নিজস্ব প্রতিবেদক
৩৩ বছর পর অনুষ্ঠিত হচ্ছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৯টার কিছু পর থেকেই ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছে, যা চলবে বিকেল ৫টা পর্যন্ত।
সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ভোটকেন্দ্রের প্রস্তুতি নেন। পুলিশ, আনসার ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব বুঝে নিয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন ফটক ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অবস্থান নেন।
ভোট শুরুর প্রথম দিকে ভোটার উপস্থিতি তুলনামূলকভাবে কম ছিল। কাজী নজরুল ইসলাম হলের শিক্ষার্থী এস এম হামিদ হাসান ভোট দেওয়ার পর জানান, তিনি সকালে লাইনে দাঁড়িয়ে প্রায় ২০ মিনিট অপেক্ষা করার পর ভোট দিতে সক্ষম হয়েছেন।
সকাল সাড়ে নয়টার দিকে আ ফ ম কামাল উদ্দিন হলে গিয়ে দেখা যায়, কমনরুমে ভোট গ্রহণ চলছে। তবে প্রার্থীদের কোনো পোলিং এজেন্ট সেখানে উপস্থিত ছিলেন না। দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা ভোটারদের আঙুলে অমোচনীয় কালির দাগ দিয়ে ভোট নিশ্চিত করছেন।
সকাল ১০টায় ওই হলের রিটার্নিং কর্মকর্তা শিবলী নোমান বলেন, “সকাল ৯টা থেকে ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছে। এখন পর্যন্ত ১৯ জন ভোট দিয়েছেন। উপস্থিতি কম হলেও ধীরে ধীরে বাড়বে। প্রার্থীদের পোলিং এজেন্ট থাকার কথা বলা হলেও এ বিষয়ে কোনো সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়নি, ফলে প্রক্রিয়ায় কিছুটা বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে।”
ঢাকা থেকে ক্যাম্পাসে এসে ভোট দিয়েছেন শিক্ষার্থী শহীদ উজ জামান। তিনি বলেন, “বহুদিন পর জাকসুতে ভোট হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের অন্যতম প্ল্যাটফর্ম জাকসু। তাই সবাইকে ভোট দিতে ক্যাম্পাসে আসা উচিত।”
এদিকে ফজিলতুন্নেছা হলের ভোটকেন্দ্রে নির্ধারিত সময়ের আধা ঘণ্টা পার হলেও ভোট গ্রহণ শুরু হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন চারজন ছাত্রী। বিষয়টি জানতে দায়িত্বপ্রাপ্ত রিটার্নিং কর্মকর্তা আবু সাইফের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
ক্যাম্পাসের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে পুলিশ, আনসার ও আর্মড পুলিশসহ দুই হাজারের বেশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
জাকসু নির্বাচন কমিশনের সদস্য অধ্যাপক মাফরুহী সাত্তার বলেন, “সুশৃঙ্খলভাবে ভোটগ্রহণ চলছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বিপুলসংখ্যক সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন।”
এবার জাকসু নির্বাচনে মোট ভোটার ১১ হাজার ৭৪৩ জন। এর মধ্যে ছাত্রী ৫ হাজার ৭২৮ জন এবং ছাত্র ৬ হাজার ১৫ জন। কেন্দ্রীয় সংসদের ২৫টি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ১৭৭ জন প্রার্থী। পাশাপাশি ২১টি হল সংসদের নির্বাচনও অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
সহসভাপতি (ভিপি) পদে প্রার্থী হয়েছেন ৯ জন, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৮ জন। এ নির্বাচনে সাতটি প্যানেল অংশ নিচ্ছে। এর মধ্যে চারটি পূর্ণাঙ্গ ও তিনটি আংশিক প্যানেল। পূর্ণাঙ্গ প্যানেলগুলো হলো—ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেল, ছাত্রশিবির সমর্থিত সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট, প্রগতিশীল শিক্ষার্থীদের সম্প্রীতির ঐক্য এবং গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ সমর্থিত শিক্ষার্থী ঐক্য ফোরাম। আংশিক প্যানেল দিয়েছে স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী সম্মিলন, স্বতন্ত্র অঙ্গীকার পরিষদ এবং ছাত্র ইউনিয়ন–ছাত্র ফ্রন্টের সংশপ্তক পর্ষদ। এছাড়া অনেকেই স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন।