যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টের প্রায় ৬০ জন সদস্য—হাউস অব কমন্স ও হাউস অব লর্ডসের এমপি ও লর্ড—ইসরায়েলে সব ধরনের অস্ত্র রপ্তানিতে পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা আরোপের দাবি জানিয়েছেন। তারা সম্প্রতি ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি ও বাণিজ্যমন্ত্রী জোনাথন রেনল্ডসকে এক যৌথ চিঠি পাঠিয়ে এ আহ্বান জানান।
চিঠিতে শুধু অস্ত্র রপ্তানি বন্ধের কথাই নয়, অস্ত্র রপ্তানির লাইসেন্স প্রদান প্রক্রিয়ায় আরও স্বচ্ছতা আনার আহ্বানও জানানো হয়েছে। স্বাক্ষরকারীদের ভাষ্যমতে, ব্রিটেন যদি এখনই ইসরায়েলে অস্ত্র রপ্তানি বন্ধ না করে, তবে ভবিষ্যতে গণহত্যায় সহযোগিতা করার অভিযোগে অভিযুক্ত হতে পারে।
চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন জারাহ সুলতানা, জন ম্যাকডোনেল, জেরেমি করবিনসহ বহু প্রভাবশালী এমপি ও লর্ড। সমন্বয়ক লেবার পার্টির এমপি স্টিভ উইদারডেন বলেন, “ইসরায়েলের যে যুদ্ধবিমানগুলো গাজায় বোমাবর্ষণে ব্যবহৃত হচ্ছে, সেগুলোর ১৫ শতাংশ যন্ত্রাংশ ব্রিটেনে তৈরি। ব্রিটিশ রপ্তানি লাইসেন্স ছাড়া সেগুলো চালানো সম্ভব নয়।”
এর আগে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ল্যামি হুঁশিয়ার করেছিলেন, গাজায় যুদ্ধবিরতি না এলে ইসরায়েলের ওপর আরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে। আইটিভির গুড মর্নিং ব্রিটেন অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “আমরা ইতিমধ্যে বেশ কিছু নিষেধাজ্ঞা জারি করেছি। যদি মানবিক দুর্দশা বন্ধ না হয়, তবে সব ধরনের বিকল্প বিবেচনায় রয়েছে।”
চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, ২০২৪ সালে ব্রিটেন থেকে ইসরায়েলের উদ্দেশে ১৪১.৬ মিলিয়ন পাউন্ড মূল্যের ‘স্ট্যান্ডার্ড ইন্ডিভিজুয়াল এক্সপোর্ট লাইসেন্স’ ইস্যু করা হয়, যার অধিকাংশ সরাসরি ইসরায়েলে ব্যবহারের জন্য অনুমোদিত বলেই মনে হয়। অথচ ব্রিটিশ ট্রেডমন্ত্রী ডগলাস আলেকজান্ডার দাবি করেন, এগুলোর অধিকাংশ তৃতীয় দেশের উদ্দেশে পুনঃরপ্তানির জন্য ইস্যু করা হয়েছে।
এ দ্বন্দ্বপূর্ণ তথ্যের ব্যাখ্যা চেয়েছেন এমপিরা। তারা জানতে চেয়েছেন—তৃতীয় দেশের প্রকল্পটি কী, তাতে কোন ন্যাটো মিত্র জড়িত, প্রকল্পটি কখন শুরু হয়েছে, এবং এর প্রকৃত উদ্দেশ্য কী।
উল্লেখ্য, ব্রিটেন ইতিমধ্যেই অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ফ্রান্সসহ ২৭টি দেশের সঙ্গে যৌথ বিবৃতি দিয়ে গাজায় ত্রাণ প্রবেশে বাধা দেওয়া এবং ফিলিস্তিনিদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় ইসরায়েলের তীব্র সমালোচনা করেছে।
এদিকে ব্রিটিশ হাইকোর্ট সম্প্রতি একটি মামলা খারিজ করে দিয়েছে, যেখানে মানবাধিকার সংগঠনগুলো এফ-৩৫ যুদ্ধবিমানের যন্ত্রাংশ ইসরায়েলে রপ্তানি বন্ধের দাবি জানিয়েছিল। আদালত জানিয়েছে, বিষয়টি আইনগত নয় বরং রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত—যা নির্বাহী বিভাগের এখতিয়ারভুক্ত।
লেবার এমপি স্টিভ উইদারডেন বলেন, “যেসব রাষ্ট্র বেসামরিক জনগণের ওপর নির্বিচারে হামলা চালায়, তাদের কাছে আমাদের তৈরি অস্ত্র রপ্তানি করা অত্যন্ত অনৈতিক। অন্তত জনগণের সামনে এই বিষয়ে আমাদের স্পষ্টতা থাকা উচিত।”
এই ঘটনার প্রেক্ষাপটে ব্রিটিশ সরকারের ওপর চাপ বাড়ছে যে, তারা যেন অবিলম্বে অস্ত্র রপ্তানি বন্ধ করে এবং ইসরায়েলের প্রতি তাদের নীতিগত অবস্থান স্পষ্ট করে।
লেখা: মিডল ইস্ট আই অবলম্বনে পুনর্লিখিত