নিউইয়র্ক টাইমসের বিশ্লেষণ
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে নিয়ে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের অবজ্ঞা সুপরিচিত। ক্রেমলিন তাঁকে অবৈধ নেতা মনে করে, আর রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম প্রায়ই তাঁকে বিদ্রূপ করে ‘ভাঁড়’ বলে।
তবুও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মনে করছেন, যুদ্ধ শেষ করতে হলে পুতিন ও জেলেনস্কিকে মুখোমুখি আলোচনায় বসতেই হবে। সম্প্রতি পুতিনের সঙ্গে ফোনালাপের পর ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন, তিনি ইতিমধ্যে এমন বৈঠকের উদ্যোগ নিয়েছেন।
এ ঘোষণার পর থেকেই মস্কোতে আলোচনার ঝড় উঠেছে—পুতিন ও জেলেনস্কি কি সত্যিই দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন?
মর্যাদার প্রশ্নে সংশয় : ক্রেমলিনের কাছে এ ধরনের বৈঠক একধরনের ছাড় বা আপস হিসেবে ধরা হবে। কারণ, এত দিন রাশিয়া জেলেনস্কির বৈধতা অস্বীকার করে এসেছে। তবুও রাশিয়ার সংসদের জ্যেষ্ঠ সদস্য কনস্তান্তিন জাতুলিন বলেছেন, পরিস্থিতি এতটাই গুরুতর যে জেলেনস্কির সঙ্গে আলোচনার সম্ভাবনাকে পুরোপুরি নাকচ করা উচিত নয়।
কিন্তু অনেক রুশ কর্মকর্তা মনে করেন, জেলেনস্কির সঙ্গে বসা মানে পুতিন তাঁকে সমমর্যাদার স্বীকৃতি দেওয়া—যা রাজনৈতিকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ।
ক্রেমলিনের শর্ত : বিশেষজ্ঞদের মতে, জেলেনস্কি রাশিয়ার প্রধান দাবিগুলো মেনে নিতে প্রস্তুত আছেন কিনা, তার নিশ্চয়তা ছাড়া পুতিন বৈঠকে বসবেন না। এসব দাবির মধ্যে রয়েছে—দখলকৃত ইউক্রেনীয় ভূখণ্ড রাশিয়ার দখলে রাখা এবং ভবিষ্যতে ইউক্রেনের সামরিক সক্ষমতা সীমিত করার শর্ত।
সেন্ট পিটার্সবার্গের বিশ্লেষক গ্রিগরি গোলোসভ বলেন, এখনই এমন বৈঠকের সম্ভাবনা নেই। কেবল তখনই পুতিন রাজি হতে পারেন, যদি তিনি নিশ্চিত হন যে বৈঠকের মাধ্যমে ইউক্রেনকে কার্যত আত্মসমর্পণে বাধ্য করা সম্ভব।
ট্রাম্পের চাপ : ট্রাম্প একাধিকবার বলেছেন, তিনি প্রথমে দুই নেতার মধ্যে সরাসরি বৈঠকের প্রস্তাব দিয়েছেন। তাঁর ধারণা, পুতিনকে আলোচনায় আনতে হলে এ ছাড়া বিকল্প নেই।
তবে রুশ কর্মকর্তাদের বক্তব্য এখনো অস্পষ্ট। পুতিনের উপদেষ্টা ইউরি উশাকভ ইঙ্গিত দিয়েছেন, উচ্চপদস্থ পর্যায়ে আলোচনা হতে পারে, তবে বিস্তারিত জানাননি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভও বলেছেন, নীতিগতভাবে ক্রেমলিন বৈঠকের বিরোধী নয়, তবে তা খুব সতর্কভাবে আয়োজন করতে হবে।
প্রচারণা ও বাস্তবতা : রাশিয়ার সরকারি টেলিভিশনে জেলেনস্কিকে নিয়ে উপহাস চলছেই। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষক মিখাইল বিনোগ্রাদভ মনে করেন, যদি পুতিন সত্যিই বৈঠক করতে চান, তখনই এ সব প্রচারণা মুহূর্তে থেমে যাবে। রুশ সমাজ এতদিনে নানা কিছু মেনে নিতে অভ্যস্ত হয়ে গেছে, তাই বৈঠকের ফলাফল গ্রহণ করতে তাদের আপত্তি থাকার কথা নয়।