আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ইসরাইলের অবরোধ ও অব্যাহত হামলায় গাজাজুড়ে ভয়াবহ খাদ্য সংকট ও দুর্ভিক্ষ তৈরি হয়েছে। অপুষ্টি ও অনাহারে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে, যার মধ্যে দুই শিশু রয়েছে। ফলে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে অনাহারে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩১৩ জনে। এদের মধ্যে ১১৯ জনই শিশু।
বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট) আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, গাজায় দুর্ভিক্ষ এখন কেবল আশঙ্কা নয়, বাস্তবতা। জীবনরক্ষাকারী সহায়তা প্রবেশে বাধা এবং হামলা অব্যাহত থাকায় শিশুদের মৃত্যু বাড়ছে। জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা বিষয়ক উপপ্রধান জয়েস মুসুইয়া বলেন, উত্তর-মধ্য গাজা, বিশেষ করে গাজা সিটিতে দুর্ভিক্ষ নিশ্চিত হয়েছে। সেপ্টেম্বরের শেষ নাগাদ দক্ষিণের দেইর আল-বালাহ ও খান ইউনিসেও তা ছড়িয়ে পড়তে পারে।
তিনি জানান, বর্তমানে পাঁচ লাখেরও বেশি মানুষ অনাহার ও মৃত্যুর ঝুঁকিতে আছেন। সেপ্টেম্বরের শেষে এ সংখ্যা বেড়ে ৬ লাখ ৪০ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে। পাঁচ বছরের কম বয়সি অন্তত ১ লাখ ৩২ হাজার শিশু মারাত্মক অপুষ্টির ঝুঁকিতে রয়েছে। এর মধ্যে ৪৩ হাজার শিশু সরাসরি জীবন সংকটে পড়বে আগামী মাসগুলোতে।
মুসুইয়া বলেন, “এটি কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ নয়, সম্পূর্ণ মানবসৃষ্ট বিপর্যয়। সংঘাত ও অবরোধের কারণে গাজার মানুষ পরিকল্পিতভাবে ক্ষুধায় মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।”
অন্যদিকে, শিশু সুরক্ষা সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেন নিরাপত্তা পরিষদে জানায়, গাজার হাসপাতালগুলো কঙ্কালসার শিশুতে ভর্তি। অনেক শিশু এতটাই দুর্বল হয়ে পড়েছে যে তারা ব্যথায় কাঁদতেও পারছে না। সংস্থার প্রধান ইঙ্গার অ্যাশিং বলেন, “গাজার শিশুরা এখন কেবল খাবারের ছবি আঁকে। কেউ কেউ মৃত্যুর আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করছে। এক শিশু লিখেছে, ‘ইশ, আমি যদি আমার মায়ের কাছে স্বর্গে থাকতে পারতাম—সেখানে খাবার, পানি আর ভালোবাসা আছে।’”
অন্যদিকে ইসরাইল, জাতিসংঘ সমর্থিত দুর্ভিক্ষ পর্যবেক্ষণ সংস্থা আইপিসি-র প্রতিবেদন প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে। তবে নিরাপত্তা পরিষদের যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া বাকি ১৪ সদস্য দেশ ওই প্রতিবেদনকে সমর্থন জানিয়ে গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি ও দুর্ভিক্ষ নিরসনের আহ্বান জানিয়েছে।