বিনোদন ডেস্ক
বলিউডে ‘অন্তরঙ্গ দৃশ্য’—শব্দদুটি উচ্চারণ করলেই যেন কৌতূহল ও বিতর্ক দুই-ই মাথা তোলে। কখনো সেন্সরের কাঁচি, কখনো দর্শকের প্রশংসা বা সমালোচনা—এ দৃশ্যগুলো সবসময় আলোচনায় থাকে। তবে পর্দায় যে দৃশ্যগুলো আমরা দেখি, সেগুলোর পেছনে আছে যত্নশীল প্রস্তুতি, প্রযুক্তি ও সর্বোপরি নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করার প্রচেষ্টা।

ফুলের আড়াল থেকে বাস্তবতায় : ভারতীয় সিনেমায় ঘনিষ্ঠ দৃশ্যের ইতিহাস বললে প্রথমেই আসে ৭০ ও ৮০–এর দশকের কথা। তখন শারীরিক সংস্পর্শ বোঝাতে ব্যবহৃত হতো ফুলের মিলন, দুলতে থাকা পর্দা কিংবা কাঁপতে থাকা মোমবাতি। ’৯০–এর দশকে এসে বড় পর্দায় প্রথমবার দীর্ঘ চুম্বনের দৃশ্য নিয়ে হইচই পড়ে যায়—যেমন রাজা হিন্দুস্তানি–তে আমির খান ও কারিশমা কাপুরের দৃশ্য। তবুও তখনো শুটিং সেটে খোলামেলা আলোচনা হতো না, অভিনেতা-অভিনেত্রীদের নিজেদের মতো করে সামলাতে হতো সব।
মিটু আন্দোলনের পর বদল : ২০১৮ সালে #মিটু আন্দোলনের ঢেউ এসে বলিউডকেও নাড়িয়ে দেয়। যৌন হয়রানি ও ক্ষমতার অপব্যবহার নিয়ে একের পর এক অভিযোগ সামনে আসতে শুরু করলে পশ্চিমা ধাঁচে শুটিং সেটে যুক্ত হয় ইন্টিমেসি কো–অর্ডিনেটর—অন্তরঙ্গ দৃশ্যের পরিচালক বা সমন্বয়ক। তাঁদের কাজ শুধু দৃশ্যটিকে বাস্তব করে তোলা নয়, বরং শিল্পীর নিরাপত্তা ও স্বাচ্ছন্দ্য নিশ্চিত করা।

আস্থা খান্না ভরদ্বাজ ভারতের অন্যতম শীর্ষ অন্তরঙ্গ দৃশ্য সমন্বয়ক। শুটিংয়ের আগে তিনি তাঁর বিশেষ ‘টুলবক্স’ প্রস্তুত করেন, যাতে থাকে নিপল প্যাচ, কৃত্রিম উইগ, সেফ ব্যারিয়ারসহ নানা সরঞ্জাম। উদ্দেশ্য—শরীরের সংস্পর্শ সীমিত রাখা এবং শিল্পীকে অস্বস্তি থেকে রক্ষা করা।
শুটিংয়ের প্রক্রিয়া : শুটিংয়ের দিন অভিনেতাদের আগেই জানিয়ে দেওয়া হয়—কোন দৃশ্যে কেমন শারীরিক সংস্পর্শ হবে, কী ধরনের পোশাক বা সুরক্ষা লাগবে। সাধারণত সেটে সীমিত লোকজন রাখা হয়। প্রথমে হয় ড্রাই রিহার্সাল, তারপর ক্যামেরা ব্লকিং, আলো ঠিক করা—সবকিছুর তত্ত্বাবধান করেন সমন্বয়ক। দৃশ্য ধারণের সময় যৌনাঙ্গসংক্রান্ত সরাসরি শব্দের বদলে ব্যবহার করা হয় নিরপেক্ষ শব্দ—যেমন “আপার চেস্ট” বা “ব্যাকসাইড”—যাতে পরিস্থিতি পেশাদার থাকে।

পরিচালকদের সুবিধা : অন্তরঙ্গ দৃশ্য সমন্বয়কের উপস্থিতি পরিচালকের জন্যও স্বস্তিকর। কারণ, তাঁরা নিশ্চিত থাকেন—সেটে কিছুই এমন হচ্ছে না যা ঝুঁকিপূর্ণ বা অস্বস্তিকর। ফলে দৃশ্য ধারণের পাশাপাশি শিল্পীর মানসিক নিরাপত্তাও নিশ্চিত হয়।
অভিনেত্রীর অভিজ্ঞতা : দীপিকা পাড়ুকোন গেহরাইয়া–তে একাধিক ঘনিষ্ঠ দৃশ্যে অভিনয়ের অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে বলেন—“পরিচালকের প্রতি আস্থা ছাড়া এ ধরনের দৃশ্য সম্ভব নয়। নিরাপদ পরিবেশ না থাকলে কাজ করা যায় না।”
ভূমি পেড়নেকর, রাধিকা আপ্তে, ঐশ্বরিয়া রাই বচ্চনসহ অনেকেই জানিয়েছেন—এ ধরনের দৃশ্যে সীমারেখা স্পষ্ট করা এবং সেটে পেশাদার আচরণ বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি।
কেন জরুরি এই পেশা? : আগে পোশাক বিভাগের কেউ বা নারী স্টান্ট কো–অর্ডিনেটর অনানুষ্ঠানিকভাবে এসব দায়িত্ব পালন করতেন। কিন্তু বাস্তবধর্মী ও আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে সিনেমা বানানোর জন্য এখন প্রশিক্ষিত ইন্টিমেসি কো–অর্ডিনেটর অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। বিশেষত ওয়েব সিরিজে ঘনিষ্ঠ দৃশ্যের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় তাঁদের কাজের পরিধিও বাড়ছে।

যৌনতা মানেই নেতিবাচক নয় : আস্থা খান্না মনে করেন, যৌনতাকে এখন নতুন দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখা উচিত—গল্পের প্রয়োজনে অন্তরঙ্গ দৃশ্য থাকতে পারে, আর সেটিকে বিশ্বাসযোগ্য করে তোলাই তাঁদের কাজ। “অভিনয়শিল্পী যেন নিরাপদে থেকে চরিত্রে ডুবে যেতে পারেন, সেটাই আমাদের সাফল্য,” বলেন তিনি।
তথ্যসূত্র: ইন্ডিয়া টুডে, টাইমস অব ইন্ডিয়া