নিজস্ব প্রতিবেদক
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও হাটহাজারীর জোবরা গ্রামের বাসিন্দাদের মধ্যে সংঘর্ষের নতুন নতুন ভিডিও প্রকাশ্যে আসছে। এসব ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, শিক্ষার্থীদের এলোপাতাড়ি লাঠিপেটা, ধাওয়া এবং ধারালো অস্ত্র দিয়ে হামলার ঘটনা।
একটি ভিডিওতে দেখা যায়, ধানখেতে এক শিক্ষার্থী প্রাণ ভিক্ষা করছেন। তাঁকে কয়েকজন গ্রামবাসী লাঠি দিয়ে আঘাত করছেন এবং একজন হাতে থাকা রামদা নিয়ে তেড়ে আসছেন। শেষ পর্যন্ত ওই শিক্ষার্থী দৌড়ে পালিয়ে প্রাণে রক্ষা পান।
আরেকটি ভিডিওতে দেখা যায়, এক শিক্ষার্থীকে মাটিতে ফেলে কয়েকজন বাসিন্দা মারধর করছেন। তাঁর মাথা ফেটে রক্ত ঝরছে। তবে শেষ পর্যন্ত স্থানীয় কয়েকজন তাঁকে উদ্ধার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে পাঠান।
সবচেয়ে আলোচিত ভিডিওগুলোর একটি হলো ছাদ থেকে শিক্ষার্থীকে ফেলে দেওয়ার দৃশ্য। সাদা শার্ট পরা ওই শিক্ষার্থীকে স্থানীয় এক ব্যক্তি লাথি মেরে নিচে ফেলে দেন। এরপরও তাঁকে উদ্দেশ্য করে ইট ছোড়েন কয়েকজন।
মোট পাঁচটির মতো ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে, যেখানে দেখা যাচ্ছে উভয় পক্ষের সংঘর্ষে অস্ত্র, লাঠিসোঁটা ও ইটপাটকেল ব্যবহার।
এ ঘটনায় এখনো কোনো মামলা হয়নি বলে জানিয়েছেন হাটহাজারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু কাওছার মোহাম্মদ। তিনি বলেন, অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানান, তিনটি মামলা করার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে— শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা, বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পদ নষ্ট এবং আরেকটি মামলার খসড়া তৈরি হচ্ছে।
গত শনিবার রাত সাড়ে ১২টা থেকে শুরু হয়ে রোববার বিকেল ৩টা পর্যন্ত দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। ক্যাম্পাসের একটি ভাড়া বাসার দারোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে মারধর করেছেন— এমন খবরকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে।
শিক্ষার্থী ও গ্রামবাসীর হাতে রড, পাইপ, লাঠি ও ধারালো অস্ত্র থাকায় পরিস্থিতি রণক্ষেত্রের রূপ নেয়। ইটপাটকেল নিক্ষেপে জোবরা গ্রামের অলিগলি পর্যন্ত সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। এতে অন্তত ২২০ জন আহত হয়েছেন, যাঁদের মধ্যে প্রায় ২০০ জন শিক্ষার্থী।
গুরুতর আহত দুই শিক্ষার্থী বর্তমানে নগরের একটি বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন। আরেকজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গতকাল দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করেছে হাটহাজারী উপজেলা প্রশাসন।