ব্রহ্মপুত্র নদীর উৎসস্থল তিব্বতে বিশ্বের সবচেয়ে বড় জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছে চীন, আন্তর্জাতিক উদ্বেগকে উপেক্ষা করেই। শনিবার চীনের প্রধানমন্ত্রী লি ছিয়াং এই প্রকল্পের উদ্বোধন করেন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি।
চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম সিনহুয়ার তথ্য অনুযায়ী, ১.২ ট্রিলিয়ন ইউয়ান (প্রায় ১৬৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) ব্যয়ে নির্মিত এই প্রকল্পের আওতায় পাঁচটি পৃথক হাইড্রোপাওয়ার স্টেশন গড়ে তোলা হবে। দেশটির কার্বন নিরপেক্ষতা অর্জনের লক্ষ্যে এবং তিব্বতের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অংশ হিসেবে এটি পরিকল্পিত হয়েছে। উৎপাদিত বিদ্যুৎ তিব্বত ছাড়াও চীনের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা হবে।
বিশ্লেষকদের মতে, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে এটি ইয়াংসিকিয়াং নদীর থ্রি গর্জেস ড্যামকেও ছাড়িয়ে গিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে বড় বাঁধে পরিণত হতে পারে। তবে এর ফলে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে বসবাসকারী লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবিকা, পানির নিরাপত্তা এবং পরিবেশের ওপর গভীর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
চীনের এই পদক্ষেপে উদ্বেগ জানিয়েছে ভারত। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, “ব্রহ্মপুত্রের পানিপ্রবাহ ভাটির দিকে কী ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে, তা আমরা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি এবং আমাদের জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেওয়া হবে।” পাশাপাশি চীনের প্রতি ভাটির দেশগুলোর স্বার্থের প্রতি সংবেদনশীল থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে।
চীন অবশ্য আশ্বস্ত করেছে, প্রকল্পটি ভাটির কোনো দেশের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে না এবং প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত থাকবে।
তবে পরিবেশবিদরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, তিব্বতের মতো পরিবেশগতভাবে স্পর্শকাতর অঞ্চলে এ ধরনের মেগা প্রকল্প জলবায়ু পরিবর্তন এবং জীববৈচিত্র্যের ওপর দীর্ঘমেয়াদি ও অপূরণীয় ক্ষতির কারণ হতে পারে।
উল্লেখ্য, ভারত ও চীনের মধ্যে বহুদিন ধরে সীমান্ত বিরোধ চলমান। দুই দেশের মধ্যে একাধিকবার সামরিক উত্তেজনাও দেখা দিয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রহ্মপুত্রের উৎসে চীনের বিশাল বাঁধ নির্মাণ দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।