আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রয়োজন হলে দ্বিতীয় দফার যুদ্ধে যেতে প্রস্তুত রয়েছে ইরান—এমন স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন দেশটির নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরাকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ইরান নিজস্ব সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তার প্রশ্নে কোনো ধরনের ছাড় দেবে না।
পেজেশকিয়ান বলেন, ‘যদি প্রয়োজন হয়, আমরা দখলদার ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যেকোনো রকম যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত আছি। যুদ্ধবিরতির কার্যকারিতা নিয়ে আমাদের মধ্যে তেমন আশাবাদ নেই।’
সাক্ষাৎকারে তিনি আরও জানান, আন্তর্জাতিক চাপ ও বিরোধিতা সত্ত্বেও ইরান তার ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি চালিয়ে যাবে। তবে তিনি জোর দিয়ে বলেন, এই কর্মসূচি সম্পূর্ণরূপে আন্তর্জাতিক আইনের কাঠামোর মধ্যে রয়েছে।
পরমাণু কর্মসূচি ও কূটনৈতিক দ্বন্দ্ব
ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে এক দশকের বেশি সময় ধরে পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে টানাপোড়েন চলছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন দীর্ঘদিন ধরে ইরানের ওপর নানা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে আসছে। তবে তেহরান দাবি করে, তাদের কর্মসূচি সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ ও জ্বালানিনির্ভর। পেজেশকিয়ানের ভাষায়, ‘আমরা আমাদের সার্বভৌম অধিকার ত্যাগ করব না, তবে আলোচনার পথও বন্ধ করে দিচ্ছি না।’
ইরান-ইসরায়েল সাম্প্রতিক সংঘর্ষ: প্রেক্ষাপট
গত ১৩ জুন ইসরায়েল ইরানের বেশ কয়েকটি পরমাণু ও বেসামরিক স্থাপনায় হামলা চালায়। পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় ইরানও ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। এরপর যুক্তরাষ্ট্রও ইসরায়েলের পক্ষ নিয়ে ইরানের স্থাপনায় হামলা চালায়। এর জবাবে ইরান মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন সামরিক ঘাঁটিগুলোতে পাল্টা হামলা করে।
চলমান সংঘাতের জেরে ১২ দিনের রক্তক্ষয়ী লড়াই শেষে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেন। তবে পরিস্থিতি এখনও উত্তপ্ত। ইরান ও ইসরায়েল—উভয় পক্ষেই ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে।
বিশ্লেষকদের দৃষ্টিভঙ্গি
বিশ্লেষকরা বলছেন, পেজেশকিয়ানের বক্তব্য দ্বিমুখী বার্তা বহন করছে। একদিকে তিনি সামরিক প্রস্তুতির কথা বললেও অন্যদিকে কূটনৈতিক সমাধানের পথও উন্মুক্ত রেখেছেন। এতে বোঝা যায়, ইরান পরমাণু চুক্তি পুনরুজ্জীবনের জন্য প্রস্তুত, তবে কোনো চাপ বা হুমকিতে নতি স্বীকার করতে রাজি নয়।
আগামী দিনগুলোতে ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মহলের মধ্যস্থতায় পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটবে, না কি আরও সংকট সৃষ্টি হবে—তা নির্ভর করবে কূটনৈতিক প্রয়াস ও উভয় পক্ষের অবস্থানের ওপর।