নিজস্ব প্রতিবেদক
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ইসলামী ছাত্রশিবির–সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট’ বিপুল জয় পেয়েছে। ভিপি, জিএস ও এজিএসসহ ১২ সম্পাদকীয় পদের মধ্যে ৯টিতেই জয়ী হয়েছেন শিবির-সমর্থিত প্রার্থীরা।
ভিপি, জিএস ও এজিএস পদে শিবিরের প্রার্থীদের জয়
ভিপি (সহসভাপতি): শিবির নেতা মো. আবু সাদিক কায়েম ১৪,০৪২ ভোটে বিজয়ী হয়েছেন।
প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা:
আবিদুল ইসলাম খান (ছাত্রদল) – ৫,৭০৮ ভোট
শামীম হোসেন (স্বতন্ত্র) – ৩,৮৮৩ ভোট
উমামা ফাতেমা (স্বতন্ত্র ঐক্য প্যানেল) – ৩,৩৮৯ ভোট
আবদুল কাদের (বৈষম্যবিরোধী সংসদ) – ১,১০৩ ভোট
তাসনিম আফরোজ ইমি (প্রতিরোধ পর্ষদ) – ৬৮ ভোট
জিএস (সাধারণ সম্পাদক): শিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি এস এম ফরহাদ ১০,৭৯৪ ভোটে জয়ী।
প্রতিদ্বন্দ্বীরা:
শেখ তানভীর বারি হামিম (ছাত্রদল) – ৫,২৮৩ ভোট
মেঘমল্লার বসু (ছাত্র ইউনিয়ন/প্রতিরোধ পর্ষদ) – ৪,৯৪৯ ভোট
আরাফাত চৌধুরী (স্বতন্ত্র) – ৪,০৪৪ ভোট
আবু বাকের মজুমদার (বৈষম্যবিরোধী) – ২,১৩১ ভোট
এজিএস (সহসাধারণ সম্পাদক): শিবিরের মুহা. মহিউদ্দীন খান পেয়েছেন ১১,৭৭২ ভোট।
প্রতিদ্বন্দ্বীরা:
তানভীর আল হাদী মায়েদ (ছাত্রদল) – ৫,০৬৪ ভোট
তাহমীদ আল মুদাসসীর (স্বতন্ত্র) – ৩,০০৮ ভোট
জাবির আহমেদ জুবেল (প্রতিরোধ পর্ষদ) – ১,৫১১ ভোট
মহিউদ্দিন রনি – ১,১৩৭ ভোট
আশরেফা খাতুন – ৯০০ ভোট
আশিকুর রহমান জিম – ৭৯৬ ভোট
হাসিব আল ইসলাম – ৫২০ ভোট
সম্পাদকীয় পদে ফলাফল
শিবির-সমর্থিত প্যানেলের বিজয়ীরা:
মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন সম্পাদক: ফাতেমা তাসনিম জুমা – ১০,৬৩১ ভোট
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক: ইকবাল হায়দার – ৭,৮৩৩ ভোট
আন্তর্জাতিক সম্পাদক: খান জসিম – ৯,৭০৬ ভোট
ছাত্র পরিবহন সম্পাদক: আসিফ আবদুল্লাহ – ৯,০৬১ ভোট
ক্রীড়া সম্পাদক: আরমান হোসাইন – ৭,২৫৫ ভোট
কমনরুম, রিডিংরুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক: উম্মে ছালমা – ৯,৯২০ ভোট
মানবাধিকার ও আইন সম্পাদক: সাখাওয়াত জাকারিয়া – ১১,৭৪৭ ভোট
স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সম্পাদক: এম এম আল মিনহাজ – ৭,০৩৮ ভোট
ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট সম্পাদক: মাজহারুল ইসলাম – ৯,৩৪৪ ভোট
শিবির-সমর্থিত প্যানেলের বাইরে তিনটি পদে জয়ী হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা:
সমাজসেবা সম্পাদক: যুবাইর বিন নেছারী – ৭,৬০৮ ভোট
সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক: মুসাদ্দিক আলী ইবনে মোহাম্মদ – ৭,৭৮২ ভোট
গবেষণা ও প্রকাশনা সম্পাদক: সানজিদা আহমেদ তন্বি – ১১,৭০৮ ভোট
শিবিরের প্রকাশ্য প্রত্যাবর্তন
আওয়ামী লীগের দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিবিরের প্রকাশ্য রাজনীতি কার্যত নিষিদ্ধ ছিল। তবে গত বছরের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী সরকারের পতনের পর থেকে তারা আবার সক্রিয় হয়। প্রকাশ্যে সাংগঠনিক কার্যক্রম শুরু করার মাত্র এক বছরের মাথায় ডাকসু নির্বাচনে এই বড় জয় পেল শিবির।
নির্বাচন প্রত্যাখ্যান
তবে ফলাফল মেনে নেয়নি কয়েকজন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী।
ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান (ছাত্রদল) ফেসবুকে লেখেন: “পরিকল্পিত কারচুপির এই ফলাফল অনুমান করেছিলাম। এই প্রহসন প্রত্যাখ্যান করছি।”
ভিপি প্রার্থী উমামা ফাতেমা ডাকসু বর্জনের ঘোষণা দিয়ে লেখেন: “বয়কট! ডাকসু বর্জন করলাম। এটি নির্লজ্জ কারচুপির নির্বাচন।”
জিএস প্রার্থী শেখ তানভীর বারি হামিম (ছাত্রদল)ও অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগ তুলেছেন।
ভোটগ্রহণ ও পরিস্থিতি
ভোটগ্রহণ হয় মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত।
মোট ৮টি কেন্দ্রে শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট অনুষ্ঠিত হয়।
প্রাথমিক হিসাবে ৭৮% ভোটার উপস্থিত ছিলেন।
তবে ভোট গণনার সময় কারচুপির অভিযোগে কয়েকটি প্যানেল টিএসসি ও বিভিন্ন কেন্দ্রের সামনে বিক্ষোভ করে।
নির্বাচন কমিশনের মন্তব্য
প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন বলেন,
“শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। ডাকসুর এই মডেল বাংলাদেশে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ অনুসরণ করবে বলে আমরা আশা করি।”