বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন (বিটিটিসি) ইলিশ মাছের দাম নির্ধারণে নতুন একটি ফর্মুলা দিয়েছে। মাছের আকার অনুযায়ী সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য নির্ধারণ করার প্রস্তাব দিয়ে ট্যারিফ কমিশন স্থানীয় বাজারে ইলিশের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
ট্যারিফ কমিশন প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, চলতি সেপ্টেম্বরে ইলিশের কেজিপ্রতি দাম সর্বোচ্চ ২ হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে সাধারণ ভোক্তা ও প্রান্তিক জেলেরা ব্যাপক অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখোমুখি হচ্ছেন। ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান মইনুল খান বলেন, বর্তমানে এক কেজি ইলিশের দাম তিন কেজি গরুর মাংসের সমান, যা স্বাভাবিক নয়। তাই খুচরা পর্যায়ে দাম নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন। মূল্য বৃদ্ধির পেছনে কৃত্রিম প্রভাব রয়েছে। মাছ আহরণের পরবর্তী পর্যায়ে মধ্যস্বত্বভোগীদের বিভিন্ন স্তরে অতিরিক্ত মুনাফা এবং দাদন ব্যবসায়ীদের কারসাজি মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
ট্যারিফ কমিশনের সমীক্ষা অনুসারে, স্থানীয় বাজারের তুলনায় কম দামে ইলিশ রপ্তানি হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, চলতি মাসে ভারতে রপ্তানি হওয়া ইলিশের গড় দাম ১,৫৩৪ টাকা হলেও দেশের বাজারে দাম ৯০০ থেকে ২,২০০ টাকা পর্যন্ত ওঠানামা করছে।
মূল্য বৃদ্ধির পেছনে ১১টি প্রধান কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে চাহিদা-সরবরাহের ভারসাম্যহীনতা, সিন্ডিকেট, জ্বালানি ও পরিবহন খরচ বৃদ্ধি, নদীর নাব্য সংকট, অবৈধ জালের ব্যবহার, নিষিদ্ধ সময়ে মাছ ধরা, মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য এবং রপ্তানির চাপ।
গত চার মাসে ইলিশের দামের ঊর্ধ্বগতি স্পষ্টভাবে লক্ষ করা গেছে। জুনে প্রতি কেজির দাম ছিল ৬০০ থেকে ২,২০০ টাকা, যা জুলাইয়ে ৯০০ থেকে ২,০০০ টাকা এবং আগস্টে সামান্য ৮০০ থেকে ২,০০০ টাকা হয়েছে। আবার সেপ্টেম্বরে দাম বৃদ্ধি পেয়ে ৯০০ থেকে ২,২০০ টাকায় উঠেছে।
গত পাঁচ বছরে ইলিশের দাম স্থানীয় বাজারে প্রায় ৫৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। একই সময়ে রপ্তানি মূল্যের ধারাও ঊর্ধ্বমুখী; ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রতি কেজি ইলিশের রপ্তানি মূল্য ছিল ৯৪৭ টাকা, যা এ বছর ১,৫৩৪ টাকা ছুঁয়েছে।
ট্যারিফ কমিশন মনে করে, ইলিশের দাম আকার অনুযায়ী নির্ধারণ করলে বাজারে স্বচ্ছতা আসবে এবং মৎস্যজীবীদের পাশাপাশি ভোক্তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত হবে। পাশাপাশি এটি দাদন ব্যবসায়ীদের অতিরিক্ত মুনাফা থেকে বিরত রাখতে সাহায্য করবে।
দেশে প্রতিবছর গড়ে প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ টনের মতো ইলিশ আহরণ হয়। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মোট আহরণ হয়েছে ৫ লাখ ২৯ হাজার টন। এই বিশাল সম্পদের যথাযথ ব্যবহার ও মূল্য নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে বাজার ব্যবস্থা আরো সুসংহত করা সম্ভব বলে মনে করছে ট্যারিফ কমিশন।