খুট করে হেসে ওঠে ওড়িশা।
পড়ো, উত্তরগুলো গুছিয়ে নাও। মিরানের থমথমে গলা শুনে চমকে উঠল ওড়িশা।
মিরানের মুখে এক পোছ কালির আঁচড় বসে গেছে। ওর মলিন মুখ দেখে চোট খেলো সে।
লক্ষ্মী মেয়ের মতো প্রশ্নগুলো পড়ে উত্তরে চোখ বুলোতে লাগল। সবই সে পড়েছে, পরীক্ষাও নিশ্চয় ভালো হবে।
কষ্ট দিলাম? ওড়িশা আলতো করে জিজ্ঞাসা করল।
না। মিরানের বিষণ্ন জবাব।
না? ওড়িশার আবারও প্রশ্ন।
না-ই তো বললাম।
ওহ্।
ধমক খেয়ে চুপসে গেল ওড়িশা। পড়ায় মন দেওয়ার চেষ্টা করল।
আমি যাচ্ছি, সব গুছিয়ে নিয়ো। পরীক্ষার হলের সামনে থাকব, কাল দেখা হবে। কথা শেষ করে মিরান উঠে দরজার দিকে এগিয়ে গেল। ওড়িশাও গেল পিছু পিছু।
ও কিছু বলতে চাইছে, পারছে না বলতে। ঠোঁট জোড়া লেগে গেছে, পারছে না খুলতে।
ওর ইচ্ছে করছে মিরান ঘুরে দাঁড়াক। তার আশা পূর্ণ করুক। ঠোঁট জোড়া নিজের ঠোঁটের মধ্যে লুফে নিক। একটু আদর করুক।
মিরান দাঁড়াল না। ফিরল না, এক বুক কষ্ট নিয়ে বেরিয়ে গেল।
ওড়িশার বুকটা হঠাৎ জ্যাম হয়ে গেছে। কষ্টের চাক বুকের ভেতর থেকে উথলে আসতে চাইছে।
ওর দু চোখ টলমল করে ওঠে।

দুই
প্রথম পরীক্ষা আজ।
কলেজের সামনে রিকশা থেকে নামল ওড়িশা। ওর বাবাও আছে সঙ্গে। বুক দুরুদুরু করছে।
এদিক-ওদিক তাকাচ্ছে সে। মিরানকে খুঁজছে কিন্তু মিরান নেই।
বুকটা অকারণে ভারী হয়ে উঠল। বিষাদে ছেয়ে গেছে মুখ।
মুখ চুপসে আছে কেন রে, মা? ভয় পেয়েছিস? নাসের সাহেবের আদরমাখা প্রশ্ন।
না বাবা, ভালোই আছি।
হ্যাঁ, ভালো থাকতেই হবে। তাক লাগানো একটা রেজাল্ট চাই তোর।
বাবা, আমি কালো বলে তোমার খুব দুঃখ, না?
ছিঃ মা! ও কথা বলছিস কেন?
আমার ভালো রেজাল্ট দিয়ে ঘষে আমাকে ফর্সা বানাতে চাও, না?
চুপ কর মা।
ওড়িশা চুপ করল না। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে নির্বিকার বলে যেতে লাগল, বাবা চিন্তা কোরো না, তোমাদের দুঃখ আমি ঘোচাব। বাহবা ছড়ানোর মতো একটা রেজাল্ট অবশ্যই তোমরা পাবে।
গেট পেরিয়ে কলেজে ঢোকে সে।
মিরান এল না কেন? কষ্টে চোখে পানি জমে যায়।
বিমর্ষ মুখে বারান্দায় দাঁড়িয়ে পেছনে ঘোরে। লিচুগাছ তলায় চোখ গেল ওর। মিরান ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, বড় বিষণ্নতায় ভরা তার চোখ দুটো দূর থেকে দেখা যাচ্ছে।
মিরানকে দেখে মন ভালো হয়ে গেল ওড়িশার।
মুখে একচিলতে হাসি ফোটে, দুঃখ ভুলে যায় সে।

ঢং। ঘণ্টা পড়েছে।
পরীক্ষা শুরু হয়েছে। প্রশ্ন দেখে তাজ্জব বনে গেল ওড়িশা। হুবহু মিল। নকলের পুঁটলিটা কোমরের বাঁ পাশে গুঁজে নিয়ে এসেছে। কখনও নকল করেনি, নকলের দরকার নেই তার। তবু সঙ্গে এনেছে। বাঁ হাত দিয়ে পুঁটলি অনুভব করল। সঙ্গে সঙ্গেই একটা বিদ্যুৎতরঙ্গ দ্রুত ছুটে গেল মগজে। চিন্তাশক্তি জ্যাম হয়ে গেছে। মাথার ভেতর যেন ঠক ঠক করে হাতুড়ি পেটাতে শুরু করেছে কেউ।
কলমের ওপর যেন এক মণি বস্তা এসে চেপে বসেছে। কলম এগুচ্ছে না মোটেই।
বাবার কথা মনে পড়ছে।
চোখ ছলছল করে ওঠে।
হঠাৎ বাঁ হাত দিয়ে খামচে ধরল পুঁটলিটা। জানালা দিয়ে ছুড়ে দিল বাইরে।
কী আশ্চর্য!
সঙ্গে সঙ্গেই মগজ সচল হয়ে গেছে, কলম লিখতে শুরু করেছে। ওকে ভালো রেজাল্ট করতেই হবে।
কালো হওয়ার দুঃখ ঘোচাতেই হবে।

তিন
ঢং ঢং ঢং। তিন ঘণ্টা পড়ল। পরীক্ষা শেষ। বাইরে এসে অবাক হলো ওড়িশা। বাবা নেই, মিরানও নেই।
গেটের বাইরে ঠায় দাঁড়িয়ে রইল। থমথমে মুখ। দশ মিনিটের মতো চলে গেল, কাউকে দেখতে পাচ্ছে না। রাগে ফুঁসতে লাগল সে।
সামনের সরু রাস্তার দিকে চোখ গেল তার।
ওড়িশার ছোট ভাই মাহবুব ছুটে আসছে। কাছে এসে দাঁড়াল। হাঁপাচ্ছে সে। ওর চোখে-মুখে আতঙ্ক।
আপু, সর্বনাশ হয়ে গেছে! মিরান স্যারকে পুলিশ থানায় নিয়ে গেছে।
বলিস কী? ওড়িশা আর্তনাদ করে ওঠে।
আমি আর স্যার অপেক্ষা করছিলাম তোর জন্য। বাবা চলে গেছেন। আমার বন্ধু ফারুক এসে বলল, আগামীকালের প্রশ্নও ফাঁস হয়ে গেছে, বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে। স্যার ছুটে গেলেন জোগাড় করতে। কিনতে গিয়ে বিক্রেতাসহ ধরা পড়েছেন। এখন থানায়।
এ কি শুনল ওড়িশা!
বুকের ভেতর হঠাৎ ভূমিকম্প শুরু হয়েছে। দ্রিম দ্রিম শব্দে হৃৎপিণ্ড লাফাতে আরম্ভ করেছে।
উদভ্রান্তের মতো ছুটে গেল সে থানায়।
থানা-হাজত কক্ষের গ্রিল ধরে মাথা নিচু করে অসহায়ভাবে দাঁড়িয়ে আছে মিরান।
ওকে বিধ্বস্ত লাগছে, মনে হচ্ছে ২০০ কিলোমিটার বেগে ঝড় বয়ে গেছে ওর ওপর দিয়ে।
পাশে গিয়ে দাঁড়াল ওড়িশা। ওকেও পাগলিনীর মতো লাগছে এখন। মাহাবুবও আছে সঙ্গে, কেউ কিছু বলতে পারছে না।
মিরান ফ্যাকাসে চোখে ওড়িশার দিকে তাকাল। মনে হলো সে ঝলমলে পৃথিবী থেকে ছিটকে পড়েছে অচেনা গ্রহে, ওড়িশা নামের সবকিছু অচেনা ঠেকছে।
ইফতেখার হোসেন, থানার ওসি। জাঁদরেল পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে ইতোমধ্যে খ্যাতি অর্জন করেছেন। নিজ কক্ষে বসে আছেন। দরজায় দামি পর্দা ঝুলছে।
পর্দার ফাঁক দিয়ে দেখলেন একটি কালো মেয়ে এসে দাঁড়িয়েছে হাজতখানার গ্রিলের পাশে।
বেল টেপেন তিনি।
কনস্টেবল ঢোকে রুমে।
ওই কালো মেয়েটিকে এদিকে আসতে বলো। আদেশ দিলেন তিনি।
একটু পরে ওড়িশা এসে ঢুকল।
বসেন। ওসির থমথমে গলা।
ওড়িশা বসল।
নাম কী আপনার?
ওড়িশা।
ওহ্। তাহলে আপনিই মিরানের বোন?
জি।
আর কী হন?
ওনার ছাত্রী।
আর?
ওড়িশা মুখ তুলে তাকাল। উত্তর দিচ্ছে না, চোখে প্রশ্ন।
আর কী? ধমকে ওঠেন ওসি।
আর কিছু না। থমথমে গলায় বলল সে।
কিছু না? ধমকের সুরে প্রশ্ন করে মৃদু হেসে ফেলেন তিনি।
ওড়িশা অসহায়ের মতো বসে আছে। ঢোক গিলছে কেবল। কিছুই বলতে পারছে না।
ওসির মুখে রহস্যময় হাসি দেখে ঘাবড়ে গেল ওড়িশা। এদিক-ওদিক তাকাল। কেউ নেই কোথাও। রুমে এখন ওরা কেবল দুজন। দরজায় ভারী পর্দা ঝুলছে। জানালাও বন্ধ। লোকটি কি এখনই তাকে ধরে বসবে!
সব পুরুষের তো একই নেশা, সুযোগ পেলেই কেবল ছুঁতে চায়, চায় আরও বেশি কিছু।
মিটিমিটি চোখে ইফতেখার সাহেব দেখছেন ওড়িশাকে।
ওড়িশা ভেতরে ভেতরে তৈরি হতে লাগল। যে কোনো মূল্যে লোকটির আক্রমণ প্রতিহত করতে হবে।
ড্রয়ার টেনে একটা খাম বের করলেন ওসি। খামের মুখ খোলা।
নিন, এটি আপনার। মিরানের শরীর তল্লাশি করতে গিয়ে ওর পকেটে পেয়েছি। আপনাকে লেখা চিঠি।
ওড়িশা ভাবছিল এক রকম। ঘটল অন্য রকম। দ্রুত সে ভাবনাগুলো ছুড়ে দিয়ে ব্যস্ত হাতে লুফে নিল খামটা। ধবধবে সাদা কাগজে ছোট্ট লেখা। নীল কালির আঁচড় :
ওড়িশা,
তুমি কালো কিন্তু খুব মিষ্টিও, খুউব।
তোমাকে আমার ভালো লাগে, ভীষণ।
তোমাকে চাই, শুধু তোমাকেই চাই।
শরীর চাই না কেবল, মনও চাই।
মিরান।
আহ্! কী সুখ!
ওড়িশার জীবনে প্রথম প্রেমপত্র।
ওড়িশার মনের গহিনে ছোট্ট এক দুঃখ গেঁথে ছিল! ও কালো। কখন প্রেমপত্র পাবে না। যেমনটা পায় বান্ধবীরা।
তার ভুল ভেঙে গেছে, প্রেমপত্র পেয়েছে। তাও কিনা মিরানের, যাকে তার খুব ভালো লাগে। এতদিন মিরানকে পুরোপুরি বিশ্বাস হয়নি, আজ হয়েছে।
মিরান তার হৃদয় চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়েছে। কেবল তার কাছে নয়, পুলিশের কাছেও। ধরা পড়ে হাজতে আছে। চিঠি পাওয়ার আনন্দে তার চোখ বুজে আসে। ইচ্ছে করছে মরে যেতে। এ আনন্দ কি তার চিরস্থায়ী হবে? মিরান কি অন্য কোনো সুন্দরী দেখে পটে যাবে না? ভুলে যাবে না তো ওকে? চোখ খুলে সামনে তাকাল সে।
ওসির মুখে হাসি লেগেই আছে।
লোকটাকে ভালোই মনে হচ্ছে। সাহস বেড়ে গেল। জোরালো কণ্ঠে বলল, ওকে ছেড়ে দিন। ওকে শব্দটা উচ্চারণ করেই লজ্জা পেল সে।
নাহ্! ওসির হাসিমাখা মুখ গম্ভীর হয়ে গেল।
ওর কী দোষ? পথেঘাটে তো দেদার বিক্রি হচ্ছে ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্র। ওকে ছেড়ে দিন, প্লিজ।
ইফতেখার সাহেব ঝানু লোক।
এ মুহূর্তে একটু কাহিল হয়ে পড়েছেন।
প্রশ্নপত্র উদ্বেগজনক হারে বিক্রি হচ্ছে। মূল হোতাদের একজন ধরা পড়েছে মিরানের সঙ্গে। লোকটি সরকারি কর্মচারী। ঢাকায় বিজি প্রেসে চাকরি করে। ওখান থেকে প্রশ্ন ছাপা হয়। ওকে ধরে রাখতে হলে মিরানেরও প্রয়োজন আছে।
বেচারা মিরান।
প্রেমিকা ছাত্রীকে খুশি করার জন্য প্রশ্ন কিনতে আটকে গেছে। নিজের প্রেমপত্রও ধরা পড়েছে পুলিশের কাছে।
হাসি ফুটল ওসির মুখে।
ওড়িশার দিকে তাকিয়েই মন খারাপ হয়ে গেল। মেয়েটিকে ফিরিয়ে দিতে খারাপ লাগছে, তবু উপায় নেই।
তুমি যাও। ওকে ছাড়া যাবে না এখন। আপনি থেকে তুমিতে নেমে এলেন তিনি।
না, যাব না। ওকে না নিয়ে কিছুতেই যাব না আমি। চেয়ারের হাতল আঁকড়ে ধরে কঠিন মুখে বসে থাকল ওড়িশা।
মিরানের চিঠি ওর বুকের ভেতর ঢুকিয়ে দিয়েছে অদ্ভুত এক তেজ, বেপরোয়া এক শক্তি। ভালোবাসার শক্তি।
কিছুতেই এ শক্তির কাছে পরাজয় বরণ করবে না সে। কিছুতেই না।

শেয়ার FacebookThreadsBluesky

আরও যেসব নিউজ পড়তে পারেন

ভয়ঙ্কর জঙ্গলে বিভীষিকা :: রেজাউল করিম খোকন

July 11, 2025

অদম্য কলাগাছ :: গাজী তানভীর আহমদ

July 5, 2025

রত্নদ্বীপের খোঁজে :: প্রিন্স আশরাফ

July 5, 2025

ফুলে কাঁটা :: বিশ্বজিৎ দাস

July 5, 2025

হৈমন্তী : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

July 3, 2025

সাম্প্রতিক খবর

  • সৈয়দ মুজতবা আলীর রম্যরচনা ‘খোশগল্প’

    July 12, 2025
  • মঞ্চায়ন হয়েছে নাটক ‘৪০৪ : নাম খুঁজে পাওয়া যায় নি’

    July 12, 2025
  • ভারতে বিমান দুর্ঘটনার রহস্য উদঘাটন!

    July 12, 2025
  • পুরান ঢাকায় ব্যবসায়ীকে নৃশংস হত্যা, চারজন গ্রেপ্তার

    July 11, 2025
  • ট্রাম্পের শুল্ক হুমকি : দেশগুলোর প্রতিক্রিয়া ও বাজারের অবস্থান

    July 11, 2025

BDOUTLOOK.COM

নির্বাহী সম্পাদক : কাদের বাবু

  • হোম
  • দেশ
  • বিশ্ব
  • অর্থবাণিজ্য
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • মতামত
  • শিল্পসাহিত্য
    • কবিতা ও ছড়া
    • গল্প
    • প্রবন্ধ-আলোচনা
    • রম্য
    • শিশুসাহিত্য
    • শিল্পসাহিত্যের খবর

bdoutlooknews@gmail.com

  • Privacy Policy
BDOUTLOOK
  • হোম
  • দেশ
  • বিশ্ব
  • অর্থবাণিজ্য
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • মতামত
  • শিল্পসাহিত্য
    • কবিতা ও ছড়া
    • গল্প
    • প্রবন্ধ-আলোচনা
    • রম্য
    • শিশুসাহিত্য
    • শিল্পসাহিত্যের খবর